Thank you for trying Sticky AMP!!

উহানে আতঙ্কে বাংলাদেশিরা, দেশে ফেরার আকুতি

চীনের উহানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন। এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছেন। এই শহরে চার শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন।

উহানে সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে বাংলাদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। তাঁদের অনেকেই চাইছেন সরকার যেন তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনে।

হুয়া জং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে পিএইচডি করছেন কাইয়ূম হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উহানে চার শর মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন। শহরের পরিস্থিতি ভুতুড়ে। বাজারঘাট, যান চলাচল সব বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দু–একটা সুপারশপ খোলা। কিন্তু সেখানে শুকনো খাবার ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। বাসায় পানি সরবরাহ বন্ধ। বাইরে থেকে পানি এনে ফুটিয়ে খাচ্ছেন। কাইয়ূম উহানে আছেন স্ত্রী–সন্তানসহ। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে তাঁর সাড়ে তিন বছর বয়সী মেয়ে।

বাংলাদেশি এই শিক্ষার্থী সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিতে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে তাঁদের কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। তাঁরা উইচ্যাটে একটি গ্রুপ খুলে চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাকে যুক্ত করেছেন।

উহান থেকে আবদুল্লাহ আল হাফিজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চরম উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পার করছি প্রতিটা মুহূর্ত। উহানে আমরা চার শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, যাঁদের অনেকেই আবার থাকছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের হয়ে সরকারের কাছে আমাদের অবস্থাটা জানিয়ে দেবেন। চীন সরকারের অনুমতি নিয়ে সরকার যেন আমাদের দেশে ফিরিয়ে নেন, সেই নিবেদনটা পৌঁছে দেবেন।’

চীনে উহানে অবস্থান করা শ চারেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। তাঁদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এ জন্য ২৪ ঘণ্টার হটলাইন (+৮৬১৭৮০১১১৬০০৫) চালু করেছে। যদিও অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, ওই নম্বরে ফোন করলেও সব সময় কাউকে তাঁরা পাচ্ছেন না।

উহান শহরে গত দুদিনে আটকে পড়া শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে দূতাবাসের সাহায্য চেয়েছেন।

সংক্রামক ওই ব্যাধিতে এ পর্যন্ত চীনের ৫৬ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। আর আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজারের বেশি মানুষ। চীনের বাইরেও আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ-জামান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এরই মধ্যে উহানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূতাবাস নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। এ ছাড়া বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতালয়প্রধান উহানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউচ্যাটে নিজেদের যুক্ত করেছেন।

বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের হটলাইন নম্বরে ফোন করে জানা গেছে, দূতাবাস ফেসবুক পোস্টের পর উহানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। সেখানে বাংলাদেশের ৩০০ থেকে ৪০০ শিক্ষার্থী ও গবেষক আছেন। তাঁদের সবাই সুস্থ আছেন।

ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য উহানে শহরের গণপরিবহনব্যবস্থাও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে, চাইলেও বাংলাদেশিরা ফিরতে পারছেন না।

হটলাইনে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা জানান, এ মুহূর্তে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের অবহিত করছেন। এ পর্যন্ত সংক্রামক ওই ব্যাধিতে কোনো বিদেশি মারা যাননি।

উহানের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে গত রাতে হুবেইয়ের স্টেট কি ল্যাবরেটরির শিক্ষার্থী জোবায়ের হক ফেসবুকে বলেন, ‘উহানে আমরা ৫০০ থেকে ৬০০-এর মতো বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র এবং পরিবার-সন্তান নিয়ে প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে প্রতিমুহূর্ত কাটাচ্ছি। অনেকে দেশে ফিরতে চাইলেও পারছে না। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আমাদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’

এদিকে করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত শুক্রবার চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি বেনাপোল স্থলবন্দরে স্ক্যানার বসিয়েছে। এর আগে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চটগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে স্ক্যানার বসানো হয়।

ইতিমধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশে আসা দুই হাজারের মতো মানুষের শরীর স্ক্যান করা হয়েছে। তবে কারও শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া যায়নি।