এবার নিখোঁজ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব
২০-দলীয় ঐক্যজোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান তিন দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ জন্য সরকারকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এদিকে গত নয় দিনে নিখোঁজ আরও চারজনের মধ্যে তিনজনের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। তাঁরা হলেন বিএনপির নেতা ও ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত, ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশে বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ কুমার রায় এবং কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইশরাক আহমেদ। ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
২৩ আগস্ট নিখোঁজ আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা শামীম আহমেদ ফিরে এলেও কারা তাঁকে ধরে নিয়ে গেল, সে রহস্য এখনো পরিষ্কার হয়নি। এ নিয়ে ব্যাংকপাড়ায় রয়েছে নানা কানাঘুষা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘শামীমের অপহরণের ঘটনা ব্যাংকিং খাতে খুব বাজে একটা বার্তা দিয়ে গেল।’
কল্যাণ পার্টির মহাসচিব যেভাবে নিখোঁজ
কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুরের সঙ্গে ওই রাতে একসঙ্গে চা পান
শেষে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু ও বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া। গোলাম মোস্তফা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নয়াপল্টনে একই ভবনে কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ ন্যাপের কার্যালয়। গত রোববার রাত সাড়ে আটটা থেকে পৌনে নয়টার মধ্যে তিনি (মোস্তফা) ও আমিনুর কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার জন্য নিচে নামেন। প্রায়ই তাঁরা বাসায় যাওয়ার সময় একসঙ্গে নিচে নেমে চা পান করে যে যাঁর বাসার পথ ধরেন। সেদিনও চা পান করে আমিনুর আমিনবাজারে বাসার পথে রওনা হন। এরপর থেকেই তাঁর আর কোনো খোঁজ নেই।
গোলাম মোস্তফা বলেন, পরদিন ছিল ২০-দলীয় ঐক্যজোটের দলগুলোর মহাসচিবদের বৈঠক। কিন্তু আমিনুর সেখানেও অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর ফোনও বন্ধ ছিল। হয়তো ব্যক্তিগত কোনো কারণে ফোন বন্ধ রেখেছেন ভেবে কেউ খোঁজ নেয়নি। পরে কল্যাণ পার্টির সভাপতিসহ অন্যরাও খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। জানা যায় তিনি বাসায় যাননি, তাঁর পরিবারের কেউ তাঁর কোনো খোঁজ জানেন না। এরপরই সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত আমিনুর ভাইয়ের সঙ্গে আমিনবাজার এলাকায় থাকেন, রাজনীতির পাশাপাশি পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করেন তিনি।
তবে গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত এ বিষয়ে পল্টন থানায় কোনো জিডি হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রতিবাদ-বিবৃতি
এদিকে আমিনুরের সন্ধান দাবি করে গতকাল বুধবার বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে কল্যাণ পার্টি। দলটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ ২০ দলের নেতারা অংশ নেন।
মানববন্ধনে মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমিনুর রহমানের মতো একজন নিরেট ভদ্র নেতা যেখানে গুম হয়ে যায়, সেখানে দেশের ভবিষ্যৎ কী?
এদিকে এ ঘটনায় এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখলকারীরাই কল্যাণ পার্টির মহাসচিবকে গুম করেছে। ওত পেতে থাকা গুপ্তবাহিনী তাঁকে কোথায় উঠিয়ে নিয়ে গেছে, তা কেউ জানে না।
পৃথক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাধীন দেশে নাগরিকেরা হারিয়ে যাবে, এ জন্য লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। যারা জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়, তারাই গুম-খুন-অপহরণকে রাষ্ট্রনীতি হিসেবে গ্রহণ করে।’
অনিরুদ্ধকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
বাংলাদেশে বেলারুশের অনারারি কনসাল ও আরএমএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিরুদ্ধকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ওই সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, একদিকে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রচারণা, আরেক দিকে সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি দখল, উপাসনালয়ে হামলা, এমনকি দেশত্যাগের হুমকির পরিস্থিতির মধ্যে এই অপহরণের ঘটনা সংখ্যালঘুদের নিদারুণ উদ্বিগ্ন করেছে।