Thank you for trying Sticky AMP!!

কাজে ফিরতে প্রস্তুত তাঁরা

মো. গোলাম সাকলায়েন ও রোকন উদ্দিন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা। একজন অপরাধী ধরতে অভিযান চালিয়ে গেছেন, আরেকজন বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে মাঠে কাজ করেছেন অনবরত। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হয়েছেন দুজনই। এখন আবারও কাজে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

কোভিড–১৯–এ আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে ফিরে আসা পুলিশের এই দুই সদস্য হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েন এবং মতিঝিল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক রোকন উদ্দিন। গত ১১ এপ্রিল ডিএমপিতে গোলাম সাকলায়েনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি প্রথম নিশ্চিত হওয়ার খবর আসে।

গোলাম সাকলায়েন এক কন্যাসন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী নারায়ণগঞ্জের একটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। সন্তান নিয়ে স্ত্রী থাকেন নারায়ণগঞ্জে। আর সাকলায়েন ঢাকার শান্তিনগরের সরকারি কোয়ার্টারে একাই থাকেন। কীভাবে আক্রান্ত হলেন, এর উত্তর হাতড়াতে গিয়ে সাকলায়েন বললেন, অপরাধী ধরতে গত ২৮ মার্চ রাতভর অভিযান শেষ করে ভোর চারটার দিকে বাসায় ফেরেন। ঘুম ভাঙলে টের পান, তাঁর শরীর ভালো না। ঋতু পরিবর্তনের কারণে জ্বর, কাশি, গলাব্যথা হয়েছে এমনটা ভেবে পরিচিত এক চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি ওষুধ সেবন করতে থাকেন। কিন্তু গলাব্যথা বাড়লে ৮ এপ্রিল করোনা টেস্ট করান। তিন দিনের মাথায় আক্রান্ত হওয়ার খবর জানতে পারেন।

১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় সাকলায়েন রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। সাকলায়েন বলছিলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মী—প্রত্যেকেই ছিলেন আন্তরিক। নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্যের খবর নিয়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে গরম পানিতে লবণ দিয়ে নিয়মিত গারগল করেছেন। লেবু, আদা, লবঙ্গ দিয়ে নিয়মিত চা বানিয়ে খেয়েছেন। গোসলও করেছেন গরম পানি দিয়ে। বুকে যখন অস্বস্তি হয়েছে, তখন গরম পানির ভাপ নিয়েছেন। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেয়েছেন বেশি করে। এভাবে চলার পর ১০ দিনের মাথায় প্রথম পরীক্ষায় তাঁর করোনা নেগেটিভ আসে। এরপর আরও দুটি পরীক্ষার পর ২৫ এপ্রিল তিনি বাসায় চলে আসেন।

মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক রোকন উদ্দিনের গল্পটা একটু অন্য রকম। ফকিরাপুল এলাকার হোটেলগুলোতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করার কাজ করছিলেন তিনি। ১১ এপ্রিল সারা রাত থানায় দায়িত্ব পালন করে বাসায় ফিরে আসার পর তাঁর জ্বর ও মাথাব্যথা শুরু হয়। বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানালে পরদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। ওই দিন রাতেই তাঁর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরটি মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।

রোকন বলছিলেন, ‘খবরটি পাওয়ার পর মনে হয়েছিল, আমি কিছুদিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছি। নিজের ছোট সন্তান, স্ত্রী, পুরো পরিবারের কী হবে, সেটা ভেবেই মুষড়ে যাই। বাবা-মাকে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে নিই। করোনায় আক্রান্ত হয়েছি, এটা শোনার পর সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন।’ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ১৩ এপ্রিল রাজারবাগ হাসপাতালে ভর্তি হন রোকন। আট দিনের মাথায় তাঁর করোনা পরীক্ষা নেগেটিভ আসে। পুলিশের এই এসআই বলছিলেন, মাঠে যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করেন, তাঁরা পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী পেলে করোনার সংক্রমণ তাঁদের মধ্যে এত হতো না।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে উঠে আসা পুলিশের এই দুই সদস্যই জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁদের নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন। এতে তাঁদের মনোবল চাঙা হয়েছে। দুজনই সহকর্মীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে এবং করোনার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মনোবল শক্ত রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা থেকে মুক্ত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।