Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় গণপরিবহন চালু এবং আমার অভিজ্ঞতা

গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বের হয়েছি বাসা থেকে। গন্তব্যস্থল সাভার নিউমার্কেট। সরকার গণপরিবহন চলার অনুমতি দিয়েছে, এদিকে ছাত্রের বাবাও গণপরিবহন চালু হওয়ার কথা শুনে ফোন দিয়ে পড়াতে যেতে বলেছেন।

আমি ভাবলাম, রাস্তায় গিয়ে দেখি গণপরিবহনের কী অবস্থা। এত দিন অটোরিকশায় চলাচল করতে করতে বাসে উঠে কোথাও যাওয়ার ব্যাপারটা কেমন যেন একটু বাড়তি আগ্রহের ব্যাপার ছিল আমার কাছে।

আমার বাসা রেডিও কলোনি এলাকায়। এত দিন সাভারে যেতে হলে রেডিও কলোনির ভেতরের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতাম, কিন্তু গতকাল বাসে যাব বলেই সিদ্ধান্ত নিলাম। রাস্তা পার হয়ে গাড়িতে উঠতে যাব, বাসচালকের সহযোগী বললেন, থামেন ভাই! বলেই জীবাণুনাশক স্প্রে বের করে আমারে হাতে, শরীরে স্প্রে করলেন। আমি এই ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, তাই বেশ অবাক হলাম। ভালোও লাগল।

বাসে উঠে একেবারে প্রথম সিটেই বসলাম। ওই সিটে ইতিমধ্যে আরেকজন বসে ছিলেন। আমি বসার পর পাশের সিটের একজন বলে উঠলেন, ভাই! এক সিটে একজন করে বসতে হবে! আমি বললাম, ওহ আচ্ছা। বলেই একেবারে শেষের সিটে যেয়ে বসলাম। পেছনের সিট একদম ফাঁকাই ছিল। বসে আরাম পেলাম, একই সঙ্গে দেশে হঠাৎ এত নিয়মকানুন মানার হিড়িক দেখে ভালো লাগছিল।

সাভার নিউমার্কেটের সামনে নেমে আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রাস্তায় চলাচল করা প্রতিটা লোকাল বাস প্রেমিকার দিকে যেভাবে প্রেমিক মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে, সেভাবে তাকিয়ে দেখছিলাম, বিশেষ করে বাসের সহযোগীদের। প্রত্যেকের হাতে স্প্রে। আহা! আজ ভাড়া ৫ টাকার জায়গায় ১০ টাকা নিল, তবু আমার ভালো লাগছিল। একজন সহকারী আমার মুগ্ধ চোখে তাকানোর ব্যাপারটা খেয়াল করলেন, বাস থামিয়ে আমাকে বললেন, যাবেন নাকি? আমি বললাম, না মামা, যাব না।

পরে নিউমার্কেটে ঢুকতে যাব, একটা বিয়ের গেটের মতো দেখলাম, তার সামনে দুই জন মাস্ক, হেলমেট, পিপিই পরে মানুষদের শরীরের তাপমাত্রা মাপছেন। আমার মাথা বরাবর যন্ত্রটা ধরে বললেন, ভেতরে যান। আমি কৌতূহলবশত জানতে চাইলাম, স্কোর কত আসছে? আর কত এলে আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিতেন না? উত্তরে সেই লোক বললেন, আপনার স্কোর ৩৬১, আর ৩৪০–এর নিচে এলে সেটা বিপজ্জনক! আমি আবার ওহ আচ্ছা বলে ওই বিয়ের গেটের মতো দেখতে প্রটেকটিভ দরজার ভেতরে ঢুকলাম। ঢুকতে না ঢুকতেই আমার গায়ে ওই দরজার মধ্যে থাকা স্বয়ংক্রিয় মেশিন থেকে আমার গায়ে পানি ছিটিয়ে দিল। আমি আবার অবাক হলাম, সেই সঙ্গে ভালোও লাগছিল।

বিকেলে বেলায় ভাইয়া পল্লী বিদ্যুতে গেলেন কোনো এক কাজে। তাঁর কাছে শুনলাম, তিনি যাওয়ার সময়ও বাসচালকের সহকারীর হাতে স্প্রে পাননি, আসার সময়ও না। ভাড়াও নাকি বেশি রাখছে। আমি ভাবলাম এ কেমন কথা! সকাল বেলা মনে হলো আমি সিঙ্গাপুর, কানাডা আছি। এত দ্রুত আমার দেশ আবার সোনার বাংলায় রূপ নিল কেমনে?

* শিক্ষার্থী, সাভার, ঢাকা