Thank you for trying Sticky AMP!!

উৎসবের ভেতরে উৎকণ্ঠা

‘আর না ছিটবাসী, আমরা এখন বাংলাদেশি’ স্লোগানে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় গতকাল রাত ১২ টা ১ মিনিটে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনের মুহূর্তটি উদযাপন করছে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। ছবিটি কামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলাম, রংপুর

‘এবার হামরা শান্তিতে বাইচপার চাই’—ছিটমহলের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার ১২ ঘণ্টার মাথায় দাশিয়ার ছড়ার আলতাফ হোসেন এ কথা বলেন। তাহলে কি অশান্তির আশঙ্কাও আছে? পাশে দাঁড়ানো আবদুর রাজ্জাক কথা টেনে জবাব দিলেন, ‘সকালেই তো ঠেলাঠেলি হইল।’
আজ শনিবার বেলা ১২টায় আলতাফ হোসেন ‘শান্তির আশা’, আর রাজ্জাক যখন ‘ঠেলাঠেলির’ কথা বলছিলেন, তখন ১০০ গজ দূরে দাশিয়ার ছড়ায় নির্মিত উৎসব মঞ্চ থেকে আলোচকেরা বিজয়ের গৌরবগাথার গল্প আর ভবিষ্যতে এলাকার উন্নয়নের রূপকল্প তুলে ধরে বক্তৃতা করছিলেন।
কিন্তু সেদিকে মানুষের দৃষ্টি খুব কম। আনন্দ-উৎসবের ভেতরেই জমিজমা, রাজনৈতিক দলাদলি এবং প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের রেশ বাসিন্দাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় দাশিয়ার ছড়া। এর আয়তন ১ হাজার ৬৪৩ একর। লোকসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এ কারণে সব ছিটমহলের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল দাশিয়ার ছড়া। এখান থেকেই সূত্রপাত ঘটে ছিটমহল বিনিময়ের আন্দোলন। সে কারণে এখানে আনন্দ-উচ্ছ্বাস যেমন বেশি, তেমনি আছে নানা স্বার্থকেন্দ্রিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও।

আবদুর রাজ্জাক যে ঠেলাঠেলির কথা বলছিলেন, তা গত শুক্রবারই চোখে পড়েছে। ওই দিন বিকেলে ও রাতে দাশিয়ার ছড়ায় দুটি পৃথক মঞ্চে বিজয় অনুষ্ঠান হয়েছে। একটিতে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাংসদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, অন্যটিতে এই আসনের সাবেক সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতা মো. জাফর আলী বক্তব্য দিয়েছেন।

শিকল ভাঙা উল্লাসে মুক্তির নিশ্বাস

আর গতকাল দাশিয়ার ছড়ার তিন জায়গায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়েছে। ভোর ছয়টায় কালীরহাট জামে মসজিদের কাছে ফুলবাড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহামুদ সরকারিভাবে পতাকা উত্তোলন করেন। সকাল নয়টায় ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি, আর ১১টায় আওয়ামী লীগ পৃথকভাবে পতাকা উত্তোলন করে।

স্থানীয় লোকজন, দাশিয়ার ছড়ার সমন্বয় কমিটি ও ইউনাইটেড কাউন্সিলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় নিয়ে দাশিয়ার ছড়ায় সমন্বয় কমিটি ও ইউনাইটেড কাউন্সিল নামে দুটি পক্ষের তৈরি হয়। সমন্বয় কমিটি ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল বিনিময় চেয়েছিল। কিন্তু কাউন্সিল বিনিময় চায়নি। তারা চেয়েছিল ভারতের কাছ থেকে করিডোর। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান এখন ব্যক্তিগত শত্রুতা পর্যন্ত গড়িয়েছে। ছিটমহল বিনিময় বিরোধী কাউন্সিলের কিছু নেতা ও সমর্থক ভারতে চলে যাচ্ছেন। আর যাঁরা বাংলাদেশে থাকছেন, তাঁরা এখন স্থানীয় যুবলীগের এক নেতার আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

৬৮ বছর পর মানচিত্রের অংশ

আবার সমন্বয় কমিটিতে ভাগাভাগিতেও আছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এই দলাদলির মধ্যে রাজনৈতিক বিষয় নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া দাশিয়ার ছড়ার বাসিন্দারা সামনের ভূমি জরিপে জমি-জমার মালিকানা নিয়ে জটিলতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কাও করছেন। এ আশঙ্কা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা দাশিয়ার ছড়ায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

অবশ্য ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, জরিপের সময় সরকার কমিটির নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে জমিজমা সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা এড়ানো যাবে। তবে দাশিয়ার ছড়ার কালীরহাট সংলগ্ন আবদুর রাজ্জাক বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ৬৮ বছর ধরে জমিজমার চূড়ান্ত কোনো কাগজপত্র নেই। ১০ বছর ধরে নিবন্ধন বন্ধ। তাই জরিপের সময় ঝামেলা হতে পারে।