Thank you for trying Sticky AMP!!

এক হাজার পরিবার বিদ্যুৎবিহীন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা দেওয়া হয় ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ ঘোষণার দুই বছর পার হলেও সীতাকুণ্ডের আটটি ত্রিপুরাপাড়া ও মুরাদপুর ইউনিয়নের পশ্চিম গুলিয়াখালী গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবারের কাছে এখনো বিদ্যুৎ পৌছায়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডের ছোটদারোগাহাট, সীতাকুণ্ড পৌরসদর, বাঁশবাড়িয়া, সুলতানা মন্দির, ছোটকুমিরা, মধ্যসোনাইছড়ি, দক্ষিণ সোনাইছড়ি, মদনাহাট এলাকায় পাহাড়ে বসবাসরত আটটি ত্রিপুড়াপাড়ার অন্তত ৮০০ পরিবার ও মুরাদপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মুরাদপুর গ্রামের অন্তত ২০০ পরিবারের কাছে বিদ্যুতের আলো পৌছায়নি।

বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ বলছে, যেসব জায়গায় বিদ্যুৎ পৌছানো সম্ভব সেখানে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাহাড়ি এলাকাগুলোতে সিস্টেম খরচ বেশি হওয়ায় সেখানে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া ত্রিপুরাদের নিজস্ব কোনো ভূমি নেই। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ভূমির মালিকানা থাকতে হবে। ভূমি জটিলতায় হয়তো তারা বিদ্যুৎ পায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মধ্যসোনাইছড়ি গ্রামে বিদ্যুৎ আছে এমন জায়গা থেকে অন্তত ২০০ মিটার ‍দূরে ত্রিপুরাপাড়ার অবস্থান। সেখানে পরিবার রয়েছে ৬৫টি। গ্রামটি দুর্গম এলাকায় না হলেও বিদ্যুৎ পৌছায়নি। সীতাকুণ্ড পৌর সদরের ত্রিপুরাপাড়াটি ছাড়া বাকি সবগুলো ত্রিপুরাপাড়া সমতল ভূমির কাছাকাছি। এ ছাড়া পশ্চিম মুরাদপুর গ্রামের শুরু থেকে সোলেমান মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত বিদ্যুতের খুটি রয়েছে। তারপর থেকে অন্তত ২৫০ মিটার খুটি ছাড়াই বিভিন্ন গাছের সঙ্গে ঝুকিপূর্ণভাবে তার বেঁধে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপর থেকে সাগর উপকূল পর্যন্ত অন্তত দুই শ পরিবার বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরই মধ্যে গুলিয়াখালী সৈকতটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অথচ সূর্য অস্ত না যেতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে পড়ে সৈকত এলাকা। ফলে পর্যটকদের ছিনতাইয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এদিকে সবগুলো ত্রিপুরাপাড়া পাহাড়ের কাছে হওয়ায় রাতে চলাফেরা করতে বেশ অসুবিধা হয়।

পশ্চিম গুলিয়া এলাকার বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, তাঁদের গ্রামের বাসিন্দাদের বেশির ভাগেরই সৌরবিদ্যুতের প্যানেল লাগানোর সামর্থ নেই। একমাত্র মসজিদটিতেও বিদ্যুৎ নেই। ফলে এলাকার মুসল্লিরা রাতের বেলায় নামাজে যেতে পারেন না। কেরোসিন তেলের দামও বেশি। ফলে কম আলোতে তাদের শিশুদের পড়াশোনা করতে হয়।

অপর বাসিন্দা মাসুদ আলম বলেন, গুলিয়াখালী সৈকতটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক বেড়াতে আসে। বিদ্যুৎ না থাকায় দিনের আলো থাকতে ফিরে যেতে হয়। অন্ধকার রাতে ছিনতাইকারীদেরও ভয় থাকে। এলাকায় বিদ্যুৎ এলে এ সমস্যাটুকু থাকত না।

অপর বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, গত আট বছর তারা বিদ্যুৎ কার্যালয়ে গিয়ে বিদ্যুতের জন্য ধরণা দিচ্ছেন। আজ দেবে কাল দেবে করে এখনো বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি।

মধ্যসোনইছড়ি ত্রিপুরাপাড়ার বাসিন্দা কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, আগে কখনো তাঁরা আবেদন করেননি। গত এক মাস আগে তাঁরা একটি আবেদন করেছেন। এবার বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা।

আটটি ত্রিপুরাপাড়ার তিনটি ফৌজদারহাট বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয়ের অধীন। বাকী পাঁচটি ত্রিপুরাপাড়া ও পশ্চিম মুরাদপুর গ্রামটি বাড়বকুণ্ড বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয়ের অধীন।

ফৌজদারহাট বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল্ল্যাহ বলেন, মধ্যসোনাইছড়ি ত্রিপুরাপাড়ার আবেদনটি চলমান প্রকল্পে পাঠানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে হয়তো সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। অন্য দুটি পাড়ার লোকজন আবেদন করলে তাদের কর্মকর্তারা পাড়াগুলো জরিপ করবেন। সুযোগ থাকলে দ্রুত সংযোগ দেওয়া হবে।

বাড়বকুণ্ড বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ ফিরোজ কবীর বলেন, সীতাকুণ্ডের সমতল ভূমিতে কোনো গ্রাম বিদ্যুৎবিহীন থাকার কথা নয়। কীভাবে গ্রামটি বিদ্যুতের আওতার বাইরে রয়েছে তা খতিয়ে দেখব।

স্থানীয়দের পুনরায় দরখাস্ত দেওয়ার আহবানের পরামর্শ দিয়ে এ নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আবেদন পেলে দ্রুত ওই গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। এ ছাড়া অন্য পাঁচটি ত্রিপুরাপাড়ায় বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে। তবে সংযোগ লাইন হবে ভূমির মালিকের নামে। ভূমির মালিক বিদ্যুতের আবেদন করলে তা যাচাই-বাছাই করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।