Thank you for trying Sticky AMP!!

ইইউর পর্যবেক্ষক না পাঠানো নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে

আসন্ন নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক পরিসরে আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত তারা বাংলাদেশকে জানিয়ে দেয়। সরকারিভাবে এই সিদ্ধান্তের কোনো কারণ জানানো না হলেও কমিশনের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মঘেরিনির এক নীতিনির্ধারণী বক্তৃতায় তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। গত ১১ অক্টোবর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ভবিষ্যৎ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফেডেরিকা মঘেরিনি বলেন, কোনো পাতানো নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া তাঁদের কাজ নয়।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অবাধে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। ২৮টি দেশের জোট ইইউর সিদ্ধান্তের কারণে বিরোধীদের এই দাবির আর কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কম্বোডিয়ায় বিরোধী দলকে বেআইনি ঘোষণা করে যে বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তা অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটিকে দেওয়া শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা (জিএসপি) প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

ফেডেরিকা মঘেরিনি অক্টোবরের ওই বক্তৃতায় বলেন, তাঁরা যখন কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনে নিয়োজিত হন, তখন তাঁদের বিবেচ্য থাকে মানবাধিকার নিশ্চিত করা, গণতন্ত্রকে সহায়তা দেওয়া। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য স্থানীয়, জাতীয় বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো পক্ষ নেওয়া বা মতপ্রকাশ করা নয়। আমরা একটিমাত্র লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করি: স্থানীয় জনগণ, নাগরিকেরা যাতে সত্যিকারভাবে তাঁদের মতপ্রকাশ করতে পারেন এবং তাঁদের দেশের ভবিষ্যৎ তাঁদের নিজেদের হাতে থাকে।’

ওই বক্তৃতায় ফেডেরিকা মঘেরিনি বলেন, ‘কোনো অপ্রিয় সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আমরা পর্যবেক্ষক দল পাঠাই না। আমাদের শরিকেরা যদি গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় আমাদের সাহায্য চায়, তাহলে আমরা তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি। তবে কোনো পাতানো বা জালিয়াতির (রিগড) নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আমরা উপযুক্ত নই।’ তিনি এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় বলেন যে, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল পাঠানোর জন্য প্রায়ই আমাদের কাছে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয়। সে জন্যই এতটা খোলামেলাভাবে বিষয়টি বলে দেওয়া ভালো বলে আমি মনে করি যে কেন আমরা পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই, আর কেন নিই না।’

ফেডেরিকা মঘেরিনি বলেন, নির্বাচনের দিন একটি হিমশৈলের অগ্রভাগমাত্র। গণতন্ত্র ব্যালটবাক্সের বাইরে নিত্যদিনের চর্চার বিষয়। এটি সব ভোটারের সম–অধিকার এবং সব দলের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমসুযোগের বিষয়। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের বৈচিত্র্যের বিষয়। এটি প্রাণবন্ত নাগরিক সংগঠন এবং নাগরিকদের দেশটির রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের বিষয়। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকেরা তাঁদের উপস্থিতি এবং কাজের মাধ্যমে ইতিবাচক এসব ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে থাকেন।

ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় কমিশনের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক অবশ্য গত ৩১ অক্টোবর ডয়চে ভেলে রেডিওর বাংলা বিভাগকে বলেছেন, ‘একটি কার্যকর নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানো বড় একটি কাজ। এতে অনেক সদস্য থাকেন এবং এর প্রস্তুতি নিতে মাসের পর মাস সময় লাগে। এটা অনেক ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এটা এবার বাংলাদেশের জন্য আমাদের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি।’

২০০৮ সালে ইইউর প্রায় ৮০০ সদস্যের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। তবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুধু নির্বাচনের দিনই নয়, নির্বাচনের আগে ও পরে বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণাধীন দেশে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। পাশাপাশি, তারা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আলাদা করে ছোট আকারের বিশেষজ্ঞ দলও পাঠিয়ে থাকে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর পর্যবেক্ষক দল পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। তবে বিশেষজ্ঞ দলের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় না এবং তা তারা শুধু কমিশনের কাছে পেশ করে থাকে। বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক না পাঠালেও দুই সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাবে বলে জানিয়েছে।