করোনায় 'সংযুক্ত' শব্দের সঙ্গে পরিচিত হওয়া দরকার
>করোনাভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের জীবনের বাস্তবতা। দেশ–বিদেশের পাঠকেরা এখানে লিখছেন তাঁদের এ সময়ের আনন্দ–বেদনাভরা দিনযাপনের মানবিক কাহিনি। আপনিও লিখুন। পাঠকের আরও লেখা দেখুন প্রথম আলো অনলাইনে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: dp@prothomalo.com
নিস্তব্ধ শহর শীতল আবহাওয়ার কারণে বোধ হয় ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। বৃষ্টির কারণে এমন এমন ভাব। মায়ের ডাক ‘বাসায় বাজার নেই, যেতে হবে এই বিকেলে।’ ভাবছি কাজের কাজ তো কিছুই করছি না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজারটা করা যাক। অবশ্য এই দারুণ আবহাওয়াতেও নিজেকে ঘরবন্দী রাখতে পারছি না। বাসায় ছোট ভাই আর বড় দুই বোন থাকাতে গল্প করতে একটু সুবিধাও হয়েছে।
ক্যাম্পাস সেপ্টেম্বরের আগে খুলবে কি না তার হদিসও নেই। বাসার কাছেই বাজার। সব দোকানদারদের সঙ্গে আমার ভালোই পরিচয়। কারণ আমার সব ধরনের মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে দারুণ লাগে। আজ দেখছি বাজারের ভেতর সবজি বিক্রেতাদের রাস্তায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে কোলাহল কিছুটা মুক্ত করার জন্য।
দ্রব্যমূল্যের স্ফীতি অনেকটাই কমের দিকে। ক্ষতি হলেও শাকসবজি তাড়াতাড়ি বিক্রি করে এই রোজার মধ্যে বাসায় যেতে পারলে মনে হয় হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
ক্যাম্পাসের প্রথম বর্ষে উঠে করোনার জন্য সুন্দর সম্ভাবনাগুলোকেও দূরে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। স্কুল–কলেজের কিছু স্যার ম্যাডামদের আজ ও দেখা হলে অনেক ভালো লাগে। কী চমৎকার সম্ভাবনার দুয়ারগুলো খুলে দিয়েছিল আমার জন্য। ফেসবুক সেলিব্রিটিদের মধ্য আরিফ আর হোসেন, আমিনুল ইসলাম, রউফুল আলম, ড. আরিফুর রহমান, ড. কামরুল হাসান মামুনদের পোস্ট পড়ে মাঝেমধ্যে মনে হয় দেশটাকে যদি তাদের মতো মানুষেরা গড়ে তুলতেন। তাদের সমাজকে দেখার দৃষ্টি আমার অনেক ভালো লাগে। কত সুন্দরভাবেই না দেশের সমস্যাগুলোকে গঠনমূলক সমলোচনা দিয়ে তুলে ধরে। গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের চমৎকার গল্প তরুণদের কাছে তুলে ধরার বুদ্ধিটাও দারুণ। আসলে একটা সমাজ তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করে, যখন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। যদিও জানি আমাদের দেশটা অনেকটাই উন্নত। স্যার জামিলুর রেজা চৌধুরী, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, স্যার আনিসুল হক, স্যার মুহম্মদ জাফর ইকবাল, স্যার কায়কোবাদসহ আরও অনেকের হাত ধরে কী চমৎকার ভঙ্গিতে যেন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে অনেকটাই আঁকাবাঁকা পথ।
এই করোনা–কালীন আমাদের এখন ‘সংযুক্ত’ নামক অভাবনীয় তুলনাহীন শব্দটির সঙ্গে গভীরভাবে পরিচিত হওয়া দরকার। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে যারা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছে, তাদের সঙ্গে সংযুক্ত করা দরকার দেশসেরা আইটি বিশেষজ্ঞদের, সংযুক্ত করা দরকার দেশসেরা ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে। আমাদের দেশের বাইরে ভালোভাবে অবদান রেখে যাওয়া সেসব দরকারি বিশেষজ্ঞ ও তাঁদের ছোট্ট ভালোবাসার দেশটাকে ও সাহায্য করতে চাইছেন। শুধু সেই ‘সংযুক্ত’ টাই থাকা দরকার। আর যদি তা সম্ভবপর হয়, তবে করোনা–কালীন থেকে শুরু করে শিকলের মাধ্যমে আমাদের দেশের সমস্যাগুলো সমাধান হতে থাকবে।
আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশ যদি এই ‘সংযুক্ত’ নামক শব্দটিকে প্রাধান্য দেন আমি মনে করি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসাব্যবস্থা, অবকাঠামোগত দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে যাব। কারণ, আমরা তখন বিশ্বসেরা বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকব। আর শব্দটি বোঝা যতটি সহজ, বাস্তবায়ন করা ততটাই সহজ হবে যদি সরকারব্যবস্থা একে দাঁড়ানোর সুযোগটা দেয়। জানি না সামনের দিনগুলোতে আমাদের সবার অবস্থাটা কী হবে। এই করোনা–কাল আমাদের জন্য অভিশাপ হলেও আমাদের দেশের জন্য কল্যাণকর হবে যদি আমাদের দেশের রিসোর্সগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সংযুক্ত করার ছোট্ট চেষ্টাটা করি। আশাবাদী সামনের দিনগুলোর জন্য।
*লেখক: শিক্ষার্থী, ১ম বর্ষ, বুটেক্স। stalwartsheikh@gmail.com
আরও পড়ুন
-
মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন মিল্টন সমাদ্দার: ডিবি
-
দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি: টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, অপরিবর্তিত একাদশ
-
সেই ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ ঘিরে কী ঘটেছিল
-
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকা আসছেন বুধবার
-
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীরা কী চান, ফিলিস্তিনি বিডিএস আন্দোলন কী