Thank you for trying Sticky AMP!!

কবিরহাটে ধর্ষণের শিকার সেই গৃহবধূ এলাকাছাড়া

>
  • ১৮ জানুয়ারি ধর্ষণের শিকার হন গৃহবধূ
  • হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন ২৮ জানুয়ারি
  • বাড়ি ফিরে দেখেন জড়িতরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন
  • থানায় বললেও আসামি করেনি পুলিশ
  • ভয়ে ৩ মার্চ শহরে পালিয়ে যান গৃহবধূ

কিছুদিন আগেও যে বাড়িটিতে ছিল শিশুদের হইহুল্লোড় ও গৃহস্থালির কাজ নিয়ে ব্যস্ততা; সেই বাড়িটিই এখন যেন বিরান ভূমি। ঘরের দরজায় ঝুলছে তালা। গোয়ালঘরে নেই গরু। হাঁস-মুরগির ঘরটি শূন্য। উঠানজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ঝরা পাতা। এ যেন গাছগাছালির নীরব অশ্রুধারা।

জনমানবশূন্য এই বাড়িটি গত ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় ধর্ষণের শিকার সেই গৃহবধূর (২৯)। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জেলা শহরে।

মঙ্গলবার সকালে জেলা শহরে এক আইনজীবীর কার্যালয়ে কথা হয় ওই গৃহবধূর সঙ্গে। কথা বলার মুহূর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, কিছুটা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফেরেন ২৮ জানুয়ারি। ফিরে দেখেন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত মুরাদুজ্জামান ওরফে মুরাদ, ইব্রাহিম, আজাদ ও জিয়াউল হক এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওই দিন থানায় গিয়ে এঁদের জড়িত থাকার কথা বললেও পুলিশ আসামি করেনি।

বাদীর স্বামীর অভিযোগ, যাঁদের আসামি করা হয়নি, তাঁদের মধ্যে মুরাদুজ্জামান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি, ইব্রাহিম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। এ ছাড়া আজাদ ও জিয়াউল হকও একই দলের কর্মী। অপর দিকে মুরাদুজ্জামানের শ্বশুর মোয়াজ্জেম হোসেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একই ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য।

গৃহবধূ বলেন, বাড়িতে যাওয়ার কয়েক দিনের মাথায় মুরাদের শ্বশুর মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে মোয়াজ্জেম মেম্বার তাঁর ননদের স্বামী আবুল বাসারকে বলেন, ‘ঘটনা যা হওয়ার হয়ে গেছে, এলাকায় বসে ঘটনাটি মীমাংসা করে ফেল, এটা নিয়ে আর অগ্রসর হওয়ার দরকার নেই। পরে বিপদ আরও বাড়বে।’ এসব বিষয় নিয়ে ভয়ভীতি কাজ করার পর গত ৩ মার্চ জেলা শহরে পালিয়ে আসেন।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্ত্রীর ওপর নির্যাতনের ঘটনার ২৮ দিন আগে একটি মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে কবিরহাট পুলিশ। যে রাতে পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে, ওই রাতে পুলিশের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে যান স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মুরাদুজ্জামান ওরফে মুরাদ। তখন মুরাদ তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘বিএনপি করতা তো, কয়দিন জেল খেটে আস।’

স্বামী বলেন, এরপর পুলিশের সঙ্গে হেঁটে অল্প সামনে যেতেই দেখেন যুবলীগ নেতা জাকের হোসেন ওরফে জহিরকে। ওই স্থানে পুলিশ তাঁকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই তাঁকে জেলে পাঠিয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু জাকির ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁর সৎভাই আবদুর রব হোসেন ওরফে মান্না (২১), মামাতো বোনের স্বামী মো. সেলিম (২৫) ও দূরসম্পর্কের মামা হারুন অর রশিদকে (৩০) জড়িয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

মামলায় আসামিদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কবিরহাট থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছান বুধবার বিকেলে বলেন, বাদীর অভিযোগ ঠিক নয়, তিনি ঘটনার পর একজনকে চিনেছেন বলে জানিয়েছেন। সে অনুযায়ী তিনি যে এজাহার দিয়েছেন, তা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে।