Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা আক্রান্ত নারী ছুটে বেড়ালেন এখানে-সেখানে

ঠাকুরগাঁওয়ে গর্ভকালীন জটিলতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করাতে দেন এক অন্তঃসত্ত্বা। এরপর তিনি স্বামীকে নিয়ে চলে যান পঞ্চগড়ে তাঁর বাবার বাড়িতে। সেখানে এই বাড়ি ওই বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছেন। চিকিৎসা নিতে গেছেন একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে। পরে ওই গতকাল মঙ্গলবার নারীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে তাঁকে পাঠানো হয় রংপুরের আইসোলেশন হাসপাতালে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, সম্প্রতি ওই নারী ঢাকা থেকে তাঁর স্বামীর সঙ্গে ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের বাড়িতে আসেন। গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দিলে ১৪ এপ্রিল তিনি ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ১৬ এপ্রিল তিনি হাসপাতাল থেকে চলে যান। পরের দিন তিনি আবার হাসপাতালে আসেন। সে সময় তাঁর জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ছিল। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষার জন্য গত শনিবার চিকিৎসক তাঁকে পরামর্শ দেন। পরে তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়।

১৯ এপ্রিল ওই নারী হাসপাতাল থেকে চলে যান। তিনি শহরের এক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর কাছে চিকিৎসা নেন। ওই চিকিৎসক তাঁকে বিভিন্ন পরীক্ষার পরামর্শ দিলে সেই রাতেই তিনি আবার হাসপাতালে আসেন। এখানে চিকিৎসা নিয়ে শহরের বাড়িতে ফিরে যান।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায়, এই নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন সন্ধ্যায় তাঁর ঠিকানায় গিয়ে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে পায়নি। স্বজনদের কাছ থেকে জানতে পারেন, এই দম্পতি পঞ্চগড় সদর উপজেলায় গেছেন। সেখানে ওই নারীর বাবার বাড়ি। বাবার বাড়িতে গিয়ে গতকাল ওই নারী একটি ইজিবাইকে করে পঞ্চগড় শহরে যান। শহরের একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। পরে পঞ্চগড়ের এক পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেন।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শিহাব মাহমুদ শাহরিয়ার বলেন, ওই নারীর সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা দুশ্চিন্তায় আছেন। তাঁরা অনেকেই সুরক্ষা পোশাক ছাড়া ওই নারীকে সেবা দিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও শহরের জমিদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আনছারুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে একজন রোগী কীভাবে হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান—এটা ভাবতেই ভয় হচ্ছে। একজনের মাধ্যমে আরও কতজন যে করোনায় আক্রান্ত হবেন, ভাবতে পারছি না।

করোনায় আক্রান্ত নারী পঞ্চগড়ে আছেন শুনে সেখানকার সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার। খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাঁকে রাতে রংপুরে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসোলেশন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

এদিকে ওই নারীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি তাঁর বাবার বাড়ি, পঞ্চগড় শহরের একটি রোগ নির্ণয় কেন্দ্র, পরিবার কল্যাণের এক পরিদর্শিকার বাড়ি ও একজন ইজিবাইক চালকের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লকডাউনের ফলে এসব বাড়ি থেকে কেউ বের হতে পারবেন না, কেউ ঢুকতেও পারবেন না।

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ওই নারী ঠাকুরগাঁও থেকে পঞ্চগড়ে এসে কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, তাঁর সংস্পর্শে চিকিৎসকসহ যারা এসেছেন, তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে।