Thank you for trying Sticky AMP!!

এবার মন্ত্রী হতে চান শতাধিক সাংসদ

>
  • নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন কাল সোমবার
  • নতুনেরা যুক্ত হতে, পুরোনোরা পদ রাখতে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন
  • কর্মী-সমর্থকেরা কর্মসূচিতে নেতাকে মন্ত্রী করার দাবি জানাচ্ছেন
  • অনেকে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমেও সক্রিয় আছেন

টানা তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন আগামীকাল সোমবার। মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, সদস্যসংখ্যা কত হবে—এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের নেতাদের সবার উত্তর, ‘নেত্রী জানেন।’ তারপরও নতুনেরা যুক্ত হতে আর পুরোনোরা পদ ধরে রাখতে ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। আর তাঁদের কর্মী-সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা এলাকায় মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে নিজ নিজ নেতাকে মন্ত্রী করার দাবি জানাচ্ছেন। অনেকে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমেও সক্রিয় আছেন।

এবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসন পেয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের শতাধিক সাংসদ মন্ত্রী হতে চান। ১৪-দলীয় জোটের সাংসদেরাও চেষ্টায় আছেন।

মহাজোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল জাতীয় পার্টি ২২টি আসন পেয়েছে। দলটির সাংসদের বেশির ভাগই সরকারে যেতে চান। যদিও প্রধান এইচ এম এরশাদ ঘোষণা দিয়েছেন, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হবে, সরকারে যাবে না। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে ও ​বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত কাউকে কাউকে মন্ত্রী করা হতে পারে, এমন প্রস্তাবের কথাও শোনা যাচ্ছে।

নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে চান বা এলাকাবাসীর দাবি হিসেবে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তত ১০০ জনের নাম এসেছে। এর বাইরে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা তো আছেনই। বর্তমান মন্ত্রীর বড় অংশ আগামী ম​ন্ত্রিসভায়ও স্থান পাচ্ছেন বলে আলোচনা আছে।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, নির্বাচনের পর দলের নেতা, পেশাজীবী, সরকারি কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় নতুন সরকার নিয়ে আকারে-ইঙ্গিতে অনেকেই নিজেদের মত দিয়েছেন। পরিবারের সদস্য, জ্যেষ্ঠ দু-একজন নেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, আজ রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী নতুন মন্ত্রীদের শপথের জন্য ফোন করা হবে। গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কর্মতৎপরতা ছিল।

এবার বিপুল সংখ্যক সাংসদ মন্ত্রী হতে চাইছেন এবং তাঁদের অনুসারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। মন্ত্রী করার দাবিতে অনেকে শুভানুধ্যায়ীদের দিয়ে নানামুখী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটাকে অনেকটা ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নেতা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, অনেকে জীবনে প্রথম সাংসদ হয়েছেন, সংসদের কার্যপ্রণালি সম্পর্কেই কোনো ধারণা নেই। কিন্তু এরই মধ্যে মন্ত্রী হতে তৎপর হয়েছেন।

বিভিন্ন জেলায় মন্ত্রীর দাবিতে যেসব কর্মসূচি হচ্ছে, এর বেশির ভাগই সাংসদদের নির্দেশনায়, পৃষ্ঠপোষকতায় হচ্ছে। দু-একটা ঘটনা হয়তো অতি উৎসাহ থেকে হচ্ছে।

মন্ত্রী চেয়ে নানাভাবে প্রচার ও কর্মসূচি

গত বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত সাংসদেরা শপথ নেন। এরপর তাঁরা আর ঢাকা ছাড়ছেন না। ​অনেকেই মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে গণভবন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাসায় দৌড়ঝাঁপ করছেন। একই সঙ্গে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কর্মী-সমর্থকেরা সোচ্চার হয়েছেন নেতাকে মন্ত্রী করার দাবিতে। অনেকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ শিরোনামও হয়েছেন।

এমন সাংসদদের মধ্যে আছেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, এ বি তাজুল ইসলাম, আ স ম ফিরোজ, আব্দুস শহীদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, মইন উদ্দীন খান বাদল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, নূর মোহাম্মদ, শিরীন আক্তার, ফজলে করিম চৌধুরী, ইমরান আহমদ, মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, হাবিবে মিল্লাত, শ ম রেজাউল করিম, মহিবুল হাসান চৌধুরী, জাহিদ আহসান রাসেল, এনামুল হক শামীম, অসীম কুমার উকিল, কাজী নাবিল আহমেদ প্রমুখ। এর বাইরে ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান ও অর্থমন্ত্রীর ভাই এ কে আবদুল মোমেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদের নাম আলোচনায় আছে, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ফরাসউদ্দিন অবশ্য সাংসদ নন। তাঁকে টেকনোক্র্যাট হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আছে। টেকনোক্র্যাট কোটায় আরও কেউ কেউ মন্ত্রী হতে পারেন।

গতকাল বিভিন্ন জেলায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদদের মন্ত্রী করার দাবিতে কর্মসূচি পালন করা হয়। এর মধ্যে নড়াইল-২ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ হওয়া জাতীয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে মন্ত্রী করার দাবিতে গতকাল নড়াইল জেলা প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

পঞ্চগড়-১ আসনের মজাহারুল হক প্রধানকে মন্ত্রী করতে গতকাল পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে ‘পেশাজীবী ও সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি জানানো হয়। মজাহারুল হক এর আগে ২০০৮ সালেও সাংসদ হয়েছিলেন।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাংসদ জাকির হোসেনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা ছাত্রলীগ।

পটুয়াখালী-৪ আসনের মহিব্বুর রহমানকে মন্ত্রী করার দাবিতে ‘সচেতন এলাকাবাসীর’ ব্যানারে বৃহস্পতিবার এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে। তিনি এবারই প্রথম সাংসদ হয়েছেন। পটুয়াখালী-১ আসনের শাজাহান মিয়াকেও মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়ে এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে। তিনি ২০০৮ সালে সাংসদ হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন।

গতকাল সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাংসদ এস এম জগলুল হায়দারকে মন্ত্রী করার দাবি এসেছে। জগলুল হায়দার ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথম সাংসদ হন। এবার দ্বিতীয়বারের মতো সাংসদ হলেন।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ আ ফ ম রুহুল হককে মন্ত্রী করার দাবিতে ওই জেলায় সংবাদ সম্মেলন করে ‘সম্মিলিত নাগরিক সমাজ’। ২০০৮ সালে প্রথম সাংসদ হয়েই স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন রুহুল হক। পরের মেয়াদে আর তাঁকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।

বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ৫২ জন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। দলীয় মনোনয়ন পান বর্তমান সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। এবার তাঁকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে বৃহস্পতিবার বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ‘পেশাজীবীরা’।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় ভোটার ও সমর্থকদের মন্ত্রী চেয়ে প্রচারণা নতুন একধরনের গণতান্ত্রিক চর্চা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে এই প্রচার কতটা কাজে দেবে, সেটা বলা মুশকিল। মন্ত্রী নিয়োগের জন্য নেতাদের যেসব গুণ প্রধানমন্ত্রী আমলে নেবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

যেসব বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে

দলীয় সভাপতি কোন নেতার সঙ্গে কেমন আচরণ করছেন, কার সম্পর্কে কী মনোভাব প্রকাশ করছেন, কোন এলাকার কথা গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন—এসব বিষয়কেও মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া না-পাওয়ার ইঙ্গিত হিসেবে নিচ্ছেন অনেক নেতা।

গত কয়েক দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নানা কর্মসূচিতে দেখা-সাক্ষাৎ হওয়া একাধিক নেতা বলছেন, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে কিছু বিষয় গুরুত্ব পাবে। এগুলো হচ্ছে: যেসব জেলা থেকে নিকট অতীতে মন্ত্রী করা হয়নি, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষ হাতে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করা নেতা, উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন এমন ব্যক্তি, স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন, জোট-মহাজোট ও দলীয় কৌশলের কারণে বঞ্চিত, টানা তিন-চারবার জয়ী সাংসদ ও তরুণ নেতৃত্ব।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ এবার শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। কোনো জেলায় মন্ত্রী থাকলে তুলনামূলকভাবে বেশি উন্নয়ন হয় বলে একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে। তাই যেসব জেলায় নিকট অতীতে মন্ত্রী ছিল না, সেসব জেলাকে এবার বিবেচনায় রাখা হতে পারে।

অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা আছেন যাঁরা অনেক দিন ধরে মন্ত্রী। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কারণে আমলাদের ওপর তাঁদের একধরনের কর্তৃত্ব আছে। এমন পুরোনো মন্ত্রীরাও গুরুত্ব পাবেন।

নানা কারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। তাঁদের কাউকে মন্ত্রিসভায়, কাউকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বা বিশেষ সহকারী করার সম্ভাবনা আছে বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এলাকাভিত্তিক মন্ত্রী চেয়ে যেসব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেটা আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এটা খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য জনগণ আওয়ামী লীগকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। ত্যাগী, স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন এবং দক্ষ ব্যক্তিরাই সেটা করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভায় এর প্রতিফলন থাকবে বলে তিনি মনে করেন।