Thank you for trying Sticky AMP!!

উদ্ধারকারীকে উদ্ধার করবে কে

রুস্তম ও হামজার আয়ুষ্কাল শেষ। নির্ভীক ও প্রত্যয়ের হালনাগাদ ফিটনেস সনদ নেই।

দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে বেড়েছে বড় আকারের যাত্রীবাহী নৌযানের সংখ্যা। জাহাজ নির্মাণশিল্পের বিকাশের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় পণ্যবাহী (কার্গো) জাহাজের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু চাহিদার হিসাবে বাড়ানো হয়নি উদ্ধারকারী নৌযানের বহরের সক্ষমতা। ফলে একদিকে উদ্ধার করতে না পেরে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয় অনেক নৌযান। অন্যদিকে এসব পরিত্যক্ত নৌযান নৌরুটের তলদেশে রয়ে যাওয়ায় বিঘ্নিত হয় নৌ চলাচল।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হিসাবে, গত ১১ বছরে (২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) নৌ দুর্ঘটনায় নৌযান ডুবেছে ৩৮৭টি। এগুলোর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ ও মালিকদের যৌথ চেষ্টায় উদ্ধার করা হয়েছে ২২১টি নৌযান, উদ্ধার করা হয়নি ১৮১টি।

বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী নৌযানের বহরে এখন চারটি জাহাজ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হামজা ১৯৬৪ সালে ও রুস্তমকে ১৯৮৩ সালে সংগ্রহ করা হয়। এই দুটির অর্থনৈতিক বয়স পার হয়েছে। এগুলোর সর্বোচ্চ উত্তোলন ক্ষমতা ৬০ মেট্রিক টন।

অপর দিকে নির্ভীক ও প্রত্যয়কে সংগ্রহ করা হয় ২০১৩ সালে। ৩৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এই দুটির প্রতিটির সর্বোচ্চ উত্তোলন ক্ষমতা ২৫০ টন। এ দুটি নৌযানের ফিটনেস সনদ হালনাগাদ করা হয়নি।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. মনজুরুল কবীর জানিয়েছেন, তাঁরা দুই হাজার টনের কম ওজনের কার্গো জাহাজ তৈরির অনুমোদন দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের রকেট স্টিমার এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতীর প্রতিটির যাত্রীসহ ওজন হয় প্রায় ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। বেসরকারি খাতের ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌরুটের বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর ওজন ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত।

অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য গাজী সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চারটি উদ্ধারকারী নৌযানের সম্মিলিত সক্ষমতা ৬২০ মেট্রিক টন। দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চের অন্ততপক্ষে ৭০ শতাংশের ওজন ৩০০ মেট্রিক টনের বেশি। এ ছাড়া সম্প্রতি অনেকগুলো বড় লঞ্চ যুক্ত হয়েছে। ৯১ মিটার বা এর কাছাকাছি দৈর্ঘ্যের যাত্রীবাহী লঞ্চের ওজন এক হাজার মেট্রিক টনের বেশি হবে। ফলে বেশির ভাগ লঞ্চই দুর্ঘটনায় পড়লে উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে পারবে না বিআইডব্লিউটিএ।

উদ্ধারের সক্ষমতা না থাকায় পরিত্যক্ত ঘোষিত নৌযানগুলো সুষ্ঠু নৌ চলাচলের হুমকি উল্লেখ করে গাজী সালাউদ্দিন বলেন, কোনো নৌযানকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর চ্যানেল থেকে একটু সরিয়ে বয়া দিয়ে চিহ্নিত করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু স্রোতের কারণে নৌযানটি ঠিক জায়গায় থাকে না। ফলে যেকোনো সময় এসব পরিত্যক্ত নৌযানও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

দেশের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলকারী ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের মেঘনা নদীর মিয়ার চর চ্যানেলের আশপাশে অনেকগুলো পরিত্যক্ত নৌযান রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক লঞ্চমালিক।

উদ্ধারকারী জাহাজ ছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ অন্য জাহাজের সঙ্গে বেঁধে এবং রিফ্লোটিং পদ্ধতিতেও ডুবন্ত নৌযানকে উদ্ধার করে। রিফ্লোটিং পদ্ধতিতে নৌযানের দুই পাশে দুটি জাহাজকে রেখে প্রথমে জাহাজগুলোতে পানি ভরা হয়। ডুবন্ত জাহাজটিকে পানি ভরা জাহাজগুলোর সঙ্গে বাঁধা হয়। এরপর জাহাজ দুটি থেকে পানি আনলোড করা হয়। খালি জাহাজ ডুবন্ত জাহাজটিকে ওপরের বাঁ পাশের দিকে টেনে তোলে। ধাপে ধাপে এ প্রক্রিয়ায় ডুবন্ত জাহাজকে ওপরে তোলা হয়। তবে প্রথাগত এই পদ্ধতিতে খুব বেশি ওজনের নৌযান উদ্ধার করা যায় না। এ ছাড়া এয়ার লিফ্টিং ব্যাগ পদ্ধতিতে ২৫ থেকে ৩০ টন ওজনের ছোট ডুবন্ত নৌযানকে উদ্ধার করে সংস্থাটি।

বড় নৌযানের বিবেচনায় দুই হাজার টন করে দুটি নতুন উদ্ধারকারী নৌযান সংগ্রহ করতে সম্প্রতি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রত্যয়-নির্ভীকের হালনাগাদ ফিটনেস সনদ নেই

গত জুনে বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনার পর উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসার পথে পোস্তগোলায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১–এ ধাক্কা দেয় জাহাজ প্রত্যয়ের ক্রেন। এতে সেতুতে ফাটল দেখা দেয়। এ ঘটনার জন্য প্রত্যয়ের মাস্টার-ড্রাইভারসহ সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতাকে দায়ী করা হয়।

নৌপরিবহন অধিদপ্তর জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ করলেও প্রত্যয়-নির্ভীকের নিজেদেরই হালনাগাদ করা ফিটনেস সনদ নেই। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে নৌযান দুটির বিরুদ্ধে আইন অমান্যের মামলা করেনি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।

বড় আকারের নৌযানের সংখ্যা বাড়লেও উদ্ধারকারী জাহাজের কম সক্ষমতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মীর তারেক আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশে নৌযানের আকার বেড়েছে। নৌযানের আকার এবং নৌপথের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিত উদ্ধারকারী জাহাজ সংগ্রহ করা।’