Thank you for trying Sticky AMP!!

কংক্রিটের বস্তিতে পরিণত হবে কুয়াকাটা

কুয়াকাটা পৌরসভা কার্যালয়ের পাশে হোটেল ব্যবসার জন্য পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন আ. রহিম খান। রহিম বলেন, ২০১৬ সালের নভেম্বরে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদনের জন্য তিনি কুয়াকাটা ও পায়রা এলাকার কমিটির কাছে আবেদন করেন। ২০১৭ সালের জুনে পৌরসভার কাছেও ভবন নির্মাণের অনুমোদন চান। কিন্তু অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তারপর তিনি কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

কুয়াকাটার প্রবেশমুখে মহাসড়কের পাশে চারতলা ভবন নির্মাণ করছেন মো. হান্নান। তিনিও কমিটির কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অনুমতি পাননি। বেশ কিছুদিন অপেক্ষার পর ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।

কুয়াকাটা পৌর এলাকা, লতাচাপলি, গঙ্গামতী, কাউয়ারচর ও চরচাপলি এলাকায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ভবন বা স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শুধু পৌরসভার মধ্যে অনুমোদন ছাড়া ৪০টির মতো পাকা স্থাপনার নির্মাণ চলছে।

বরিশালের স্থপতি মিলন মন্ডল বলেন, একটি শহর গড়ে তোলার জন্য মহাপরিকল্পনা জরুরি। পর্যটকদের শহর হিসেবে বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, সড়কপথ, ট্রাফিক-ব্যবস্থা, চলাচলসহ সব বিষয় সাজানো-গোছানো থাকবে। কিন্তু যেভাবে যত্রতত্র স্থাপনা উঠছে, এতে ভবিষ্যতে কুয়াকাটা ‘কংক্রিটের’ বস্তিতে পরিণত হবে। এখনো সময় আছে, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কুয়াকাটাকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৯৮ সালে কুয়াকাটাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন থেকে এ অঞ্চলে হোটেল-মোটেল গড়ে ওঠে। শুরু হয় আবাসন ব্যবসা। তবে সবই ছিল অপরিকল্পিত। এ অবস্থায় সরকার কুয়াকাটায় পর্যটনশিল্পের বিকাশে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করাসহ অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কুয়াকাটা নিয়ে মহাপরিকল্পনা তৈরি করার জন্য ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ২০১০ সালের ১৯ মে পরামর্শক হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

২০১১ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কমিটি করা হয়। কমিটিতে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব করা হয়। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে কুয়াকাটা পৌর এলাকা, লতাচাপলি, গঙ্গামতী, কাউয়ারচর ও চরচাপলি মৌজাভুক্ত এলাকায় যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ এবং জমি ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও পায়রা এলাকার জন্য বরিশাল বিভাগের কমিশনারকে আহ্বায়ক ও পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব করে নয় সদস্যের পৃথক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি কোনো ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। বিজ্ঞপ্তিতে মহাপরিকল্পনার আওতায় থাকা এলাকায় দালান নির্মাণ, জমি ক্রয়-বিক্রয়সহ যাবতীয় বিষয়ে কমিটির অনুমতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সম্প্রতি কুয়াকাটায় গিয়ে দেখা যায়, অনেক জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণাধীন আছে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা কেউ মানছে না।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুয়াকাটা ও পায়রা এলাকার জন্য গঠিত কমিটি গত ১৭ আগস্ট কুয়াকাটায় ভবন নির্মাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১৫ অক্টোবর কুয়াকাটার মেয়রের কাছে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কুয়াকাটায় অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ কারণে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধভাবে নির্মিত/ নির্মিতব্য সব ভবনের একটি তালিকা করতে হবে।

কিন্তু প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও এ তালিকা এখনো করা যায়নি। এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র এবং কুয়াকাটা ও পায়রা এলাকার জন্য গঠিত কমিটির সদস্য মো. বারেক মোল্লা বলেন, তাঁরা চিঠি পেয়েছেন। অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি হচ্ছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কার্যক্রম না থাকায় যে যেভাবে পারছে অনুমতি ছাড়া পাকা ভবন নির্মাণ করছে।

কুয়াকাটা ও পায়রা এলাকার কমিটির সদস্যসচিব এবং পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরান্ড অলিভার গুডা বলেন, গত বছর ১০ ব্যক্তি ভবন নির্মাণের জন্য তাঁদের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। গত বছরের নভেম্বরের সভায় বিষয়টি তোলা হয়। কিন্তু দালানগুলোর নকশা স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশা ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী না থাকায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কুয়াকাটায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের তালিকা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তালিকা পেলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।