Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা পরীক্ষার সুবিধা বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ কম

এখন ৭৭টি কেন্দ্রে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা হচ্ছে। জেনারেল হাসপাতাল, কুষ্টিয়া, ১২ জুলাই। ছবি: হাসান মাহমুদ

দেশে সংক্রমণ বাড়লেও সরকারি উদ্যোগে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার সুবিধা বাড়ছে না। গত এক মাসে নতুন করে ঢাকার বাইরে কোনো জেলায় সরকারি পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করা সম্ভব হয়নি। এ সময়ে (১২ জুন থেকে ১২ জুলাই) দেশে মোট ১৮টি পরীক্ষাকেন্দ্র চালু হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি সরকারি কেন্দ্র। বাকি ১৫টিই বেসরকারি উদ্যোগে হয়েছে।

গত ১২ জুন দেশে পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ৫৯টি। এখন ৭৭টি কেন্দ্রে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৩টি এবং ঢাকার বাইরে ৩৪টি। বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে ১৪টিই রাজধানী ঢাকায়। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ঢাকার বাইরে যুক্ত হওয়া চারটি কেন্দ্রের সবগুলোই বেসরকারি কেন্দ্র। আর দেশের ৪২ জেলায় এখনো করোনা শনাক্তের পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করা যায়নি। সব মিলিয়ে ৭৭ পরীক্ষাকেন্দ্রে করোনা শনাক্ত হচ্ছে এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে ৪৫টি।

ঢাকার পরে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, গাজীপুর ও বগুড়ায়। অথচ গত এক মাসে এ পাঁচ জেলায় সরকারিভাবে নতুন কোনো পরীক্ষাকেন্দ্র যুক্ত হয়নি। এ সময়ে চট্টগ্রামে একটি এবং গাজীপুরে দুটি বেসরকারি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করাতে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ পড়ে। আর সরকারিভাবে করালে (বুথে গিয়ে নমুনা দেওয়া) খরচ হয় ২০০ টাকা। যে কারণে সরকারি কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার চাপ বাড়ছে।

তবে পরীক্ষার চাপ বাড়লেও সরকারি কেন্দ্রগুলোতে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। নমুনা সংগ্রহের বুথগুলোতে আগের তুলনায় অর্ধেক নমুনা নেওয়া হচ্ছে। ফলে অনলাইনে নমুনা দেওয়ার নিবন্ধন পেতে এবং সরাসরি বুথে নমুনা দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। ঢাকার অধিকাংশ সরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রে সরাসরি নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা নেই। সরকারি কেন্দ্রগুলোর জন্য বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরে বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে। আগে প্রতিটি বুথ থেকে দৈনিক ৩০টি করে নমুনা সংগ্রহ করা হতো। ২০ দিন ধরে প্রতিটি বুথ থেকে দৈনিক ১৫টি করে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই ১৫টির মধ্যে ১০টি অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে আর ৫টি বুথে সরাসরি সংগ্রহ করা হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর–১ নম্বর এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল খানের করোনার উপসর্গ দেখা দেয় গত ২৫ জুন। তিনি নমুনা দেওয়ার জন্য ২৭ ও ২৮ জুন অনলাইনে নিবন্ধন পাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ৩০ জুন সশরীরে নমুনা দিতে মিরপুর–১ নম্বরের বুথে যান। ভিড়ের কারণে নমুনা না দিয়ে ফিরে আসেন। গতকাল তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষা করাতে কী পরিমাণ ভোগান্তি হয়, তা কেউ নিজে বুথে না গেলে বুঝবে না। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর অফিসের সহায়তায় নমুনা দিতে পেরেছেন।

গত এক মাসে দেশে ১৮টি পরীক্ষাকেন্দ্র চালু। এর মধ্যে মাত্র ৩টি সরকারি কেন্দ্র।

এদিকে পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানোর বদলে সরকার করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষাকে আরও নিয়ন্ত্রিত করেছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করার কথা বলছেন। মাঝে কয়েক দিন দৈনিক ১৭ থেকে ১৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু গত ১০ দিন (৩ জুলাই থেকে) ধরে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে ১১ থেকে ১৪ হাজার। গত দেড় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম, ১১ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে গতকাল রোববার। কিন্তু পরীক্ষা কম হলেও সংক্রমণ শনাক্তের হার কমছে না। গতকাল পরীক্ষার বিপরীতে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

গত ১৮ জুন নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ উল্লেখ করেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পর্যায়ে করোনা শনাক্তের জন্য আরটিপিসিআর পরীক্ষা শুরু হবে। এরপর ২৫ দিন পার হলেও কোনো জেলায় করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করা যায়নি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি জেলায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা চালুর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরীক্ষা কম হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কিছু বেসরকারি কেন্দ্রে পরীক্ষা না হওয়ায় পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে।

এদিকে সরকার সারা দেশেই করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রিত করেছে। জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট—এ চার উপসর্গ না থাকলে নমুনা নেওয়া হচ্ছে না। বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তির চারটি উপসর্গই রয়েছে, শুধু তাদের নমুনাই পরীক্ষা করা হচ্ছে। উপসর্গ ছাড়া নমুনা দেওয়ার সুযোগ থাকছে না।

পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যার অনুপাতে করোনা পরীক্ষার দিক থেকে বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪৬তম। লক্ষাধিক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী রয়েছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকোর পরে সবচেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে মেক্সিকোর চেয়ে প্রতি ১০ লাখে ১১৭টি পরীক্ষা বেশি হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার পরও হেলায় সময় নষ্ট করেছে। এক মাসে ঢাকার বাইরে একটিও সরকারি পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করতে না পারা হতাশার কথা। আবার পরীক্ষা কমে গেল কেন, সেটিরও কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। তিনি বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করতে বলেছিল জাতীয় পরামর্শক কমিটি। দ্রুত র‌্যাপিড কিটের মাধ্যমে করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করে পরীক্ষা বাড়ানো দরকার।