Thank you for trying Sticky AMP!!

এখন দরকার রোগীর আস্থা অর্জন

প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘গ্যাস্ট্রোলিভারের আধুনিক চিকিৎসায় বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। ছবি: প্রথম আলো

পরিপাকতন্ত্র ও যকৃতের রোগ শনাক্ত এবং তা নিরাময়ের জন্য অস্ত্রোপচারে দেশে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। লিভার প্রতিস্থাপনসহ জটিল অস্ত্রোপচার করছেন দেশের চিকিৎসকেরা। তবে রোগীদের আরও আস্থা অর্জনের জন্য সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করে যেতে হবে। ‘গ্যাস্ট্রোলিভারের আধুনিক চিকিৎসায় বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন।

গতকাল শনিবার সকালে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালের সহযোগিতায় এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, দেশের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে রোগীরা ভালোভাবে জানে না। আবার কোন রোগের চিকিৎসা কোথায় করাতে হবে, তা–ও অনেক সময় বুঝতে পারেন না অনেকে। এ কারণে অনেক রোগীই এখন বিদেশমুখী। এই প্রবণতা ঠেকাতে এবং সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের ইতিবাচক আচরণ বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তাঁরা।

গত কয়েক বছরে দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বলেন, এ জাতির অগ্রগতির প্রধানতম বাধা স্বাস্থ্যসমস্যা। দূষিত পানির কারণে আগে শুধু কলেরাতেই বহু মানুষ মারা যেত। সুপেয় পানি ও আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে অনেক রোগই এখন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে।

বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে সরকারের নানা কর্মসূচি চলমান রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক সানিয়া তহমিনা বলেন, ২০০৪ সালে দেশের ৮০ শতাংশ শিশু ক্রিমিতে আক্রান্ত ছিল। সরকারিভাবে বছরে দুবার কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর ফলে ২০১৪ সালে সে হার দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশে। গ্যাস্ট্রোলিভার–সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় দেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়েছে।

ইমপালস হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহীর আল-আমিন বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সমন্বয়ে তাঁদের হাসপাতালে গ্যাস্ট্রোলিভার সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রোগীদের আস্থা অর্জনের দিকেও তাঁরা গুরুত্ব দেন।

বারডেম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড হেপাটোলজি বিভাগের অনারারি সিনিয়র কনসালট্যান্ট মো. আনিছুর রহমান বলেন, খাদ্যাভ্যাসের কারণে দেশে ফ্যাটি লিভার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় ও অতিরিক্ত ভাত না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবার দিকেও নজর দিতে বলেন তিনি।

দেশে চিকিৎসকের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাসান মাসুদ বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট আছেন মাত্র ২০০ জন। আবার তাঁদের সবাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসকদের হাতে–কলমে শেখার সুযোগও কম।

প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘গ্যাস্ট্রোলিভারের আধুনিক চিকিৎসায় বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। ছবি: প্রথম আলো

দেশে এখন এন্ডোসকপির মাধ্যমে রোগ শনাক্তকরণের পাশাপাশি চিকিৎসাও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ইমপালস হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলিভার সেন্টারের প্রধান এ কিউ এম মোহসেন। তিনি বলেন, ইমপালসে বেশ কিছুদিন ধরে ক্যাপসুল এন্ডোসকপি করা হচ্ছে। এখানে বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

লিভার প্রতিস্থাপন করতে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে উল্লেখ করে বিএসএমএমইউর হেপাটো–বিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন মো. মোহসেন চৌধুরী বলেন, লিভার ক্যানসার নিয়ে দেশে আশাব্যঞ্জক কাজ হচ্ছে। সফলতা ধরে রাখাতে এখন এ খাতে দক্ষ চিকিৎসক দরকার। সফল অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীর কাউন্সেলিং খুব দরকার বলে জানান তিনি।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব মো. নাসির উদ্দিন জানান, রক্ত দিতে গিয়ে তাঁর হেপাটাইটিস বি ধরা পড়ে। তারপর থেকে ধারাবাহিক চিকিৎসায় এখন সুস্থ আছেন।

বৈঠকে ইমপালসসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন কুষ্টিয়ার বাসিন্দা আনিস আহমেদ।

ইমপালস হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলিভার সেন্টারের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক মো. মহসিন কবির বলেন, দেশে বায়োলজিক্যাল ও ইমেজিং—দুই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ অনেক বেড়েছে। এখন এখানে ভাইরাসের ডিএনএ শনাক্ত করা যাচ্ছে।

টিকা কর্মসূচি ও সচেতনতার কারণে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লিমিটেডের পরামর্শক মো. শামসুল আরিফীন। তিনি বলেন, জন্ডিস নিয়ে ঝাড়ফুঁক, হলুদ-লবণ ছাড়া রান্নাসহ নানা ধরনের কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এতে লিভারের আরও ক্ষতি হয়। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।

কিশোরীদের স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বর্ণ কিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ফারজানা ব্রাউনিয়া।

আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক মো. আবদুল ওহাব খান বলেন, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে নতুন উদ্ভাবিত চিকিৎসাপদ্ধতি তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশে শুরু হয়ে যায়। তবে চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে আরও কাজ করা দরকার।