Thank you for trying Sticky AMP!!

কয়লার অবৈধ কারবারে বিপন্ন লালাখাল

সিলেটের জৈন্তাপুরে লালাখালের উত্সমুখে কয়লার সন্ধানে এভাবেই খোঁড়াখুঁড়ি চলে। ছবিটি গত মঙ্গলবার তোলা ষ প্রথম আলো

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদীর লালাখালে কয়লার কারবারে ফের খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে যত্রতত্র নদী খুঁড়ে তীরেই চলছে কয়লার কেনাবেচা। প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত কয়লার কারবার চলায় লালাখালের পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার মুখে পড়েছে।
সারী সিলেটের অন্যতম সীমান্ত নদী। মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা এ নদীর উৎসমুখ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৩০০ নম্বর পিলার অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদীর একাধিক খালের মধ্যে লালাখাল পর্যটকদের আকর্ষণীয় একটি স্থান। উজানে ভারতের মেঘালয় পাহাড়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম জানান, স্বচ্ছ জলের ধারার জন্য সারী ‘নীল নদ’ হিসেবে পরিচিত। খোঁড়াখুঁড়িতে নদীর নির্মল পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পর্যটকদের নদী দেখার আকর্ষণও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে লালাখালের উৎসমুখের পুরো এলাকাজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। একেকটি গর্ত তিন থেকে পাঁচ ফুট গভীর করে খোঁড়া হয়। এভাবে একের পর এক গর্ত করায় পুরো এলাকা আর নদীর মতো দেখাচ্ছে না। ৪০০ ফুট এলাকায় চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়লা উত্তোলনের এ কাজে স্থানীয় কেউ জড়িত নন। কয়লার কারবারিরা বাইরে থেকে শ্রমিক এনে তাঁদের আবাসন সুবিধা দিয়ে মৌসুমভিত্তিক এ কাজ করান। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে কয়লার কারবার। তীর থেকে কোমরসমান পানিতে নেমে খোঁড়াখুঁড়ি চলায় কোনো কোনো জায়গায় নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে পড়ছে। কয়লার কারবারিরা সংঘবদ্ধ হওয়ায় এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন একাধিক গ্রামবাসী। কয়লা উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা কয়লার কারবারিদের মাধ্যমে মজুরি হিসেবে এ কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে লালাখাল থেকে সারীর উৎসমুখ পর্যন্ত কয়লা উত্তোলনে তাঁদের মণপ্রতি কয়লা কেনা হয়। কয়লা তোলার সরঞ্জামাদি কারবারিরা (মহাজন) দেওয়ায় নদীতীরে বসেই ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
কারবারিরা জানান, তাঁরা মূলত বালু-পাথরের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কয়লার এ কারবার মৌসুমভিত্তিক করছেন। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে বালু-পাথরের সঙ্গে নেমে আসে কয়লা শুষ্ক মৌসুমে নদীর তলায় আটকে থাকা অবস্থায় তোলা হয়। এ কয়লা তামাবিল স্থলবন্দর ও ইটভাটাগুলোতে বিক্রি করা হয়।
সরেজমিনে জানা গেছে, জৈন্তাপুরের হর্নি, কামরাংগী, পাখিবিল, লালাবস্তি, তুবাং, কালীঞ্জবাড়ি, গৌরীশঙ্কর গ্রামের ১৩ জন ব্যবসায়ী কয়লার কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কারবারিরা জানান, তাঁরা ট্রাকপ্রতি ১০০ টাকা উপজেলা প্রশাসনকে দিয়ে এ ব্যবসা করছেন।
লালাখালে নদীতীরে থাকা একটি ট্রাকে কয়লা বোঝাই দেওয়ার সময় দেখা যায়, যে ট্রাক দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে, সেটির কোনো নিবন্ধন নম্বরও নেই। স্থানীয় লোকজন জানান, নদীতীর খোঁড়া, উত্তোলন ও বিক্রি করার কাজে কোনো বৈধতা না থাকায় কয়লার কারবারিরা এ কৌশল অবলম্বন করেন। গত বছর শুষ্ক মৌসুমে লালাখালে কয়লার উত্তোলন শুরু হলে ১৪ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘সীমান্তে নদী খুঁড়ে কয়লার কারবার’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিবেশবিজ্ঞানী আইনুন নিশাত এ প্রবণতাকে নদী আইন লঙ্ঘনের একটি ভয়ংকর চিত্র উল্লেখ করে স্থানীয় প্রশাসনকে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে অবৈধ কয়লার কারবার বন্ধ করে দিয়েছিল।
যোগাযোগ করা হলে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজে ওই এলাকা ঘুরে দেখেছি, আবার শুরু হয়েছে কয়লার কারবার। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এবার একটু আগেই শুরু হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’