Thank you for trying Sticky AMP!!

ইশতেহারে নারীদের জন্য 'ভালো ভালো কথা'

ফাইল ছবি

নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারে চমক আনার চেষ্টা করে। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইশতেহারে নারী উন্নয়নে নারী জনগোষ্ঠীর জন্যও চমক রাখতে চেষ্টা করে দলগুলো।

এবার নির্বাচনে মোট ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন ভোটারের মধ্যে নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। এবার সরাসরি নির্বাচনে ৩৯টি দল থেকে ৬৯ জন নারী অংশ নিচ্ছেন। দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী।
তবে নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, ইশতেহারে অঙ্গীকার করলেও ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় আসার পর তা বাস্তবায়নে আর ততটা নজর দেয় না।

আওয়ামী লীগ: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকারে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতার কথা বলেছে। তবে দলটির পক্ষ থেকে ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব বিষয়ে অঙ্গীকার করা হয়েছিল অনেক ক্ষেত্রেই এবার আর তার ধারাবাহিকতা রাখা হয়নি। দলটি ২০০৮ সালে নারীর ক্ষমতায়ন ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে নারীর সমান অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য ১৯৯৭ সালের জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি পুনর্বহাল ও কার্যকর করার কথা বলেছিল। দলটি ক্ষমতায় গিয়ে ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতি করলেও ১৯৯৭ সালের নীতিতে উল্লেখ করা উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সম অধিকারসহ অনেক বিষয় থেকেই সড়ে আসে। ২০০৮ সালের ইশতেহারে বৈষম্যমূলক আইনসমূহের সংস্কার, সংসদে প্রত্যক্ষ ভোটে নারীর জন্য ১০০ আসন সংরক্ষিত করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছিল। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অঙ্গীকার করে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ইশতেহারে উল্লেখ করে, নারী আসনের সংখ্যা ৫টি বাড়িয়ে ৫০ এ উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশে নারী-পুরুষের সংখ্যানুপাতকে পৃথিবীতে বিরল হিসেবে উল্লেখ করে দলটি। ইশতেহারের অঙ্গীকারে উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা বাড়ানো, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ, কর্মক্ষেত্রে কর্মের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নারীকে গৃহ বন্দী করে রাখার জন্য ধর্মের অপব্যাখ্যা এবং নারী-বিদ্বেষী অপপ্রচার বন্ধের কথা বলে দলটি। নারী শ্রমিক, নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বলে।

গত ২০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি যা আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৮ মার্চ নারী দিবসেও এ নিয়ে ঘোষণা দেন। কিন্তু এটি করার জন্য যে প্রস্তুতি তা নেওয়া হয়নি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল এই বিষয়ে সংশোধনী আনার জন্য। অথচ এ বিষয়ে কিছুই করা হয়নি। সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদদের কোনো নির্বাচনী এলাকা নাই। কারণ তাঁরা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেন। জাতীয় সংসদের স্পিকারও নিজস্ব এলাকায় নির্বাচন করতে পারছেন না, তাঁকে রংপুরে নির্বাচন করতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ এবার ইশতেহারে সংরক্ষিত নারী আসন নিয়ে কিছু বলেনি বা এড়িয়ে গেছে। ধর্মীয় অপব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়েও কিছু বলেনি। দলটি ২০২০ সাল নাগাদ উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষায় নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীর অনুপাত বর্তমানের ৭০ থেকে ১০০ শতাংশে বৃদ্ধি করার কথা বলেছে। প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে নারীর অধিক সংখ্যায় নিয়োগ নীতি বৃদ্ধি করা, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ব্যাংকিং সুবিধা, ঋণ সুবিধা, কারিগরি সুবিধা ও সুপারিশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও বলেছে। নারীদের পুরুষের সমান মজুরির নিশ্চয়তা, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলা, ক্ষুদ্র ঋণে নারীদের অগ্রাধিকার অব্যাহত রাখার কথা বলেছে। নারী শ্রমিকদের চার মাসের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে। শিশুদের জন্য অঙ্গীকারে কন্যা শিশুদের প্রতি বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

দশম নির্বাচনে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টি ১৮ দফা ইশতেহারে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে দেশের প্রশাসনিক, সরকার পরিচালনা ও নির্বাচনের পদ্ধতিই বদলে দেওয়ার কথা বলেছে। তবে দলটির ইশতেহারে নারীদের জন্য তেমন কোনো চমক রাখা হয়নি। দলটি নারীদের জাতীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে নারী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছে। ইশতেহারে দলটি বলেছে, বর্তমানে নারী অধিকারের কথা বলা হলেও নারীরা অধিকার থেকে বঞ্চিত।

বিএনপি: ইশতেহারে বিএনপি এবার যুব, নারী ও শিশুদের এক শিরোনামে রেখে কিছু অঙ্গীকার করেছে। এতে বলা হয়েছে, নারীদের ‘ন্যায়সংগত’ সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রদান করা হবে। এই লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিদ্যমান আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। তবে ‘ন্যায়সংগত’ শব্দটির কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি ইশতেহারে। দলটি ক্রীড়া ক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা করা, নারী নির্যাতন, যৌতুক প্রথা, অ্যাসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, নারী ও শিশু পাচার রোধে কঠোর কার্যকর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে। অধিক সংখ্যক দিবা যত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ,নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নে প্রয়োজনীয় সমর্থন, স্বল্প-সুদে ব্যাংক ঋণ এবং কর-ছাড় দেওয়ার কথা বলেছে। এর বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্বল্প সুদের শিক্ষা ঋণ, তরুণ দম্পতি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ বছর মেয়াদি ঋণ চালুসহ কিছু উদ্যোগের কথা বলেছে দলটি যা থেকে নারীরাও বিভিন্ন সুবিধা পাবেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট: এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৩৫ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সের ক্ষেত্রে বিশেষ ধারা রেখে সমালোচনার সম্মুখীন হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবার ইশতেহারে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা ছাড়াই মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর করার কথা বলেছে। সংরক্ষিত নারী আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার কথা বলার পাশাপাশি এ আসনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে বলে উল্লেখ করেছে। এ ছাড়াও আগামী দুই নির্বাচনের পর সংরক্ষিত আসন প্রত্যাহার করে সংসদে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নারীর সংখ্যা ন্যূনতম ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে যৌন হয়রানি ‘জিরো টলারেন্স’ এ নামিয়ে আনা এবং যৌতুক প্রথা পুরোপুরি বন্ধের অঙ্গীকার করেছে । সরকারি চাকরিতে যোগ্য নারীকে উপযুক্ত পদে পদায়ন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের বৈষম্য দূর করা, নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলেছে দলটি। গৃহকর্মী এবং দুস্থ নারীদের কথাও চিন্তা করেছে ঐক্যফ্রন্ট।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬ দফা ইশতেহার প্রকাশ করেছে। ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্য দূর করা, সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানো ও প্রত্যক্ষ নির্বাচন চালুর কথা বলেছে দলটি।