Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় পারিবারিক বন্ডিংটা আরও মজবুত হচ্ছে

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে অন্যান্য চীনা সামগ্রীর মতোই করোনাভাইরাস দুই মাস আগে কোনো ইমিগ্রেশন ছাড়াই বাংলাদেশে প্রবেশ করল।

আজ দুই মাস লকডাউনে আছি। আমরা দুজন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক। চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখা বন্ধ। বাড়িতে আছে ছেলে আর সাত মাস আগে বিয়ে করে আনা বউ। ছেলের অফিস, বউমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ। আমাদের হাতিরঝিলের কাছে নিকেতন এলাকার মতো কঠিন লকডাউন ঢাকার আর কোথাও আছে কি না সন্দেহ। কোনো বুয়া, ড্রাইভার ঢোকা সম্পূর্ণ নিষেধ। আমরা কোনোরকম সাহায্যকারী ছাড়াই চলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

লকডাউনের এই কঠিন সময়টাতে আমাদের পরিবারের চারজন মাত্র সদস্য মিলে একটা দলগতভাবে করছি; কেউ ঝাড়ু দিচ্ছে, কেউ মুছে নিচ্ছে, আবার ওরা কেটে কুটে দিলে আমি রান্না করছি ; দুজন সাহায্যকারী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করত, অথচ এখন কোনো রকম কষ্ট ছাড়াই আমরা সবকিছু সামলাতে পারছি।


অবশ্য গ্যাজেট ব্যবহার হচ্ছে অনেক বেশি; যেমন রাইস কুকারে ভাত রান্না করা, রুটি মেকারে রুটি-পরোটা বানানো, ফুড প্রসেসরে চালের গুঁড়ি, আদা-রসুন-পেঁয়াজবাটা, কিমা মিনচারে কাবাবের জন্য সেদ্ধ ডাল-মাংস পিষে নেওয়া, Airfryer এ ব্রেড, বান রুটি, ইলেকট্রিক ওভেনে পিজা, কেক বানানো, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোয়া ইত্যাদি চলছে।


বিকেলে নিয়মিত সবাই মিলে ছাদবাগানে ৪০০ টবের পরিচর্যা করি। তারপর সন্ধ্যায় একসঙ্গে বসে পুরোনো নাটক, ইত্যাদি দেখা; ইতিমধ্যে পুরোনো অনেক বিখ্যাত ছবিও দেখা হয়েছে; রমজানে অবশ্য টিভি দেখা হচ্ছে না।


আসলেই সময়টা আমাদের মতো সদা ব্যস্ত মানুষদের জন্য খুবই কাজের হয়েছে। সবাই মিলে ভাগ করে বাড়ির কাজগুলো যদি করা যায়, তাহলে অনায়াসে সব দুর্ভোগ অতিক্রম করা যায়।

বউমা নতুন মানুষ, ওদের বাড়িতে সবার ছোট, তাই ঘরের কাজ করার তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু বিয়ের পরে প্রথম পাঁচ মাস তেমন কিছু শেখার সুযোগ না হলেও, করোনাকালের এই দুই মাসে রীতিমতো সব কাজের কাজি হয়ে গেছে! ওর একটা বড় গুণ হলো নতুন কিছু শেখার আগ্রহ। তাই কাজটা শেখানো সহজ হয় আমার জন্য।


আমি বিশ্বাস করি, কারও যদি আগ্রহ থাকে, সে সেই কাজ শিখতেই পারবে। সেলাই মেশিন কোনো দিন চালায়নি, সেটাও এই অবসরে আমার কাছে শিখে নিয়েছে। নিজের কিছু জামাকাপড়ও সেলাই করতে পেরেছে।
স্বাভাবিক সময়ে যেমন আমি ব্যস্ত, তেমনি বউমাও পড়াশোনা, অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার চাপে হিমশিম অবস্থায় থাকে। অথচ এই কয়েক দিনে কোনো কাজের লোক না থাকায়, মাছ-মাংস রান্না, শাকসবজি রান্না, কেক-পিজ্জা, চায়নিজ রান্না সবই একা হাতে করার মতো আত্মবিশ্বাস ওর মধ্যে তৈরি হয়েছে। আমি না করলেই দেখি ও খুশি। এটা আমি মনে করি লকডাউনের পজিটিভ দিক!

আরেকটা ঘটনা তো না বললেই নয়। আমি বহু বছর বাড়িতে ছাদবাগান করি। ছোটবেলা থেকেই গাছ খুব ভালোবাসি। আমাদের বাসার ডাক্তার সাহেব কিন্তু এ ব্যাপারটিতে কোনো দিনই আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু অবাক কাণ্ড, করোনার এই লকডাউনের সময়টায় বাইরে যেতে না পেরে তিনি এক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা শুরু করলেন। কয়েক দিনের মধ্যে গাছদের ভালোবেসে ফেললেন অনেক বেশি। এখন তিনি কতবার যে ছাদে যাচ্ছেন, গাছের পরিচর্যা করছেন, তার হিসাব নেই। রীতিমতো ইউটিউব দেখে দেখে গাছের যাবতীয় সমস্যা, কোন গাছে কী সার দিতে হবে, পোকা কীভাবে দূর করতে হবে ইত্যাদি জেনে নিচ্ছেন। মাশা আল্লাহ আগের চেয়ে ফলন অনেক ভালো! আমরা প্রতিদিন ছাদের শাকসবজি খেতে পারছি। ফলাফল হচ্ছে, তার ডায়াবেটিস ভালোভাবে কনট্রোলে আছে।
তাই বলি অনেক নেতিবাচক জিনিসের জন্য দায়ী এই করোনা আমাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনও কিছু করেছে। সবাইকে অনুরোধ, বাইরে না গিয়ে ঘরে থাকুন, নিজের মতো করে সময়গুলোকে কাজে লাগান, আসলে ঘরে থেকেও আনন্দ পাওয়া যায়, পারিবারিক বন্ডিংটাও আরও মজবুত হয়।

*লেখক: চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ