Thank you for trying Sticky AMP!!

ইসিকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের যত পরামর্শ

নির্বাচন ভবন মিলনায়তনে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর যেন রাজনৈতিক দলগুলো আস্থা রাখতে পারে এবং কমিশন তার নিজস্ব শক্তি ও জনবলের সঠিক ব্যবহার করতে পারে—এসব বিষয়সহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা। সংলাপ শেষে তাঁরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ইসিকে দেওয়া তাঁদের পরামর্শ ও সুপারিশ গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন।

আজ বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন মিলনায়তনে সকাল সোয়া ১০টার দিকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে বসেন ইসি কমিশনারেরা। পরে দুপুরে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়ে আমরা মতামত দিয়েছি।’ তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে তিনি কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন। মানুষ যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কালো টাকার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এ জন্য নির্বাচনী ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করার দরকার হলে সেটা করতে হবে। নির্বাচনে সন্ত্রাসী ও মাস্তান নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও তিনি কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন।

জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনী বিভিন্ন দুর্যোগে কাজ করে থাকে। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হলে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার বাহিনী ‘সাইড লাইনে’ চলে যাবে। দেশি-বিদেশি নাম সর্বস্ব পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়েও কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এসব পর্যবেক্ষণ সংস্থা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘নির্বাচন একটা রাজনৈতিক উৎসব। সব দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে।’ তাঁর মতে, সার্বিকভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মাঠে থাকতে পারে, কিন্তু নিয়মিতভাবে তাদের মাঠে না নামালেও সমস্যা হবে না।

সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর বিশেষ জোর দিয়ে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেছেন, ‘এ নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে রয়েছে। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ইসির স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। এমন আচরণ করতে হবে যাতে জনগণের আস্থা তৈরি হয়। আস্থা অর্জনে প্রয়োজনে ইসিকে কঠোর হতে হবে।’

সংলাপ শেষে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, নির্বাচনের সময় এক ধরনের দ্বৈত কর্তৃত্ব থাকবে। সে ক্ষেত্রে ইসির কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর বলেন, এখন থেকে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ইভিএম নিয়ে সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল যাতে নিবন্ধন না পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াত যাতে অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো ফরম্যাটে ভোট করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনি উদ্যোগ নিতে হবে।’

এ ছাড়া ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিস সৈকত বলেন, ‘বিদ্যমান সীমানাতেই ভোট করার পরামর্শ দিয়েছি। জনসংখ্যার ভিত্তিতেই সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারির প্রতিবেদন হওয়ায় নতুন করে আর সীমানা পুনর্নির্ধারণের দরকার নেই।’ তিনি বলেন, নতুন প্রশাসনিক এলাকা ও বিলুপ্ত ছিটমহল যোগ করে সংসদীয় আসনের গেজেট করা উচিত। নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দিতে হবে।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ বলেন, সংলাপে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই ধরনের নির্বাচন যেন ভবিষ্যতে না হয়, সে জন্য কমিশনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো এবং প্রয়োজনে নির্বাচনের আগের তিন বছরে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেননি এমন কর্মকর্তাদের পদায়নের পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের প্রধান দুই দল-আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ বের করতে হবে। দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে কেবল গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

ইসির সংলাপে আরও যাঁরা বিভিন্ন পরামর্শ ও সুপারিশ করেছেন—প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, কালের কণ্ঠ নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমাদের অর্থনীতি সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব ওমর ফারুক, সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মর্তুজা, কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহবুব কামাল, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ, সাংবাদিক কাজী সিরাজ, সাংবাদিক আনিস আলমগীর প্রমুখ।

আরও পড়ুন:
ইসির পূর্ণশক্তির প্রয়োগ চান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা