Thank you for trying Sticky AMP!!

কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সঙ্গে বেশি সহিংসতা হয় রাতে

কর্মক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তা (ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার) ও শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকেরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এ সহিংসতার ঘটনাগুলো রাতে বেশি ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ১৫৭টি ঘটনা পর্যালোচনায় এ তথ্য পেয়েছেন গবেষকেরা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের হাসপাতালের চেয়ে সহিংসতা বেশি ঘটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে। মোটাদাগে এর কারণ হয়তো এই যে রোগীর চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণের মতো জনবল ও সম্পদের ঘাটতি।

চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে এ গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা সাময়িকী ফ্রন্টিয়ার্স ইন ফিজিওলজি। প্রবন্ধটি ৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণা বলছে, ১৫৭টি ঘটনায় মোট ১৬৫ চিকিৎসক আহত হন। তাঁদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ পুরুষ চিকিৎসক, ১৪ শতাংশ নারী চিকিৎসক। ৬১ শতাংশ ঘটনা ঘটে রাতে, ২৭ শতাংশ সন্ধ্যায় ও সকালে ১৩ শতাংশ।

বিশ্লেষণমূলক এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের সেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের আট গবেষক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ৮ থেকে ৩৮ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হন। সহিংসতার ধরনের মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, কটু বাক্য বা অশোভন শব্দ ব্যবহার, যৌন হয়রানি অন্যতম।

প্রবন্ধের শুরুতে গবেষকেরা বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশেও এ সমস্যা আছে। এ গবেষণার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে হাসপাতালে ঘটা এসব সহিংসতার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা।

গবেষকেরা তথ্যের উৎস হিসেবে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মঞ্চ প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত ১৫৭টি ঘটনাকে বেছে নিয়েছেন। এতে চিকিৎসকেরা ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন বা সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করেছিলেন, সেগুলোই গবেষকেরা পর্যালোচনা করেছেন।

যেসব কারণে সহিংসতা
গবেষকেরা বলছেন, এসব সহিংসতার পেছনে ছয়টি কারণ কাজ করে। যেমন রোগীর প্রেক্ষাপট, বিলম্বে চিকিৎসা, পেশিশক্তির চর্চা, মৃত্যু ঘোষণা, তীব্র সহিংসতা ও সেবা গ্রহণের সংস্কৃতি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয় বিলম্বে চিকিৎসা দেওয়াকে কেন্দ্র করে। ২৭ শতাংশ সহিংসতা হয় এ কারণে। এরপরে আছে পেশিশক্তির চর্চা। ২৬ শতাংশ সহিংসতা হয় এ কারণে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ৮ থেকে ৩৮ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হন। সহিংসতার ধরনের মধ্যে শারীরিক নির্যাতন, কটু বাক্য বা অশোভন শব্দ ব্যবহার, যৌন হয়রানি অন্যতম।

সহিংসতার শিকার যে স্তরের চিকিৎসকেরা
১৫৭টি সহিংসতার শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, ডেন্টাল সার্জন, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, অনারারি মেডিকেল অফিসার, ইন্টার্ন ডক্টর, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অফিসার, কনসালট্যান্ট, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছেন জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তারা (ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসাররা)।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে সহিংসতা বেশি

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের হাসপাতালের চেয়ে সহিংসতা বেশি ঘটে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে। মোটাদাগে এর কারণ হয়তো এই যে রোগীর চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণের মতো জনবল ও সম্পদের ঘাটতি।

১৫৭টি ঘটনার মধ্যে ৮৭টি ঘটনা ঘটেছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে। গবেষকেরা বলছেন, প্রাথমিক সেবাকেন্দ্রে সহিংস ঘটনা চীনেও বেশি হতে দেখা যায়। বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন সেবাকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে প্রাথমিক সেবাকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দ্বিতীয় স্তরে আছে জেলা হাসপাতাল। এ স্তরে সহিংস ঘটনা ঘটেছে ২৮টি।

বিশেষায়িত ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে তৃতীয় স্তরের প্রতিষ্ঠান বলা হয়। এ তৃতীয় স্তরে ঘটনা ঘটেছে ৪২টি।