Thank you for trying Sticky AMP!!

এক মাস ধরে কুয়েতের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার অপেক্ষা

শহিদ ইসলাম

মানব ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে ঠিক এক মাস আগে আটক করা হয়েছে সাংসদ শহিদ ইসলামকে (পাপুল)। আটকের পর তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন আর ভিসা-বাণিজ্যের অভিযোগ আনা হচ্ছে। তাঁর আটককে ঘিরে কুয়েতে এত তোলপাড় হলেও এ নিয়ে দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য পায়নি। তাই কুয়েতের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কুয়েত তথ্য দিলে সাংসদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে সরকার।

কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশটির কাছ থেকে এ নিয়ে কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুয়েতে আটক স্বতন্ত্র সাংসদ শহিদ ইসলামের ব্যাপারে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য পাইনি। কুয়েতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার চার্জ গঠনের কথা শুনেছি। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানার পর সংবিধানের আলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, শহিদ ইসলাম সাংসদ হলেও তিনি সাধারণ পাসপোর্টে কুয়েতে গিয়েছিলেন। তাই ৬ জুন রাতে শহিদ ইসলামকে আটকের পর তিনি সাংসদ কি না, কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা জানতে চেয়েছিল সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে। পরে বাংলাদেশ দূতাবাস এক কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে জানায়, আটক শহিদ ইসলাম বাংলাদেশের একজন সাংসদ। দূতাবাস তাঁর আটকের বিষয়ে জানতে চেয়ে কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তখন একটি চিঠি দিয়েছিল। গত প্রায় এক মাসেও কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠির জবাব দেয়নি।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় কুয়েতের রাষ্ট্রদূতকে আটক সাংসদের বিষয়ে তথ্য জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি এক সপ্তাহ আগে তথ্য জানানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা দেননি। এখন আমরা কুয়েতের তথ্যের অপেক্ষায় আছি। কুয়েত তথ্য না জানালে তো আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু জানতে চাইতে পারি না।’

শহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ (চার্জ) গঠিত হয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী করবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি এসব অপরাধে জড়িত প্রমাণিত হন, আমরা তাঁর প্রতি দয়া দেখাব না। কুয়েতে যদি তাঁর শাস্তি হয়ে যায়, আমরা বিধি অনুযায়ী বিচার করব।’

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আটক সাংসদের বিষয়ে বাংলাদেশে ও কুয়েতে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি দুদক গত ১৭ জুন সাংসদ শহীদ ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ সেলিনা ইসলাম, তাঁদের মেয়ে এবং সেলিনা ইসলামের বোনের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ওই সাংসদের মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচার নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অভিযোগ তদন্তে নামে দুদক। এরপর থেকে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।

কী শাস্তি হতে পারে সাংসদের?

কুয়েতের সিআইডি জুনের ৬ তারিখ রাতে শহিদ ইসলামকে রাজধানীর মুশরিফ এলাকার বাসা থেকে আটক করে। এরপর কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন সেখানকার আদালত। গত ২৫ জুন আদালতে নেওয়া হলে তাঁকে ২১ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁর কারাভোগের মেয়াদ ১৬ জুলাই শেষ হওয়ার কথা। যদিও ৯ জুলাই জামিনের শুনানির জন্য তাঁকে আদালতে নেওয়ার কথা রয়েছে।

>

অভিযোগ প্রমাণিত হলে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র ওই সাংসদকে ৫–৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে
মানব ও মুদ্রা পাচার, ঘুষ ও ভিসা-বাণিজ্যের অভিযোগ
৬ জুন গ্রেপ্তার, কয়েক দফা রিমান্ড
২৫ জুন থেকে কারাগারে
জামিনের পরবর্তী শুনানি ৯ জুলাই

মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগের পাশাপাশি গত এক মাসে শহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন ও ভিসা-বাণিজ্যের অভিযোগ আনা হয়েছে। কুয়েতের তদন্ত সূত্র, আইন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমকর্মী এবং সেখানকার কূটনৈতিক সূত্রগুলোর সঙ্গে গত কয়েক দিন যোগাযোগ করে ধারণা পাওয়া গেছে, শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত হলে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র ওই সাংসদকে পাঁচ থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে।

কুয়েতের একজন আইন বিশেষজ্ঞ জানান, কুয়েতের আইন অনুযায়ী অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ কুয়েতি দিনার (এক দিনারে ২৭৫ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে ১ কোটি ৭৭ লাখ থেকে ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা) দিতে হবে। আর অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে একজনের ন্যূনতম পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কুয়েতে একজনের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

অন্যদিকে ভিসা-বাণিজ্য ও মানব পাচারের বিষয়টিতে শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে কুয়েত সরকারকে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বেশ কঠোর হতে দেখা গেছে। গত বছর কুয়েতে মানব পাচারের অপরাধে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

শহিদ ইসলামের আটকের বিষয়ে সেখানে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরাও নজর রাখছেন। কুয়েতের আইন বিশেষজ্ঞ, বিদেশি কূটনীতিক আর গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, বাংলাদেশের সাংসদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত কুয়েতের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে আটক ও বরখাস্ত করা হয়েছে। সেখানকার অভিযুক্ত দুই সাংসদের প্রাধিকার প্রত্যাহার করা হয়েছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সাংসদের যে শাস্তি হবে, সেটার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

কুয়েতের এক আইন বিশেষজ্ঞ জানান, কারাভোগের পর দণ্ডিত সাংসদ ওই দেশে থাকতে পারবেন না। তাঁকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে। এর পাশাপাশি কুয়েতে তাঁর যেসব সম্পত্তি রয়েছে, তা কুয়েত সরকার জব্দ করতে পারে।