Thank you for trying Sticky AMP!!

ওরা অঙ্ক, জ্যামিতি জানে

গাঙশালিক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর পাড়ে l ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান

নদীর খাড়া পাড়ের দেয়ালে পাশাপাশি কয়েকটি গাঙশালিকের বাসা। নিজেরাই গর্ত খুঁড়ে সুড়ঙ্গ-বাসা করে ডিম পেড়েছিল। সেই বাসায় এখন গড়ে ছয়টি করে ছোট ছানা। মা-বাবারা তাই দল বেঁধে ছানাদের খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত। এরা ডিম পাড়ে ছয়-সাতটি করে। মেয়ে ও পুরুষ পাখি পালা করে ডিমে তা দেয়। বাসা করার সময়ও দুজনে পালা করে গর্ত খোঁড়ে। এরা অঙ্ক ও জ্যামিতিতে পাকা। মৃত্তিকাবিজ্ঞানীও বলা যায়। বাসা করে মাটি পরীক্ষার পর মাপজোখ করে।

গাঙশালিকেরা নদীর খাড়া পাড়ে বা পুল-কালভার্টের তলায় এমন জায়গায় বাসা বাঁধে, যেখানে শিয়াল-খাটাশ-বনবিড়ালেরা চড়তে গেলেই পিছলে পড়বে। দুষ্টু ছেলেমেয়ে ও বাজ-ইগলেরা ডিম-ছানা নাগালে পাবে না। বৃষ্টির পানি খাড়া পাড় বেয়ে নামার সময় সহজে সুড়ঙ্গের ভেতর ঢুকবে না। বাসা শেষ করতে সময় লাগে ছয় থেকে নয় দিন। কয়েক জোড়া পাখি মিলে কলোনি বাসা করার আগে জুতসই জায়গাটা নির্বাচন করে। তারপরও বাসার মুখ থাকে ছোট। গভীরতা দুই থেকে চার ফুট ও একটু ডানে বা বামে ঘুরে গিয়ে থাকে ডিম-বাচ্চার চেম্বার। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৫ থেকে ২১ দিনে। ছানারা উড়তে শেখে ১৯ থেকে ২৪ দিনে।

ছয়-সাত ফুট লম্বা একটি দাঁড়াশ সাপ পাড়ের কিনারা ধরে এগিয়ে বাসাগুলোর নিচে এসে চেষ্টা করছে খাড়া পাড়-দেয়াল বেয়ে উঠে বাসাগুলোর ভেতরে মাথা সেঁধিয়ে দিয়ে কচি কচি ছানাদের গাপুস করবে। বারবার চেষ্টা করে ও বারবার গড়িয়ে পড়েও একসময় সে একটি বাসায় মাথা ঢুকিয়ে দিতে পারল বটে, তবে নিচের দিকে ঝুলে রইল বাকি প্রায় পাঁচ ফুট। এ সময় খাবার মুখে ফিরে শালিকেরা যেই না দেখল সাপটিকে, অমনি ভয়ানক শোরগোল আরম্ভ করল। সাহসী একটি শালিক গিয়ে সাপটির দেহে মারল ঠোকর ও নখের আঁচড়। ঘাবড়ে গিয়ে সাপটি মাথা বের করতেই পড়ল ঝপাৎ করে নিচে।

বুদ্ধিমান গাঙশালিকদের বেশি দেখা যায় ছোট-বড় নদী এলাকার আশপাশে। বলা যায়, নদীকেন্দ্রিক জীবন এদের। দলে চলে। গলার স্বর অনেকটাই ভাতশালিকের (Common Myna) মতো। তবে খুব মিষ্টি ও মোলায়েম শব্দে গলার ভেতরে এরা যেন জলতরঙ্গ বাজায়। মূল খাদ্য এদের ফল-পোকামাকড়-কীটপতঙ্গ ও নানান রকম শস্যদানা। নিয়মিত বালুস্নান করে, ধানগাছে জমে থাকা শিশিরে ডানা ঝাপটে মজা করে শিশির-স্নানও করে।

গাঙশালিক একনজরে নীলচে ধূসর পাখি। ডানার প্রান্ত ও লেজ কালো, লেজের অগ্রভাগ গোলাপি-সাদা। ঘন-কমলা রঙের চোখের পাশটার সঙ্গে একই রঙের ঠোঁটটা খুবই মানানসই। ঠোঁটের গোড়ায় আবার কপালমুখো ছোট একগুচ্ছ ঝুঁটি। ডানার প্রা‌ন্তে সাদা ছোপ। পা গোলাপি হলুদ। ইংরেজি নাম Bank Myna. বৈজ্ঞানিক নাম Acridotheres ginginianus. দৈর্ঘ্য ২১ সেমি। ওজন ৭২ গ্রাম।