Thank you for trying Sticky AMP!!

কমলগঞ্জে একে একে উজাড় হচ্ছে গাছ

সামাজিক বনায়ন থেকে কেটে নেওয়া গাছের গুঁড়ি। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কামারছড়া বন বিটে। প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জের কামারছড়া বন থেকে সামাজিক বনায়নসহ সংরক্ষিত বনের মূল্যবান গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের লোকজনের ছত্রচ্ছায়ায় স্থানীয় একটি চক্র এই বন উজাড়ে জড়িত বলে অভিযোগ করছেন সামাজিক বনায়নের সদস্যরা। একে একে সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে নেওয়ায় লভ্যাংশ পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা। 

সম্প্রতি কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জের আলীনগর ইউনিয়নের কামারছড়া বন বিট এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। 

ডবলছড়া চা-বাগান থেকে কামারছড়া বন বিটের সামাজিক বনায়ন এলাকা দিয়ে সংরক্ষিত বনে প্রবেশ করে দেখা যায়, বনের প্রতিটি টিলা থেকে সামাজিক বনায়নের নানান জাতের শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে চোর চক্র। সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে কেটে নেওয়া গাছের অবশিষ্ট গোড়া। কালিছলি গ্রাম এলাকা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, পাঁচটি টিলা থেকে নানা জাতের দুই শতাধিক গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলা এ বন থেকে গাছ কেটে ট্রলি ও পিকআপ দিয়ে শমশেরনগরের বিভিন্ন করাতকলে পাচার করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কামারছড়া বন বিটের সামাজিক বনায়নের দুজন সদস্য বলেন, এ বন বিট এলাকায় ৫২ একর টিলা ভূমিতে ২০০৭-০৮ অর্থবছরের সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে আকাশমনি ও আগরগাছ লাগানো হয়েছিল। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে এ সামাজিক বনায়নের গাছ নিলামের মাধ্যমে বিক্রির পর উপকারভোগী সদস্যরা তাঁদের নির্ধারিত টাকা পাওয়ার কথা ছিল। এখন সংঘবদ্ধ চোর চক্র প্রতিদিন গাছ কেটে নিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তাতে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা লভ্যাংশ না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামাজিক বনায়নের দুই সদস্য বলেন, কামারছড়া বন বিট কর্মকর্তা মীর বজলুর রহমান স্থানীয় আবুল হোসেন ও রশিদ উল্যাকে বন পাহারাদার বানিয়েছেন। তাঁরা এই গাছ চুরির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের মাধ্যমে নিয়মিত সামাজিক বনায়নের গাছ ও সংরক্ষিত বনের মূল্যবান লোহা কাঠের গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। তাঁরা বলেন, আবুল হোসেন ও রশিদ উল্যার চক্রটি এতই শক্তিশালী যে তাদের গাছ চুরির কাজে কেউ বাধা দেওয়া বা অভিযোগ করার সাহস পান না।

তবে অভিযুক্ত আবুল হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বা তাঁর স্বজনেরা সংরক্ষিত গাছ চুরির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন। বন বিট কর্মকর্তা তাঁর কাজে সহায়তার জন্য প্রায়ই তাঁদের ডেকে নেন। তখন তিনি মোটরসাইকেলে করে বন বিট কর্মকর্তাকে নিয়ে বনে ঘোরেন।

জানতে চাইলে কামারছড়া বন বিট কর্মকর্তা মীর বজলুর রহমান বলেন, মাঝেমধ্যে দু-একটি গাছ চুরি হয়। তবে ঢালাওভাবে এ বন বিট থেকে সংরক্ষিত বনের ও সামাজিক বনায়নের গাছ চুরি হচ্ছে না। এর সঙ্গে গাছচোর চক্রের কোনো সম্পর্ক নেই।  তিনি বলেন, বনের নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু পাহারাদার রয়েছে। এর বাইরে ফরেস্ট ভিলেজারদের নিজ দায়িত্বে বন পাহারা দিতে হয়। স্থানীয় আবুল হোসেন কামারছড়া বন বিটের নিয়োগপ্রাপ্ত পাহারাদার। আর রশিদ উল্যা কামারছড়া চা-বাগানের পাহারাদর। তাঁর বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা রয়েছে।

অতিসম্প্রতি নতুন নার্সারি করতে গিয়ে রফিক মিয়া নামের এক বন ভিলেজারের সৃজন করা লেবুবাগান কেটে ধ্বংস করেছে বন বিভাগ। রফিক বলেন, ১০ বছর ধরে তিনি ওই জায়গায় লেবু চাষ করেন। সম্প্রতি ওই জায়গায় নার্সারি করার উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। কিন্তু রফিককে না জানিয়েই অতর্কিত (১২ ফেব্রুয়ারি) লেবুবাগান কেটে ধ্বংস করেছে বন বিভাগ। এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

বন বিট কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, নতুন নার্সারি কর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বন ভিলেজারের সঙ্গে আলোচনা করেই লেবুবাগান কাটা হয়েছে।

কমলগঞ্জের রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু তাহের  বলেন, মাঝেমধ্যে কামারছড়া বন বিট থেকে গাছ চুরি হচ্ছে কথাটি ঠিক। এ বনে অনেক পুরোনো কাটা গাছের গুঁড়ি অবশিষ্ট রয়েছে। বন বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।