Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনায় প্রতিরোধ সচেতন হলেই সম্ভব

ছবি: রয়টার্স

বিশ্বে এখন আতঙ্কের অপর নাম করোনা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। চীনের উহান শহরে সর্বপ্রথম ভাইরাসটির প্রকোপ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ইতালি, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, স্পেন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্সসহ ১৬৩টি দেশে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৮ হাজার মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।

১১ জানুয়ারি সর্বপ্রথম একজনের মৃত্যু হয় এ ভাইরাসে। ধারণা করা হয় যেকোনো প্রাণী থেকে এই ভাইরাসের সূত্রপাত হয়। প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মানুষে সংক্রমিত হয়েছেন। এটি মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন পশু, বিড়াল, উট ও বাদুড়ের মধ্যে দেখা যায়। ১৩ জানুয়ারি থেকে ভাইরাসটি শনাক্তের জন্য প্রয়োজনীয় টেস্ট সহজলভ্য হয়। করোনা বা কোভিড-১৯ এখন মহামারি রোগ। সাধারণত কোনো রোগে বিশ্বব্যাপী ১ লাখ মানুষ আক্রান্ত হলে তাকে মহামারি বলা যেতে পারে। তাই এটি অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। সচেতনতা ও সতর্কতাই পারে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে।

শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো কোভিড-১৯ ভাইরাসের ক্ষেত্রে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এ ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এই ভাইরাসের প্রধান লক্ষণগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, শুকনো কাশি এবং জ্বর।

প্রতীকী ছবি

বিশেষজ্ঞদের মতে ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর লক্ষণ প্রকাশ করতে সময় লাগে ৪-৫ দিন। প্রথম লক্ষণ জ্বর, তারপর শুকনো কাশি এবং এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তবে ৮১% এর ক্ষেত্রেই লক্ষণ টের পাওয়া যায় না বা খুব হালকা কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। ১৪% সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রবলভাবে ফুটে উঠে এবং ৫% এর ক্ষেত্রে খুবই জটিল এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। পূর্বেই অসুস্থ এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্নদের জন্য করোনা মারাত্মক হতে পারে।

কোভিড-১৯ মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটিয়ে শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। হাঁচি-কাশি, করমর্দন ইত্যাদির দ্বারা এটি ছড়াতে পারে। যেহেতু এর কোনো টিকা বা প্রতিষেধক এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি তাই এটি ছড়িয়ে পড়া কমাতে পারলেই সংক্রমণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এর কোনো চিকিৎসাও এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্বব্যাপী ৮টি প্রকল্প এর ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। ভ্যাকসিন দীর্ঘমেয়াদি ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

বর্তমানে যারা আক্রান্ত রয়েছেন বা লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে তাদের জন্য ব্যক্তিগত সচেতনতা পারে সংক্রমণ কমিয়ে আনতে। প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত বা ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, পরিবার ও নিকটাত্মীয় এবং পারতপক্ষে সকলকে এ ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে। কারণ পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে বাকিরাও ঝুঁকিতে থাকেন। হাত ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাত সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং বারবার হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে নাক বা মুখে ঘষা থেকে বিরত থাকতে হবে। নোংরা হাতে চোখ, নাক কিংবা মুখে ধরা যাবে না কারণ এই মাধ্যমগুলোই ভাইরাসটিকে শরীরে ঢুকতে সাহায্য করে।

শরীরে জীবাণু প্রবেশ করার চার দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশে সময় বেশিও লাগতে পারে। এ সময় ভাইরাসের জীবাণু গলায় আটকে থাকে তাই কাশি হয়। গরম পানির সঙ্গে লবণ বা ভিনেগার দিয়ে কুলকুল করলে জীবাণু সরে যায়। এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় নাক-মুখ ঢাকতে হবে এবং টিস্যু বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। বাইরে গেলে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার সঙ্গে নিতে হবে এবং নিয়মমতো ব্যবহার করতে হবে। জনবহুল স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোপরি কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। যত মানুষ মারা যাচ্ছেন তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি মানুষ সুস্থ হচ্ছেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে।

অন্যান্য দেশে এ ভাইরাসটি মহামারি আকার ধারণ করেছে এবং করছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এটি মহামারি রূপে দেখা দিলে তার ক্ষতি হবে কল্পনাতীত। তাই ছড়িয়ে পড়ার আগেই এর প্রতিকার প্রয়োজন। কারণ সচেতন হলেই প্রতিরোধ সম্ভব।

*লেখক: শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ