Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদেও কর্মব্যস্ত থাকবেন তাঁরা

রাইনা মাসনুন, নাঈমা সিফাত, জিয়াউর রহমান, ইসমত তারা

ঈদের ছুটিতেও দায়িত্ব পালন করবেন করোনা–যোদ্ধারা। ঝুঁকি নিয়েও চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী, পরিচ্ছন্নতা–কর্মী, নিরাপত্তাকর্মীসহ বেশ কিছু পেশার মানুষ কর্মব্যস্ত থাকবেন। করোনার এই দুঃসময়ে পরিবার থেকে দূরে থাকা এসব পেশার সদস্যরা শুধু জীবিকার তাগিদে নয়, মানুষকে ভালোবেসেই সেবা দেবেন।

গত মার্চ মাস থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। করোনার কারণে সরকারি কর্মচারীদের অনেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারেননি। রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদও পরিবার থেকে দূরেই কাটাতে হবে। অবশ্য এ নিয়ে হতাশা বা ক্ষোভ নেই, বরং করোনার বিরুদ্ধে জিততে পারলে ভবিষ্যতে অনেক ঈদ পরিবারের সঙ্গে করতে পারবেন, এটাই তাঁদের প্রত্যাশা।

করোনা রোগীদের চিকিৎসা এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার দায়িত্বে রয়েছেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট রাইনা মাসনুন। প্রায় চার মাস ধরে এই দায়িত্ব পালন করা রাইনার বাবা ও মা থাকেন ঢাকায়। গত ঈদ কেটেছে করোনা রোগীদের সঙ্গে। এবারের ঈদও কাটাবেন আইসোলেশন ইউনিটে থেকে চিকিৎসা নেওয়া কয়েকজন করোনা রোগীর সঙ্গে।

রাইনা মাসনুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রত্যেকের জীবনাচরণে বড় পরিবর্তন এনেছে। একসময় হয়তো করোনা বিদায় নেবে, তবে শিগগিরই আগের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব না। ঈদে বাড়ি যেতে না পারা এবং করোনা রোগীদের সঙ্গে থাকাটা এখন আমার কাছে নিউ নরমাল।’

দ্বিতীয়বার কোভিড-১৯ জয় করেছেন টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা নাঈমা সিফাত। রোজার ঈদের মতো এবারের ঈদেও তিনি রোগীদের সেবা দেবেন। তাঁর স্বামী মোহাম্মদ লোকমান ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁদের ১৫ মাস বয়সী একটি মেয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘এ পেশায় যখন এসেছি, তখন থেকে মনস্থির করে ফেলেছি, নিজের স্বার্থের চেয়ে মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দেব।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মী মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার সদস্য ঈদের ছুটিতেও কাজ করবেন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক কে এম মামুন মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ঈদের সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটি ছিল না। এবার করোনার কারণে দুটি ঈদেই ছুটি নেই।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলামের বাড়ি মানিকগঞ্জে। সবশেষ ছুটিতে বাড়ি গেছেন গত অক্টোবরে। বাড়িতে মা-বাবা, দুই ছোট বোন আছেন। করোনার কারণে গত ঈদও কর্মস্থলেই কাটিয়েছেন।

রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবার আশায় থাকে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাব। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে বাড়ি লকডাউন করা, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর মতো কাজ যুক্ত হয়েছে। কবে আবার বাড়ি যাওয়ার মতো সময় বা ছুটি পাব, জানি না।’

রমজানের ঈদের আগে ও পরে নিয়মিত বরিশাল নৌবন্দরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্ব ছিল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমানের কাঁধে। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের আসা-যাওয়ার দৃশ্য তাঁর মন ভারাক্রান্ত করত। ভেবেছিলেন কোরবানির ঈদটা হয়তো প্রিয়জনদের সঙ্গে উদ্যাপন করবেন। কিন্তু হলো না।

পুলিশ সার্জেন্ট ইসমত তারার বাবা ও শ্বশুরবাড়ি দুটোই দিনাজপুরে। বাড়িতে মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-বোন থাকলেও ঈদ করতে বাড়ি যেতে পারছেন না। ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনে কর্মরত এই নারী সার্জেন্ট ঈদের দিনেও দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বললেন, ‘বড় ভাই-ভাবি, দেবররাও ঢাকাতেই থাকেন। ছুটিতে তাঁরা বাড়ি যাচ্ছেন। পুলিশের চাকরি করায় আমি ছুটি পাইনি।’

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মা-বাবা, বোন থাকলেও বাড়ি যেতে পারছেন না চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) আশিকুর রহমান। তিনি বললেন, ‘রোজার ঈদেও বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আমরা কাজ করায় অন্যরা পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ করতে পারছে, এতেই আমাদের আনন্দ।’

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। ঈদের ছুটিতেও চার পালায় এই ব্যাটালিয়নের ১ হাজার ১৫০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারায় আনন্দ আছে, তবে দেশের জন্য কাজ করার আনন্দও অনেক।

একটি টিভি চ্যানেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট নিউজরুম এডিটর শেখ রিয়াদুল ইসলামের বাড়ি বরিশাল। গত ঈদে বাড়ি যাননি করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায়। এবার অফিস থেকে ছুটি মেলেনি। রিয়াদুল বলেন, ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিকসহ কিছু পেশা অন্য পেশার মতো না।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণে ১৮ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে থাকবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের সময় কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা কাজ করবেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। করোনার মধ্যে কাজ করলেও তাঁরা কোনো ধরনের প্রণোদনা বা ঝুঁকিভাতা পান না।

মিরপুর ১ নম্বরের একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল ইসলাম। একটি বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন। শহিদুলের স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। আর তিনি থাকেন মিরপুর ১ নম্বরের একটি মেসে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ি থেকে ফোন করে বলে, একটা ঈদেও গেলাম না। কিন্তু কী করার আছে। এমন চাকরি করি, ঈদে ছুটি পাওয়া মুশকিল।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]