Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনার মধ্যে ঈদ আনন্দ ছিনিয়ে নিল আম্পান

শ্যামনগর উপজেলার দাতিনাখালী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে একমাত্র ঘরটি পড়ে যায় আতিয়ার গাজীর। স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। ছবি: প্রথম আলো

‘আমাগো জন্যি বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে গে, তাই ঈদ নে কোনো আনন্দ নি। তিন মাস ধুরে আয়রোজগারহীন থ্যাকার পর বুধবারের আম্পান পথে বসিয়ে দেছে।’ ঈদ নিয়ে প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে হতাশাভরা কণ্ঠে এমনই উত্তর মেলে শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার জেলেখালী গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল মাজেদের কণ্ঠে।

আম্পানের তাণ্ডেবে বসতঘর হারিয়ে আবারও উপকূল রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আবদুল মাজেদ জানান, নদীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ রোববারও বসতভিটায় জোয়ার–ভাটা খেলেছে। তাঁর মতো গোটা উপকূলবাসীর কাছে ঈদ আর পাঁচটা দিনের মতোই হয়ে গেছে বলে দাবি সত্তরোর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধের।

প্রতিবেশী নাসিমা বিবি বলেন, ‘বড়রা নিজিগো সান্ত্বনা দিতি পারলিও বাচ্চা দুটোর জন্যি কষ্ট হচ্ছে। নতুন জামা–জুতো দূরি থাক, বাচ্চাগো মুখি এটটু গোস্ত–সেমাই দিতি পারলিও ভালো লাগদো। তবে ত্রাণের চালি ডালি বেঁচে থাকার পর ঈদ নে ভাবার আদিখ্যেতা আমাগো মানাচ্ছে না।’
শুধু আবদুল মাজেদ আর নাসিমা বিবি না। ঈদ নিয়ে এমন অভিব্যক্তি আম্পান আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া গাবুরা, পদ্মপুকুর, গোলাখালী, দাতিনাখালীসহ শ্যামনগরের দুর্গত এলাকার প্রায় প্রতিটি মানুষের।
জোয়ারের পানিতে বসতভিটা তলিয়ে থাকার এমন দুঃসময়ে ঈদকে ঘিরে কারও মধ্যে কোনো উন্মাদনা নেই। করোনার মধ্যেও ঈদকে ঘিরে অল্পস্বল্প প্রস্তুতি থাকলেও চার দিন আগের আম্পান তা–ও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অদ্যাবধি উপকূল রক্ষা বাঁধের ভাঙন আটকানো না যাওয়ায় ঈদ আনন্দের চেয়ে ভাঙনের বিস্তৃতি নিয়ে তারা ঢের বেশি উদ্বিগ্ন।

ভাটার সময় পানি আটকিয়ে বসবাস উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। শ্যামনগর উপজেলার দাতিনাখালী এলাকা। ছবি: প্রথম আলো

দাতিনাখালীর আমেনা বেগম বলেন, ‘রাত পোহালি ঈদ, কিন্তু এখনো বসতবাড়িতে জোয়ারের পানি ওঠানামা করতেছে। জীবন বাঁচানো নে যারা আতঙ্কে রয়েছে, ঈদ তাগো জন্যি না।’
‘পরিবার–পরিজন নে আশ্রয়কেন্দ্রে আর রাস্তায় থাকতি হচ্ছে’ উল্লেখ করে গোলাখালীর জামির আলী ও মোমেনা খাতুন জানান, আম্পানের তাণ্ডবে চিংড়িঘের ভেসে গেছে। করোনার কারণে তিনটে মাস কাজ করতে না পারায় টাকাপয়সাও হাতে নেই।

সরেজমিনে নেবুবুনিয়া, দাতিনাখালী, দুর্গাবাটি, গোলাখালীসহ কয়েকটি দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখার সময় স্থানীয়রা জানান, ‘আম্পান উপকূলবাসীর এবারের ঈদ ছিনিয়ে নিয়েছে।’ কর্মসংস্থান–সংকটের কারণে অধিকাংশ মানুষ মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজ করে ঈদ উদ্‌যাপনে এলাকায় ফিরতেই আম্পান তাণ্ডবের শিকার হয়েছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়ানির্ভর জনগোষ্ঠী দীর্ঘ সময় ধরে আয়রোজগারহীন। অর্থকষ্টের এমন দুর্দিনে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সর্বস্ব হারানো হাজারো পরিবারে তাই ঈদ নিয়ে আলাদা কোনো উচ্ছ্বাস নেই। বাঁধ মেরামতের পর বসতভিটাতে ফিরতে পারার আনন্দ ঈদের খুশিকে ছাড়িয়ে যাবে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।

ঘরটি ভেঙে পড়ায় এই পরিবারের লোকজনকে এখনো থাকতে হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে। শ্যামনগর উপজেলার দাতিনাখালী এলাকা। ছবি: প্রথম আলো

দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, এবারের ঈদ গোটা উপকূলবাসীর জন্য শুধু আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। নামাজ আদায় করেই সবাইকে বাঁধ মেরামতের কাজে ছুটতে হবে বলেও জানান তিনি। তবে সরকারি বরাদ্দের চাল, ডাল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদকে ঘিরে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সেমাই–চিনির ব্যবস্থা করা গেলেও ভালো হতো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, ঈদকে ঘিরে পৃথক কোনো বরাদ্দ নেই। তবে করোনা এবং আম্পানের কারণে সরকারিভাবে প্রাপ্ত বরাদ্দ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।