Thank you for trying Sticky AMP!!

এ আমার দেশের সম্মান, ডি-লিট নেওয়ার পর আবেগ আপ্লুত শেখ হাসিনা

পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানজনক ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানজনক ডি-লিট ডিগ্রি নেওয়ার পর আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ সম্মান আমার নয়, আমার দেশের সম্মান।’

আজ শনিবার শেখ হাসিনার হাতে এই ডি-লিট সম্মান তুলে দেওয়ার কথা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে না পারায় সম্মানজনক এই ডি-লিট ডিগ্রি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী। স্থানীয় সময় বেলা একটায় তাঁকে এই ডি-লিট ডিগ্রি দেওয়া হয়।

এই উৎসবে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিল বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ বাংলাদেশের ১৪০ জনের একটি প্রতিনিধিদল।

ডি-লিট গ্রহণের পর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে ডি-লিট সম্মান প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি নজরুলের নাম দেখে আর সেই আমন্ত্রণ ফেরাতে পারিনি। ছুটে এসেছি এখানে। বিশ্বের আরও বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে ডি-লিট দেওয়ার আমন্ত্রণ জানালেও আমি সেসব আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারিনি। ছুটে এসেছি আমার দেশের জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তো আমার এ সম্মান আমার নয়, আমার দেশের সম্মান। এই সম্মান পেয়ে আমি গর্বিত হয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নজরুল আমাদের চেতনায় সোনার ফসল ফলিয়ে গেছেন। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন কবি নজরুল। ছিলেন কবি, সাহিত্যিক, লেখক, নাট্যকার, গীতিকার, আবৃত্তিকার, সাংবাদিক, সৈনিক, সংগীতশিল্পীসহ আরও কত কী? নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। এক সংগ্রামী জীবনে খেটেছেন জেল; নেমেছেন অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে পথে। উজ্জীবিত করেছেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনাকে। তাই তো তিনি হিন্দু আর মুসলমানদের নিয়ে কবিতা লিখেছেন, গান বেঁধেছেন। আন্দোলন করে কারাগারে গিয়েছেন। আবার যুদ্ধের ময়দানে সৈনিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘তাই এত বড় এক প্রতিভাধরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পেরে আমি ধন্য হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘কর্মক্ষেত্রেই শুধু নয়, সর্বক্ষেত্রে তোমাদের মানবিক মূল্যবোধকে আঁকড়ে ধরে দেশসেবায় এগোতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বাংলা ভাগ হয়েছে। আমি বলি, রবীন্দ্র-নজরুল ভাগ হননি। রবীন্দ্র-নজরুল দুই বাংলার সম্পদ।’

শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘আমার পিতা-মাতাসহ আমাদের পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে হত্যা করা হয়েছিল। তখন আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানা জার্মানিতে ছিলাম। আমাদের খবর পেয়ে সেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাই ইন্দিরা গান্ধীর কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আমরা চাই এই সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হোক।’
শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ থেকে দেশকে মুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি এ ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশের সহায়তা কামনা করেন।

বিদ্রোহী কবির জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপনে জন্মভিটা বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে শুরু হয় নজরুল মেলা। আজ সকালেই কলকাতা থেকে আসানসোল এসে শেখ হাসিনা বিশেষ সমাবর্তন উৎসবে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা ১৯ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির আমলে নজরুল জন্মশতবর্ষ উৎসবে যোগ দিতে বর্ধমানের আসানসোলের চুরুলিয়ায় গিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের ২৮ জানুয়ারি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ প্রদান করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের সফরে গতকাল শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসেন। গতকাল কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। পরে বিশেষ হেলিকপ্টারে চলে যান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বীরভূমের শান্তিনিকেতনে। সেখানে তিনি প্রথমে যোগ দেন বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসবে। এরপর শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূল্যে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবনে’ যান। শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ভবন। বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত ২৫ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এই ভবন। বাংলাদেশ সরকার আরও ১০ কোটি রুপি দিয়েছে এই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলেই চলে যান কলকাতায়। বিকেলে তিনি কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যান। ঘুরে দেখেন ঠাকুরবাড়ি। সঙ্গে ছিলেন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গের নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফরহাদ হাকিম, পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রমুখ।

গতকাল সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা কলকাতার শিল্পপতিদের সঙ্গে দেখা করেন। রাতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির রাজভবনে দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন। আজ রাতেই দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।