ইউএনও-এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সাংসদ নিক্সনের
ফরিদপুরের ভাঙ্গা বাজারে ৮৪ জনকে দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে ইউএনও ও এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় সাংসদ মুজিবর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরী। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে ওই বরাদ্দ বাতিল করে প্রকাশ্যে লটারি করে নতুন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংসদ। না হলে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের লোকদের এনে ভাঙ্গায় হরতাল ও বিশ্বরোড অবরোধের হুমকি দেন তিনি।
মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় সাপ্তাহিক ভাঙ্গার কণ্ঠ-এর ১১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ নিক্সন চৌধুরী। ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন।
সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। পরে রাজস্ব পাওয়ার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সবার আবেদন নেওয়া হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ আবেদন বাদ দিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মতিতে নীতিমালা ও বিধিমালা মেনে একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।মুহাম্মদ আল আমিন, ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি)
গত ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের সময় সাংসদ নিক্সন চৌধুরী উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আপত্তিকর ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। এরপর নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচন কমিশন। তদন্তের পর ৬ ডিসেম্বর চরভদ্রাসনের সেই নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ওই উপজেলাগুলোর প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিকদের বিরোধ আরও প্রকাশ্য হয়ে ওঠে।
ভাঙ্গার ইউএনও-এসি ল্যান্ডের অপসারণের দাবিতে গত সোমবার সেখানে বিক্ষোভ হয়। এরপর মঙ্গলবার ভাঙ্গা বাজার এলাকার টিনপট্টিতে মঞ্চ করে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংসদ নিক্সন চৌধুরী বলেন, যে জমির জন্য ৪ হাজার দরখাস্ত জমা পড়েছে, তাঁদের মধ্য থেকে ৮৪ জনকে রাতের অন্ধকারে অনিয়ম করে বরাদ্দ দিয়েছে প্রশাসন। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে ওই বরাদ্দ বাতিলের দাবি করেন তিনি।
ভাঙ্গার ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে ইঙ্গিত করে সাংসদ বলেন, ‘দুটি মানুষ ডাকাতি করতে ভাঙ্গায় এসেছেন। আমি জীবিত থাকতে তাদের কোন অন্যায় করতে দেব না। এদের দুই চারজন দালাল আমার দলেও আছে। তাদেরও শিক্ষা দেওয়া হবে।’
সাংসদ বলেন, ‘সরকারি চোর আর তাদের দালালদের বিচার করা হবে। ভদ্রলোকের মতো থাকি বলে ভাববেন না আমি দুর্বল। কাপড়চোপড় নিয়ে পালাতে পারবেন না সরকারি দালালরা।’
যে জমির জন্য ৪ হাজার দরখাস্ত জমা পড়েছে, তাঁদের মধ্য থেকে ৮৪ জনকে রাতের অন্ধকারে অনিয়ম করে বরাদ্দ দিয়েছে প্রশাসন।নিক্সন চৌধুরী, ফরিদপুর–৪ আসনের সাংসদ
সাংসদের বক্তব্যের বিষয়ে ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। পরে রাজস্ব পাওয়ার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সবার আবেদন নেওয়া হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ আবেদন বাদ দিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মতিতে নীতিমালা ও বিধিমালা মেনে একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ভাঙ্গা বাজারের ৬২ শতাংশ খাস জমি থেকে গত ১০ ডিসেম্বর ১০ জন অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়। পরে গত ২৩ ডিসেম্বর ৮৪ জন ব্যক্তির মধ্যে একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। জমি বরাদ্দপ্রাপ্তরা গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে দোকান ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করলে বরাদ্দ না পাওয়া ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে দোকানগুলি নির্মানের কাজ বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। এর পর থেকে ভাঙ্গায় সরকারি ওই জমির বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষাপটে পক্ষে ও বিপক্ষে একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।