Thank you for trying Sticky AMP!!

ঈদের জুতার নকশায় জীবনের উদ্‌যাপন

ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর জুতার দোকানে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। বুধবার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি দোকানে

সাজপোশাক পূর্ণ করে তুলতে চাই জুতসই জুতা। জুতা যেন ফ্যাশনের অনিবার্য অনুষঙ্গ। তাই ঈদের মতো বড় উৎসবে জুতার চাহিদা পোশাকের মতোই।

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ঈদুল ফিতরের কেনাকাটা ছিল সীমিত। মূলত অনলাইনভিত্তিক। এবার বাজার জমজমাট, কেনাকাটা ফিরেছে আগের রূপে। উৎসবের ছাপ পোশাকের নকশায় এবং পাদুকাতেও। ছেলে ও মেয়েদের জুতা-স্যান্ডেল কিংবা লোফার, কেডস, রানিং শুতে দেখা যাচ্ছে বর্ণিল নকশা।

জুতার নকশায় দেশের বড় ব্র্যান্ডগুলো আন্তর্জাতিক ধারা অনুসরণ করে। বিশ্ব মহামারি অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে, তাই নকশায় এবার প্রাধান্য পেয়েছে মানুষের মুক্তি। দেশে জুতার শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের পণ্য উন্নয়ন বিভাগের (ইউনিট-২) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মুস্তাফা শাহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মহামারির সময়ে সারা পৃথিবীর মানুষই একধরনের বন্দী জীবনযাপন করেছেন। আবার ধীরে ধীরে মুক্ত, স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন সবাই। তাই এই মৌসুমের জন্য আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের যে পূর্বাভাস তাতে স্বাধীনতার বিষয়টি নকশায় থাকছে বলে জানানো হয়েছে।

এবারের ঈদে সব ধরনের জুতাই ক্রেতারা কিনছেন। ঈদে ৬০০টির বেশি নকশার জুতা বাজারে এনেছে বাটা। এসব নকশায় উৎসবের আমেজ রাখা হয়েছে।
নুসরাত জাহান, প্রতিষ্ঠানটির বিপণনপ্রধান
জুতা পছন্দ করছেন এক ক্রেতা। গত বুধবার রাজধানীর একটি দোকানে

আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের ধারা ও রঙের তালিকা (কালার চার্ট) অনুসরণ করেই অ্যাপেক্সের জুতার নকশা করা হয়। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সারা দেশের বিক্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে গ্রাহকের পছন্দ সংগ্রহ করে জুতার নকশা করা হয়। এবার ঈদের বাজারের জন্যও সেই ধারা অনুসরণ করা হয়েছে বলে জানান মুস্তাফা শাহীদুল ইসলাম।

বাজার ঘুরে দেখা গেল অ্যাপেক্স, বাটা, বে, ওরিয়ন, লোটো, লেদারেক্সসহ বিভিন্ন জুতার ব্র্যান্ডের কমবেশি নতুন নকশার জুতা, স্যান্ডেল, কেডস এসেছে ঈদ উপলক্ষে। মেয়েদের জুতা ও স্যান্ডেলের নকশায় প্রাধান্য গোলাপিসহ নানান হালকা রঙের। স্যান্ডেল সাজানো হয়েছে পাথর, চুমকি ইত্যাদি দিয়ে। চকচকে ভাবটাই বেশি। আবার ছেলেদের জুতা-স্যান্ডেলে কালো, বাদামি রঙের ব্যবহার বেশি। খেলাধুলা, হাঁটাহাঁটি বা দৌড়ের উপযোগী কেডস, লোফার, রানিং শুয়ে দেখা যাচ্ছে নানা রং। কখনো কমলা, কখনো কলাপাতা, কখনো হলুদের মতো উজ্জ্বল রংও দেখা যাচ্ছে। এসব জুতার চাহিদা বেশি তরুণ প্রজন্মের কাছে।

স্টাইল, আরাম এবং গ্রাহকদের চাহিদা বুঝে ঈদের সংগ্রহ এনেছে বাটা বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির বিপণনপ্রধান নুসরাত জাহান প্রথম আলোকে জানান, এবারের ঈদে সব ধরনের জুতাই ক্রেতারা কিনছেন। ঈদে ৬০০টির বেশি নকশার জুতা বাজারে এনেছে বাটা। এসব নকশায় উৎসবের আমেজ রাখা হয়েছে।

রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা ও পেশায় শিক্ষক মঞ্জুরী মোর্শেদা পছন্দ করেন অল্প উঁচু হিল, সামনে-পেছনে সমন্বয় আছে এমন জুতা। তাঁর কিশোরী মেয়ে কিনেছে কালো আর বাদামি রঙের দুই জোড়া স্যান্ডেল। সেগুলো ছিমছাম নকশার। জুতার খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলোর নকশায়ও এই ছিমছাম বিষয়টি রাখা হয়েছে। মেয়েদের জুতা-স্যান্ডেলে কম কাজ যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি আছে জমকালো কাজও। ফুল, গাছ, লতাপাতাসহ প্রকৃতির অনেক উপাদানই উঠে এসেছে নকশায়। ছেলেদের জুতা-স্যান্ডেলে জ্যামিতিক ধারার নকশা বেশি।

আগে ঋতু বা মৌসুমভিত্তিক জুতার চাহিদা ছিল। এখন আর সে ধারা নেই। সব ধরনের জুতাই বছরের যেকোনো সময়ে চলে। এ তথ্য দিলেন বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোড ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও একাধিক জুতার দোকানের স্বত্বাধিকারী কাজী কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোয় আমদানি করা জুতা বেশি বিক্রি হয়। গুলিস্তানের পাইকারি বাজারেও এই ধারা।

এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেল, মেয়েদের হিল, কারচুপির কাজ করা স্যান্ডেল, হাফ শু বেশি চলছে। আবার কম বয়সী মেয়েরা বুট ও ফিতাযুক্ত বুট কিনছে বেশি। ছেলেদের জুতার ক্ষেত্রে কেডসের চাহিদা বেশি।

বড়দের চাই বা না চাই, শিশুদের নতুন পোশাকের সঙ্গে জুতা ঈদের সময় কিনতেই হবে। আর বাজারের নানা রঙের, নানা ঢঙের জুতা আছে তাদের জন্য। বর্ণিল জুতার পাশাপাশি এলইডি আলোসহ, কার্টুনের নকশা করা শিশুদের জুতা এবারের ঈদেও বেশি বিক্রি হচ্ছে।

দুই বছর পর দেশের মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করছে। ঈদের বাজারে বাজারে দোকানে দোকানে জুতার রং ও নকশায় যেন সেই উদ্‌যাপনেরই প্রতিচ্ছবি।