Thank you for trying Sticky AMP!!

উপকূল থেকে গ্লাসগোর দূরত্ব কমাবে কে?

  • স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বরাদ্দ কম বলে উন্নয়ন হয় না

  • গাবুরার ১১টি গ্রামের মানুষের নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা

  • শুষ্ক মৌসুমেও বন্যতলা দিয়ে পানি ঢুকে ডুবছে প্রতাপনগর

  • কালাবগির ফকিরকোনা গ্রামটি এখন শুধু ভেসে থাকা চিকন সরু পথ

  • গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে কোনো ধারণা নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের

ধারাবাহিক দুর্যোগে গাবুরার মানুষ বিষণ্ন সব সময়

শ্যামনগরের গাবুরা থেকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর ব্যবধান মুঠোফোনই বলতে পারে। তবে বাস্তব সত্যটা ভালো জানেন, উপকূলের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। গ্লাসগোর সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণের পাশাপাশি গুরুত্ব পাচ্ছে ক্ষতিপূরণ আদায় প্রসঙ্গটি। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বে সে দাবি নিয়ে সম্মেলনের শুরুর দিন পথে দাঁড়িয়েছিল আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েকজন সচেতন মানুষ। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ পেলেই কি বরাদ্দের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হয়? দায়িত্বপ্রাপ্তরাই যদি পথ ভুল করেন? সেসব কথা বলতে পারেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের দ্বীপ গাবুরা, আশাশুনির প্রতাপনগর এবং দাকোপের সুতারখালীর নামকাওয়াস্তে একটা বিন্দু হয়ে ঝুলে থাকা কালাবগির বাসিন্দারা। সম্প্রতি এসব এলাকা ঘুরে পাওয়া গেল সে কথাই।

পানিতে টর্চের আলো জ্বলে গাবুরায়

৬৫ ছাড়ানো রাশিদা খাতুন জানালেন, সন্ধ্যার পর পানিতে ঢিল ছুড়লে টর্চ লাইটের মতো আলো হয়। উত্তাল খোলপেটুয়া আর কপোতাক্ষের পেটের ভেতরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার লেবুবুনিয়ার একটি গ্রাম গত কয়েক বছরে নিশ্চিহ্ন হয়ে হারিয়েছে মানচিত্র থেকে। সুন্দরবন–সংলগ্ন উপকূলে বুদ্‌বুদের মতো ভেসে থাকা এ গ্রামের মানুষ এখনো চৈত্র মাসে বাঘের ভয় পায়। আর চতুর্দিকে পানি নিয়ে, নিজেরা সারা দিন ধরে থাকে পানি পান না করে। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহের দুপুরেও আগুন তাতানো রোদ। এক কলস সুপেয় পানি আনতে হাঁটতে হয় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার। চকবারার মানুষ তাও না হয় দূরে গেলে পায়, কিন্তু চাঁদনীমুখা নয় নম্বর, দশ নম্বর, ডুমুরিয়ার মতো ১১টি গ্রামের মানুষের খাওয়া-গোসল-ব্যবহার এবং গবাদিপশুর জন্য ব্যবস্থা শুধু নদীর নোনা পানি। ১৫টি ওয়ার্ডের ৪টিতে আছে আংশিক সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

বেড়িবাঁধ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাশিদা বেগমের কাছে জনপ্রতিনিধিদের খবর জানতে চাইলে তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই বললেন, ‘কী আসে যায়, আমাদের গায়ে তো থাকে কাদা। তখন সব চেহারাই একরকম। আইলার পর তখনকার চেয়ারম্যান স্পিডবোটে করে ঘুরে দেখছেন আর মন্ত্রীরা হেলিকপ্টারে চড়ে আকাশ থেকে দেখেন পানির মানুষের কষ্ট। ইয়াস ঝড়ের পর আমি কারও দেখা পাইনি।’

এ এলাকার ১৬ বছর বয়সী বাচ্চু গাজী পড়ালেখা ছেড়ে মোটরবাইকে যাত্রী আনা–নেওয়ার কাজ করে। লবণাক্ততা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিষের অধিক বহুকাল ধরে। প্রতিটি দুর্যোগে তা লাফিয়ে বাড়ে। ৪১ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপের ৪০ শতাংশ মানুষের জীবিকা এখন কাঁকড়ার চাষ। ধানের চাষ কারও নেই বললেই হয়। রাশেদা আমাদের পানিতে টর্চের আলোর কথা বলেছিলেন। আসলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, পানিতে লবণের পরিমাণের কথা। সে মাত্রা এতই বেশি যে অন্ধকারে জ্বলে। আর বাচ্চু জানালেন, এতটুকু ফসলি জমি কোথাও নেই যে তাঁর বাবা চাষ করবেন। এ অঞ্চলের লবনাক্ততার পরিমাণ জানতে গিয়েছিলাম, খুলনার লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রে। প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বললেন, মাটিতে লবণের মাত্রা ৪ ডেসিসিমেন অতিক্রম করলেই ধান ফলানোর উর্বরতা হারায় মাটি। এ বছরের এপ্রিল–মে মাসে খুলনার কয়রার শৈলমারী নদীর লবণাক্ততা ছিল ৩৩ ডেসিসিমেন।

দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার বাঁধ সব সময় আতঙ্কিত রাখে এখানকার মানুষকে

নীলডুমুর ঘাট হয়ে চকবারায় পৌঁছালে যে বাঁধ চোখে পড়বে তা আতঙ্কজনক। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে তলিয়ে গিয়েছিল গাবুরা ইউনিয়নের অধিকাংশ স্থান। গাবুরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম একবাক্যে জানালেন, বরাদ্দ অপ্রতুলতাই তাঁর এলাকার সমস্যা সমাধানের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা। চকবারা থেকে লেবুবুনিয়া পর্যন্ত মাটির পথ অবিশ্বাস্য ঝুঁকিপূর্ণ। শ্যামনগর উপজেলা পর্যন্ত যে বরাদ্দ আসে, তা বণ্টনের পর গাবুরার বাঁধ, পানির ব্যবস্থার জন্য পাওয়া অর্থ দিয়ে ৪৫ হাজার মানুষের জন্য কিছু করা যায় না। মানচিত্রে কিছুদিন আগেও উপস্থিত লেবুবুনিয়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডটি এখন পায়ে হেঁটে খুঁজে দেখতে বললেন তিনি। সুপেয় পানির ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান এর সবই নির্ভর করছে স্থায়ী বেড়িবাঁধের ওপর। বাঁধ হলে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন সমান গুরুত্বের সঙ্গে। জন্ম-মৃত্যু নোনা পানির কাছে জিম্মি রাখা মানুষেরা বিশ্বের কোথায় জলবায়ু সম্মেলন হচ্ছে এ খবর জানে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী তারাই জানেন না, ক্ষতিপূরণের বরাদ্দের হিসাবটা কোন অঙ্কে সমাধান হয়।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে আশাশুনির প্রতাপনগরে, যে এলাকাটিও আম্পানের পর হারাতে বসেছে মানচিত্র থেকে।

প্রতাপনগরে ভাঙন বাড়ে পরিকল্পনার কালক্ষেপণে

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগরের একটি মসজিদ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবরটি আলোচিত। বিপর্যয়ের নির্মমতা আরও গভীরে। প্রতিদিন এখানে জীবনের অভিঘাতে এমন তলিয়ে যাচ্ছে বহু পরিবার, যাঁদের কোনো হিসাব কেউ দিতে পারবে না। প্রতাপনগর আর পদ্মপুকুরের মাঝখানের বন্যতলায় দুর্যোগের আঘাত এতটুকু কমেনি। পদ্মপুকুরের পাখিমারা হয়ে বন্যতলা প্রবেশ করতে হলে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ হাঁটতে হবে যে সড়ক দিয়ে, সেটি মূলত বাঁধ। এ বাঁধের বাইরে আছে কয়েক শ মানুষের বসতি। এটিকে সড়ক না বলে শিশুদের হাতে তৈরি মাটির বিভাজনরেখা বলাই শ্রেয়। একজন হেঁটে গেলে অপরদিক থেকে আসা মানুষকে থেমে একপাশে সরে দাঁড়াতে হয়। আম্পান ঝড়ের পর থেকে লবণাক্ততার এখানে কোনো নতুন গাছ জন্মায়নি। উত্তাল কপোতাক্ষ গিলে নিয়েছে ইউনিয়নের অনেকখানি অংশ।

প্রতাপনগরের জনপদ কখনো আগের অবস্থায় ফিরতে পারবে না বলেই আশঙ্কা

এলাকায় কর্মসংস্থান না থাকায় ইটের ভাটায় কয়েক মাসের জন্য কাজ করতে যাচ্ছে এখানকার মানুষ। অস্থায়ী অভিবাসনের এ প্রভাব দীর্ঘস্থায়ীভাবে পরে তাদের ব্যক্তি জীবনে। এই বন্যতলার মানুষ একবার বাঁধের একপাশে বসত করে। সে স্থান তলিয়ে গেলে আবার উল্টোদিকে ঘর বানায়। পাখিমারার বন্যতলা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতাপনগর। যাদের সামান্য সংগতি আছে তারা আম্পানের পর এলাকা ছেড়েছে। আম্পানের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতাপনগরের ৪০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী।

বাঁধ থেকে কয়েক ফুট নিচু জমিতে ঘর ওয়াজিয়ার গাজির, ইটভাটায় কাজের সময় যে পঙ্গু হয়ে ফিরেছেন। আর তাঁর সহশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে ঘটনাস্থলে। ওয়াজিয়ার খেদ নিয়েই বললেন, ‘এখন আমাদের দেখতে আসছেন কেন? এখন তো ঝড় হয় নাই।’ এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিনে অভ্যস্ত, তাঁদের প্রতি নজর শুধু দুর্যোগকালীন হবে।

প্রতাপনগরের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানালেন, বরাদ্দ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। বন্যতলায় এখন যে বাঁধ হচ্ছে সেখানে বালুর বস্তার পরিবর্তে মাটির বস্তা ফেলা হচ্ছে যা জোয়ারে ধুয়ে যাবে। এদিকে বাঁধ মেরামতের ঠিকাদার রুহুল কুদ্দুসের অভিযোগ, ইয়াসের ২১ দিন আগে বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরুর পর দেখলেন ক্লোজার দিয়ে পানি ঢুকে গ্রাম ভাসছে। ক্লোজার মেরামতের দায়িত্ব পাননি বলে শুধু বাঁধ সংস্কারের কাজটুকুই করে যাচ্ছেন। বাঁধ মেরামতের জন্য যেটুকু টেন্ডার দেওয়া হয়, বরাদ্দ হয় ওই অংশের হিসাবে। সব প্রক্রিয়া শেষের পর কাজ শুরু করতে করতে দেখা যায়, বাঁধে ফাটল আরও বড় হয়েছে।

জোয়ার-ভাটার খেলায় দিনরাত ডুবে থাকা মানুষের কাছে গ্লাসগো কল্পনার বাইরে কোনো জায়গা। কিন্তু এ দূরত্ব হ্রাসের দায় যাঁদের তাঁরা কতটুকু আন্তরিক হবেন, তা ভবিষ্যৎ জানে। তবে এমনো এক জায়গা এই উপকূলে রয়েছে যে স্থান নিয়ে আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই আর কোনো আশা করছেন না। সেখানকার মানুষ ঘোষণা দিয়েছেন, পথের ওপরের বসতিটুকু তলালে এবার তাঁরা সোজা জঙ্গলে প্রবেশ করবেন।

এটুকু ভাঙলেই জঙ্গলে যাবেন কালাবগির আছিয়া

খুলনার দাকোপের ঠাকুরবাড়ির ঘাট থেকে কালাবগীর ফকিরকোনা পর্যন্ত পৌঁছাতে কয়েকবার নেমে যেতে ইচ্ছা হতে পারে। তবে এই পানিপথের যুদ্ধে মানুষের পক্ষে বিজয় অসম্ভব। ফকিরকোনা ঘাটে নামার আগে দূর থেকে দেখবেন টংঘরের মতো দুই ফুট বাই দুই ফুটের একটি ঘরে ভাঙা মই লাগানো চোখে পড়বে। দুই পাশে গোলপাতার বেড়া দেওয়া এই খোপ গ্রামের আটটি পরিবারের একমাত্র বাথরুম। দরজা তো দূরের কথা, একটা ছেঁড়া পর্দাও নেই। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবার জন্য এই একটি ব্যবস্থা।

সুতারখালী আর শিবসার বলয়ে বিন্দুর মতো এক দাগ কালাবগির ফকিরকোনা

এ গ্রামে ১৭০ থেকে ১৮০টি পরিবারের প্রায় ১৩০০ মানুষের বসবাস। একপাশে সুতারখালী নদী আরেক পাশে শিবসার তোপ নিয়ে টিকে আছে সাবেক সামান্য উঁচু পথ। এ পথটুকুই এখন উপকূলীয় অঞ্চলে সুন্দরবনের সবচেয়ে কাছের মানববসতি। আম্পানের আগপর্যন্ত গ্রামটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ছিল না। এ গ্রামে সুপেয় পানির কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বহুদূর, একজন চিকিৎসকও আসেন না। জীবিকার ব্যবস্থাহীন এ গ্রামে আম্পান ঝড়ের পর ৪০টি পরিবারের কাছে টিন আর ছয় হাজার করে টাকা পৌঁছেছে। গত দেড় বছরে শুধু ত্রাণের চাল পেয়েছেন বলে জানালেন কয়েকজন।

পুরোনো একটা শাড়ি পেঁচানো শরীর নিয়ে এগিয়ে আসা বৃদ্ধা আছিয়া নিজ থেকে জানালেন, ৮৮ সালে বড় ঝড় হয়েছিল। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে এই জনপদ। তবুও শেষ পর্যন্ত যেটুকু ছিল, তা দিয়ে হাঁটাপথে যাতায়াত করা যেত মূল কালাবগি ইউনিয়ন পর্যন্ত। আম্পান সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করেছে। এরপর যাদের উপায় ছিল, তারা সরে গিয়েছে দাকোপ, চালনা বা খুলনা শহরে আর যাদের কোনো উপায় নেই তারা স্থবির জীবন নিয়ে রয়েছে এখানে। মূলত এ গ্রামটির কিছুই আর টিকে নেই। সুতারখালী আর শিবসা সাক্ষী রেখে জেগে থাকা এই গৃহস্থালি পরবর্তী ঝড়ে না থাকার আশঙ্কাই বেশি। কেননা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভেঙেছে এখানকার নির্মাণাধীন টেকসই বেড়িবাঁধের একাংশ। ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছিল বাঁধটি। খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালীর কালাবগিতে এখানকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য শেষবার কবে সফর করেছিলেন স্থানীয় মানুষ মনে করতে পারেন না। তাদের ভাষ্যে, আম্পানের মতো বড় ঝড়ের পরও জনপ্রতিনিধিদের দেখা পাননি। এ কথা যে মিথ্যা না, তা বোঝা গেল সুতারখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকিরের হতাশা থেকে। কালাবগির ফকিরকোনা নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই সম্ভব না জানিয়ে বললেন, এটুকুও ডুবলে এখানকার মানুষদের সরিয়ে নিতে হবে অন্য এলাকায়। জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই তাঁর। মূল কালাবগিতে গুচ্ছগ্রাম তৈরির পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু এই পরিকল্পনার কথা ভেবে তো আর জোয়ার-ভাটা থেমে থাকবে না, তাই আছিয়া বেগমরা জঙ্গলে যাওয়ার সিদ্ধান্তেই অটল।

কালাবগির এই মানুষদের যাওয়ার আর কোনো ঠাঁই নেই

উপকূলের এই তিন জনপদ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের মূল্য প্রতিনিয়ত দিয়ে চলেছে দেশের আরও অনেক জায়গার মানুষ। যশোরের ভবদহর দুঃখ নামে পরিচিত জলাবদ্ধতার সংকট এখন স্থানীয় মানুষের বড় ক্ষত। বরিশালের সুগন্ধা নদীর তীর ভাঙছে ক্রমাগত। রাজবাড়ীতে পদ্মার ভাঙন এই শুষ্ক মৌসুমেও প্রতি সপ্তাহের খবর। এই প্রতিবেদন তৈরির সময় সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় শুরু হয়েছে মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। অপরিকল্পিত ঘের নির্মাণ করে মাছের চাষ এবং পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় তলিয়েছে খরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকা।

এবারের জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বড় উদ্বেগ, ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ প্রসঙ্গ। প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি আমাদেরও। কিন্তু উপকূলের মানুষ শুধু নির্বাচনের সময় ভোটার হিসেবে বিবেচিত হতে থাকলে গাবুরা থেকে গ্লাসগোর সাড়ে আট হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব কোনো দিনই ঘুচবে না।