Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাকালে দেশে ফিরেছেন ৪৬ হাজার নারী কর্মী

করোনাকালে দেশে ফিরেছেন ৪৬ হাজারের বেশি প্রবাসী নারী কর্মী। তাঁদের অনেকে নির্যাতিত হয়ে, জেল খেটে ও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে ফিরেছেন। কেউ ফিরেছেন করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ হারিয়ে। শূন্য হাতে ফিরে আসা এসব নারী কর্মী চরম অসহায়ত্বের মধ্যে পড়েছেন।

এমন একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিরিন আক্তার। দুই বাচ্চা নিয়ে স্বামীর সংসার ছাড়েন। এর কয়েক বছর পর গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যান সৌদি আরবে। সাত মাস বেতন পাননি। উল্টো নির্যাতনের শিকার হন। একপর্যায়ে নিয়োগকর্তার (কফিল) বাসা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নেন। পরে গৃহকর্তার করা মামলায় শিরিন আক্তার ২ বছর ৪ মাস জেল খেটেছেন। গত ২৬ নভেম্বর শূন্য হাতে দেশে ফরেন। শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, দুটি বাচ্চা নিয়ে বিপদে আছেন। কারও সাহায্য পাচ্ছেন না।

বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা) ও বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র বলছে, প্রবাসে যাঁরা গৃহকর্মীর কাজ করেন, তাঁদের ওপর করোনাকালে কাজের চাপ ও নির্যাতন বেড়েছে। অনেক নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। অনেকে নিয়মিত খাবার পাননি। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। তাঁরা দেশে ফিরে আর্থিক ও মানসিকভাবে চাপে পড়েছেন।

গত এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন ২০ হাজার ২৩৮ জন নারী কর্মী। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ১০ হাজার ৪৬১ জন। কাতার থেকে ৪ হাজার ৩২৮ জন, ওমান থেকে ২ হাজার ৯১৬ জন, লেবানন থেকে ২ হাজার ৮০৩ জন ও জর্ডান থেকে ১ হাজার ৮৭৬ জন ফিরে এসেছেন।

ওমান থেকে ফেরা নরসিংদীর নূরজাহান বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ১৪ মাস পর দেশে ফিরে জমানো টাকা দিয়েই গরু-ছাগল কিনে আয়ের চেষ্টা করছেন। কারও কোনো সাহায্য পাননি।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দূতাবাসের আউটপাস (ভ্রমণের বৈধ অনুমতিপত্র) নিয়ে দেশে ফিরেছেন ৬৯৫ জন নারী। এরপর এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফিরেছেন ৪৬ হাজার ৪৫ নারী কর্মী। এর আগে ২০১৯ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ হাজার ১৬৪ জন নারী আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন।

অধিকাংশ নারী কর্মী ফিরছেন শূন্য হাতে। অনেকে কোনো কাজ পাচ্ছেন না। এসব নারী কর্মীর জন্য আলাদা পুনর্বাসন প্রকল্প নিতে হবে।
ফরিদা ইয়াসমিন, বমসার পরিচালক

নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে যাওয়া নারী কর্মীদের একটা বড় অংশ তালাক পেয়েছেন। দেশে ফিরে এখন কোনো কাজ পাচ্ছেন না। এসব নারীকে পুনর্বাসনের বিশেষ ঋণ চালু করেছে সরকার। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নারী শ্রমিক কেন্দ্র এ ক্ষেত্রে ঋণের জামিনদার হবেন।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের তথ্য বলছে, গত এপ্রিল থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন ২০ হাজার ২৩৮ জন নারী কর্মী। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ১০ হাজার ৪৬১ জন। কাতার থেকে ৪ হাজার ৩২৮ জন, ওমান থেকে ২ হাজার ৯১৬ জন, লেবানন থেকে ২ হাজার ৮০৩ জন ও জর্ডান থেকে ১ হাজার ৮৭৬ জন ফিরে এসেছেন।

বিদেশে যাওয়া নারী কর্মীদের একটা বড় অংশ তালাক পেয়েছেন। দেশে ফিরে এখন কোনো কাজ পাচ্ছেন না। এসব নারীকে পুনর্বাসনের বিশেষ ঋণ চালু করেছে সরকার। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সুমাইয়া ইসলাম, নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি বলছে, নিপীড়িত অনেক নারী মানসিক অসুস্থতা নিয়ে ফিরছেন। গত দুই বছরে মানসিক অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরা ৬৩ কর্মীকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ৫৮ জন নারী কর্মী।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কর্মকর্তারা বলছেন, বছর পাঁচেক ধরে প্রতিবছর এক লাখের বেশি নারী কর্মী বিদেশে যাচ্ছেন। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কর্মী যান সৌদি আরবে। নারী কর্মীর ওপর নিপীড়ন কমাতে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা চলছে।

বমসার পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, অধিকাংশ নারী কর্মী ফিরছেন শূন্য হাতে। অনেকে কোনো কাজ পাচ্ছেন না। এসব নারী কর্মীর জন্য আলাদা পুনর্বাসন প্রকল্প নিতে হবে।