Thank you for trying Sticky AMP!!

এখনো কাঁদছেন স্বজনেরা

রেজাউল করিমের মেয়ে সাবা এখনো জানে না তার বাবা আর নেই। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের সিটি গেইটের বাসায়। ছবি: জুয়েল শীল
>

• ২২ মাসের শিশুটি এখনো বাবা রেজাউল করিমকে খোঁজে
• পায়েল হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়নি।

২২ মাস বয়সী অবুঝ শিশুটি জানে না ওর বাবা নেই। এখনো সে বাবা রেজাউল করিমকে খোঁজে। ওর বাবার ঘাতক বাসচালককে গ্রেপ্তারই করতে পারেনি পুলিশ।

বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েলকে বাস থেকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়। এই মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলেও বিচার শুরু হয়নি।

ফুটপাত দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন বেকারি কর্মী আমান উল্লাহ। পেছন থেকে আসা একটি ট্রাক তাঁর ওপর উঠে যায়। তাঁকে টেনেহিঁচড়ে প্রায় ২০০ গজ পর্যন্ত নিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। চালক গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে গেছেন।

এই তিনটি ঘটনা ঘটেছে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে, চট্টগ্রামে। দেশজুড়ে আলোচিত ছিল ঘটনাগুলো। বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। এরপরও থামেনি সড়কে নৈরাজ্য। 

চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যা
চট্টগ্রামে চলন্ত বাস থেকে ফেলে রেজাউল করিমকে হত্যার প্রায় দুই মাস হতে চলল, কিন্তু চালক সাদেকুল আলমকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। রেজাউলের ২২ মাস বয়সী একমাত্র মেয়ে সাবা ওয়ালিয়া করিম এখনো ওর বাবাকে খোঁজে। সে জানে না, বাবা আর ফিরে আসবে না।

গতকাল রোববার নগরের সিটি গেট এলাকায় কালীহাটের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাবা রেজাউলের ছবি নিয়ে বসে আছে সাবা। ওর হাতে চকলেট। ছবিতে থাকা বাবার মুখে খাইয়ে দিচ্ছে। চুমু দিচ্ছে মুখে। আর কিছুক্ষণ পরপর বলছে,‘বাবা আসো না। ঘুম থেকে ওঠো না।’

সাবা যখন বারবার বাবাকে ডাকছে, তখন চোখ বেয়ে পানি ঝরছে মা রাজিয়া সুলতানার। চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি রেজাউলের বাবা অলিউল্লাহও। তিনি বলেন, ‘নাতনিকে আর কত দিন সান্ত্বনা দিয়ে রাখব। একদিন আসল সত্য তাকে বলতে হবে।’

গত ২৭ আগস্ট বেলা ১টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরের প্রবেশমুখ সিটি গেটের পাশে গ্ল্যাক্সো কার্যালয়ের সামনে রেজাউল করিমকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর থেকে সহকারী মানিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি আদালতে স্বীকার করে বলেন, চালকের সঙ্গে ঝগড়ার পর রেজাউলকে বাস থেকে ফেলে হত্যা করা হয়। পরে চালক দিদারকেও গ্রেপ্তার করা হয়। 

বাস থেকে নদীতে ফেলে হত্যা
তিন মাস আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইদুল রহমান পায়েলকে বাস থেকে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। এখনো এই মামলার বিচার শুরু হয়নি। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ করার দাবি জানাচ্ছেন।

গতকাল নগরের হালিশহরে পায়েলের বাসায় গিয়ে বাবা গোলাম মাওলা ও বোন শামীমা আক্তারকে কাঁদতে দেখা যায়। বসার ঘরে পায়েলের ছবিতে তাঁরা হাত বোলাচ্ছেন। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা কোহিনুর বেগম। তিনি এখন নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আমানউল্লাহ ও সাইদুর রহমান

গত ২১ জুলাই রাত সোয়া ১০টার দিকে হানিফ পরিবহনের বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন পায়েল। ভোর চারটার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাস যানজটে আটকা পড়ে। এ সময় পায়েল বাস থেকে নেমে পড়েন। হঠাৎ বাস ছেড়ে দিলে পায়েল দৌড়ে বাসে ওঠার চেষ্টা করলে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। এ সময় বাসের চালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারী ঝামেলা এড়াতে পায়েলকে সেতুর ওপর থেকে নদীতে ফেলে দেন। বাসের সুপারভাইজার জনি ও চালক জামাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গজারিয়া থানার পুলিশ ৩ অক্টোবর ওই তিনজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় মুন্সিগঞ্জ আদালতে। তিনজনই কারাগারে। 

প্রতিবাদ করায় গাড়িচাপা
ফুটপাত দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন বেকারি কর্মী আমান উল্লাহ। পেছন থেকে আসা একটি ট্রাক তাঁকে ধাক্কা দেওয়ার উপক্রম করে। সরে গিয়ে প্রাণে বাঁচেন তিনি। কারণ জানতে চাইলে ট্রাকচালক উল্টো গালাগাল করেন। আশপাশের লোকজনকে ডাক দিলে চালক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে আমানের ওপর ট্রাক তুলে দিলে গাড়ির বাম্পার ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন তিনি। এভাবে টেনেহিঁচড়ে প্রায় ২০০ গজ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বাম্পার ছেড়ে দিতে বাধ্য হন আমান। তাঁর শরীরের ওপরই গাড়ি তুলে দেন চালক। প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল আরোহীরা ধাওয়া দিয়ে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে চালক একরাম খানকে ধরে পুলিশে দেন।

গত ২২ জুলাই রাত সাড়ে নয়টার দিকে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।