Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনার সঙ্গে আম্পান, ঈদ যেন 'নেই' হয়ে গেছে

ঝড়ে বিধ্বস্ত বাড়ি। ঢালচর দ্বীপ, চরফ্যাশন, ভোলা। ছবি: প্রথম আলো।

একে করোনার উপদ্রব, তার ওপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডব। এই দুই দুর্যোগে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলের বেশির ভাগ মানুষ এখন দিশেহারা। এ অঞ্চলের কারও এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, কারও ঘরে নেই খাবার। এ অবস্থায় তাঁদের কাছে এবারের ঈদ যেন ‘নেই’ হয়ে গেছে।

সারা দেশের মতো গত প্রায় দুই মাস ধরে বরিশালও করোনায় কাহিল। আজ রোববার পর্যন্ত এ বিভাগে এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৩৩৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন সাতজন। এর মধ্যে গত বুধবার ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান হানা দেয় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে।

বরিশাল সদর উপজেলার দক্ষিণ জাগুয়া গ্রামের সেলিম মৃধা বললেন, ‘বইন্নায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত। হ্যারপর জোয়ারের পানিতে ঘর-দুয়ার তলাইয়্যা সয়লাব। রান্ধনের মতো জাগাও নাই। মোগো কী আর ঈদ আছে?’

প্রশাসনের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় সাড়ে ৪৯ হাজার কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৭ হাজার ৮২৯টি এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ৮৪৬টি ঘর। সরকারি হিসাবে ঝড়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৮।

বরিশাল সদরের দক্ষিণ জাগুয়া গ্রামটি বিষখালী ও কালিজিরা নদীর মোহনায় অবস্থিত। গত শুক্রবার এই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৩০-৩৫টি বাড়ির কারও রান্নাঘর, কারও বারান্দা, কারও বসতঘরের চালার অনেক অংশ নেই। ঘরের মেঝে জোয়ারের পানিতে কর্দমাক্ত। রান্নার চুলা ভিজে ভেঙে গেছে। রাস্তা বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে ১৫-১৬টি পরিবারকে অনেক পথ ঘুরে মূল রাস্তায় উঠতে হয়।

এই গ্রামের তামিম হোসেন বলেন, ‘ঘরের বারান্দার চালা উড়ে গেছে। ঘরদোরে পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় রান্না করার মতো অবস্থা নেই। আমাদের ঈদ বলতে তো কিছু নেই।’

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরগুনায় বঙ্গোপসাগরের তীরের তালতলী উপজেলা। এখানকার অনেক গ্রাম ঝড়ের তাণ্ডবে এলোমেলো হয়ে আছে। তালতলীর পাজরাভাঙা গ্রামের বিধবা তারা ভানু। ঝড় তাঁর মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাবা, ছোট্ট ঘরটুক ছাড়া মোর তো কিছু আলহে না। হ্যাও বইন্নায় ভাইঙ্গা-চুইড়্যা গ্যাছে। থাকমু কই, খামু কী, কিচ্ছু কইতে পারি না’।

ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘের। নয়া ভাইজোড়া গ্রাম, তালতলী, বরগুনা। ছবি: প্রথম আলো

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর দ্বীপের জেলে আবু হানিফ (৩৫)। ঝড় তাঁর ঘরদোর উড়িয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ঝড় থামার পর পরিবার নিয়ে ভাঙাচোরা ঘরেই আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।

লালমোহন উপজেলার চর শাহজালাল এলাকার বাসিন্দা সুফিয়া বেগমের (৫০) অবস্থাও এমন। তিনি বলেন, স্বামী-সন্তানসহ ছয়জনের সংসার টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল। ঝড়ের তাণ্ডবে পুরো বসতঘর তছনছ হয়ে গেছে। এলোমেলো সংসারে ঈদের আনন্দ কী, তা অনুভব করার মতো অবস্থা তাঁদের নেই।

প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ে সবচেয়ে বেশি বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে বরিশাল জেলায়। এখানে ২৪ হাজার ৪৮০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে আংশিক ১৬ হাজার ৩২০টি ও সম্পূর্ণ ৮ হাজার ১৬০টি ঘর রয়েছে। এরপর বেশি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পটুয়াখালী। এ জেলায় ১০ হাজার ৪৪৭টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার ১২১টি এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৩৫৪টি। বরগুনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ঘর। ভোলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর ১ হাজার ৯৩২টি। ঝালকাঠিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৮৫টি ঘর। পিরোজপুরে প্রাথমিক হিসাবে ২ হাজার ৩০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে বিভাগীয় দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, করোনায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের আগে থেকেই ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল। আম্পানে আরও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন থেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে বরাদ্দ এলে গৃহ নির্মাণসহ আরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।