Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনা মোকাবিলায় ঢাকায় কাঁচাবাজার স্থানান্তর শুরু

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কারখানা মাসখানেক ধরে বন্ধ। তবে নিত্যপণ্য কেনার জন্য কাঁচাবাজারগুলো খোলা রাখা হয়েছে। গত কয়েক দিনে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের বড় জায়গা এখন কাঁচাবাজারগুলো। কিন্তু রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব একদমই মানা হচ্ছে না। রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার জন্য বাজারগুলোতে লোকসমাগম উল্টো বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২৮টি কাঁচাবাজার উন্মুক্ত জায়গায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন রাজধানী ঢাকায়। গত সোমবার পর্যন্ত ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৭৪ জন। প্রতিনিয়ত রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। 

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ১০ দিন আগেই হাটবাজারগুলো খোলা স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ১২ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগ দেশের সব জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এ নির্দেশনা জানিয়ে চিঠি দেয়। নির্দেশনায় স্কুলের মাঠ, খোলা মাঠ ও খোলা জায়গায় বাজারগুলো স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও বাজার কমিটি মিলে কয়েক দফা আলোচনা করে ঢাকার ২৮টি কাঁচাবাজারের সবজি, মাছ ও ফলের দোকান সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধেক কাঁচাবাজার প্রশস্ত সড়ক ও খোলা জায়গায় সরানোও হয়েছে। 

>২৮টি কাঁচাবাজারের সবজি, মাছ ও ফলের দোকান সরানোর সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যে অর্ধেক কাঁচাবাজার সরানো হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর যে বাজারগুলো এখনো খোলা জায়গায় সরানো যায়নি, সেগুলো দ্রুত স্থানান্তর করা হচ্ছে। পুলিশ বাজার কমিটিগুলোকে এ বিষয়ে সহায়তা করছে। বাজারে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সচেতনতা জরুরি।

ডিএনসিসি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৫টি কাঁচাবাজার রয়েছে। এর মধ্যে বনানী, মিরপুর ১ নম্বর, মিরপুর-১১ নম্বর, কল্যাণপুর বাজারগুলো খোলা জায়গায় সরানো হয়েছে। বাকি বাজারগুলো আগামী দুই দিনের মধ্যে খোলা জায়গায় সরানো হবে বলে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। 

কল্যাণপুর নতুন বাজারের মাছ ও সবজি বিক্রেতাদের বাজারের বাইরে মূল সড়কের ফুটপাতে নিয়ে আসা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় সেখানে দেখা যায়, পুলিশ ও বাজার কমিটি দোকানের সামনে গোল চিহ্ন এঁকে দিলেও লোকজন তা মানছেন না। একাধিক স্বেচ্ছাসেবক হ্যান্ডমাইকে ক্রেতাদের ৩ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে বাজার করতে অনুরোধ করছেন। 

ডিএনসিসির উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, পাকা ছাউনির মধ্যে কোনো সবজি, মাছের বাজার বসবে না। গুলশান–১ ও ২ কাঁচাবাজার ওয়ান্ডারল্যান্ড মাঠে, মোহাম্মদপুর কৃষি মাকেট কাঁচাবাজার তাজমহল রোডের বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারটি শহীদ পার্ক মাঠে, মহাখালী কাঁচাবাজারটি সাউথ পয়েন্ট স্কুলের পাশের মাঠে স্থানান্তর করা হচ্ছে। 

তবে বাজার সরানো হলেও এখনো অনেক ক্রেতা-বিক্রেতাই সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে কেনাকাটা করছেন। কয়েক দিন ধরে কারওয়ান বাজারে ক্রেতা–বিক্রেতাদের চাপ ছিল বেশি। তাদের কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছিল না। কারওয়ান বাজারে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনও হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতে কারওয়ান বাজার এলাকায় জনসমাগম কমাতে গতকাল থেকে পাইকারি, আড়ত ও খুচরা বিক্রির আলাদা সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। 

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাত খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, কারওয়ান বাজারের পাইকারি কাঁচাবাজার রাত ৯টা থেকে রাত ২টা পযন্ত খোলা থাকবে। কাঁচামালের আড়তগুলো ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। আর কারওয়ান বাজারে কোনো খুচরা বিক্রেতা বসবে না। খুচরা বিক্রেতারা অস্থায়ীভাবে তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের সামনে থেকে রেলক্রসিং এলাকায় বসবে।

ডিএসসিসি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩টি কাঁচাবাজার খোলা জায়গায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেট কাঁচাবাজারটি আরমানিটোলা খেলার মাঠে, খিলগাঁও কাঁচাবাজার পাশের মাঠে, মালিবাগ কাঁচাবাজার জনপথ সড়কে বসছে। নিউমার্কেট কাঁচাবাজার পাশের মূল সড়কে বসছে।

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত সব বাজার খোলা জায়গায় সরানো হচ্ছে। দোকানের সামনে দূরত্ব চিহ্নিত করে দাগ দেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রে জনগণ তা মানছেন না। বাজারে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেটসহ সিটি করপোরেশনের একাধিক দল কাজ করছে। 

বর্তমানে দুপুর ২টার মধ্যে বাজার বন্ধ করছে প্রশাসন। বাজারে কেনাকাটা করতে আসা লোকজন, বিক্রেতা ও বাজার কমিটির লোকজন বলছেন, দুপুরের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ায় একসঙ্গে ক্রেতা উপস্থিতি বেশি হচ্ছে। রমজানের কথা বিবেচনা করে বাজার বন্ধের সময় ২-৩ ঘণ্টা বাড়ালে চাপ কমতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে, খোলা জায়গায় বসানোয় রোদের কারণে ক্রেতারা অপেক্ষা করতে চান না। সংকটের সময়ে ক্রেতাদের সচেতন হয়েই দূরত্ব মানতে হবে ও ধৈর্য ধরতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা যেতে পারে। যাঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সচেতন করবেন।