Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা গৃহকর্মীর কষ্টের কাল

কাজ হারানো গৃহশ্রমিকদের ৪৬ ভাগ ফিরতে পেরেছেন আগের পেশায়। এখনো বেকার ৩৫ শতাংশ।

ছবিটি প্রতীকী

রাজধানীর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন ফুলবাড়িয়ায় থাকেন রাহেলা বেগম (ছদ্মনাম)। তাঁর দুই মেয়ে এক ছেলে। স্বামীর সুনির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। দেশে গত বছর মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার আগে দুটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন রাহেলা। সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে দুই বাড়িতেই কাজ হারান তিনি। উপায় না পেয়ে চলে যান গ্রামের বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে। গত নভেম্বরে আবার ঢাকায় ফেরেন। এরপর দুটি বাসায় কাজ পেলেও করোনা বাড়তে থাকায় আবার তা হারিয়েছেন।

গত সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথা হয় রাহেলার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘জীবন যে কীভাবে চলতেছে, তা বলার মতো না। স্বামী ঠিকমতো টাকাপয়সা দেয় না। এখন মেয়ে দুইটাও কাজ করতেছে টুকটাক। করোনা যে কবে য্যাবে, সেই ভাবনা করি।’

করোনাকাল রাহেলার মতো অসংখ্য গৃহকর্মী নারীকে বেকার করেছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার সময় যেসব পেশার মানুষ সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে গৃহকর্মীরা অন্যতম। অন্য পেশাজীবীদের মধ্যে শুধু রিকশাচালকদের বেকারত্বের হার গৃহকর্মীদের তুলনায় বেশি। এদিকে গৃহকর্মীদের ওপর নিপীড়নও কমেনি। এ অবস্থায় আজ বুধবার আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস পালিত হচ্ছে। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শোভন কাজ হিসেবে গৃহশ্রমিকের স্বীকৃতি চাই’।

করোনাকালে গৃহশ্রমিকদের পেশা হারানোর চিত্র উঠে এসেছে বেসরকারি সংগঠন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ জরিপে। গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তিন দফায় করোনাকালে আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর জরিপ করে সংস্থাটি দুটি। গবেষণার প্রথম দফায় দেখা যায়, ঢাকা এবং অন্যান্য শহরের ৫৭ শতাংশের বেশি নারী গৃহকর্মী বেকার হয়েছেন। কাজ হারানো এসব নারীর মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ বিকল্প পেশায় নিযুক্ত হতে পেরেছেন।

করোনাকালে নানা পেশার মানুষ প্রণোদনা পেলেও গৃহশ্রমিকেরা এর প্রায় কোনো সুফলই পাননি।
আবুল হোসেন, জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা

প্রতিষ্ঠানটি দুটির চলতি বছরের এপ্রিল মাসের জরিপে দেখা যায়, গত বছর করোনা শুরুর পর গৃহকর্মীদের আয় করোনার আগের তুলনায় ৬১ ভাগ কমে গিয়েছিল। চলতি বছর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এই আয় এখনো করোনার আগের তুলনায় ১২ শতাংশ কম।

গবেষণার তথ্য বলছে, কাজ হারানো গৃহশ্রমিকদের মধ্যে এখনো বেকার ৩৫ শতাংশ। ৪৬ ভাগ তাঁদের পুরোনো পেশায় ফিরে যেতে পেরেছেন। ছোট ব্যবসা, কারখানার শ্রমিক, কৃষিসহ নানা পেশায় যুক্ত হতে পেরেছেন ১৯ শতাংশ গৃহকর্মী। এ ক্ষেত্রে রিকশাচালকদের বেকারত্বের হার ৫৬ শতাংশ।

করোনাকালে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। গৃহশ্রম এই খাতের মধ্যেই পড়ে। মোট শ্রমশক্তির ৮৬ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। বাংলাদেশে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা কত, সরকারি কোনো দপ্তরে সে তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজসহ (বিলস) পাঁচ প্রতিষ্ঠানের গবেষণা দলিল ‘গৃহশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ২০২০’–এ বলা হয়েছে, এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।

জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাকালে নানা পেশার মানুষ প্রণোদনা পেলেও গৃহশ্রমিকেরা এর প্রায় কোনো সুফলই পাননি।’

করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গৃহশ্রমিকেরাই, এমনটা মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও। তিনি এ–ও মনে করেন, এই পেশার মানুষদের কাছে সহায়তাও যথেষ্ট পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, ‘গৃহকর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু এটা এমন পেশা, যার জন্ম হয় সকালে, মৃত্যু হয় সন্ধ্যায়। তাঁদের কাছে সহায়তা পৌঁছানো যায় না।’

বিলসের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান, গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এ পেশা একটি আইনি ভিত্তি পেলে কিছু সুরক্ষা তাঁরা পেতেন।