Thank you for trying Sticky AMP!!

আশা জাগাচ্ছে দেশি গরু

ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। গতকাল পোস্তগোলা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদী থেকে। ছবি: আবদুস সালাম

পবিত্র ঈদুল আজহার আর সাত দিন বাকি। এরই মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশের হাটে গরু বেচাকেনার প্রস্তুতি চলছে। তিন বছর ধরে সীমান্ত দিয়ে গরু আসা কমে যাওয়ায় দেশি গরুর সরবরাহ ও বিক্রি দুই-ই বেড়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে গবাদিপশুর খামারের সংখ্যা। ছোট ও মাঝারি খামার স্থাপনে শিক্ষিত তরুণ ও প্রবাসীরা এগিয়ে আসছেন। অনলাইনেও কোরবানির পশু কেনাবেচা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

দেশের প্রধান ছয়টি স্থলসীমান্ত বন্দর সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর ধরে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। গতবারের তুলনায় এ বছর প্রতিবেশী এই দুই দেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার গরু-মহিষ কম এসেছে। ১২ আগস্ট পর্যন্ত ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ এসেছে প্রায় দেড় লাখ। দেশে চাহিদা কমে যাওয়ায় ও সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে গরু আসার পরিমাণ কমছে। যশোর ও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ছিল একসময় ভারতীয় গরু আসার সবচেয়ে বড় স্থান। এ বছর ওই দুই স্থলসীমান্ত দিয়ে গরু এসেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশি গরুতেই এ বছর ঈদুল আজহার চাহিদা মিটবে। এ বছর কোরবানির জন্য দেশে মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৯ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া রয়েছে। এর মধ্যে খামারে হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ ১০ হাজার। গত বছর তা ছিল ২৭ লাখ।

দেশি গরুর চাহিদা বাড়ার বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল। তিনি

প্রথম আলোকে বলেন, দেশের তরুণ ও প্রবাসীরা গবাদিপশুর খামারে উৎসাহী হচ্ছেন—এটা দেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। তবে দেশকে গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে ধারাবাহিকভাবে গরু আমদানি বন্ধ করতে হবে। গবাদিপশুর খামার স্থাপনে সরকারি সহায়তাসহ কৃষিঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মনে করেন, এখনই ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, আমদানি বন্ধ হলে হঠাৎ করে গরুর দাম বেড়ে যেতে পারে। গরুর খামার গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগের কারণে ইতিমধ্যে দেশ গরু-ছাগলে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে।

অবশ্য গরু-মহিষ আমদানি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মনে করে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলছে, গত দুই বছরে গরুর খাবারের দাম ২০ শতাংশ বাড়লেও গরুর দাম বাড়েনি। ফলে গবাদিপশু লালন-পালনে লাভ কমে আসছে।

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, গত বছর কোরবানির ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কগুলোতে খানাখন্দ ও বৃষ্টির কারণে অনেক গরু সময়মতো রাজধানীর হাটগুলোতে আসতে পারেনি। এ কারণে ঈদের এক দিন আগে গরুর সংকট দেখা দেয়, দামও বেড়ে যায়। অন্যদিকে অনেক গরুভর্তি ট্রাক যানজটে পড়ে শেষ পর্যন্ত রাজধানীতে পৌঁছাতে পারেনি। এ বছর যাতে গরুর ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাজধানীসহ দেশের বড় হাটগুলোতে দ্রুত পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত তিন বছরে দেশে ১৫ হাজার নতুন খামার গড়ে উঠেছে। অনলাইন ও খামার থেকে অনেকে গরু বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। আশা করি, এবার কোরবানির ঈদে গরুর কোনো সংকট হবে না। দেশি গরু দিয়েই আমরা এবার দেশের চাহিদা মেটাতে পারব।’

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ; অফিস, যশোর; প্রতিনিধি, টেকনাফ ও পাটগ্রাম এবং সংবাদদাতা, পঞ্চগড়)