Thank you for trying Sticky AMP!!

কাঠগড়ার বাইরে থাকছে মিয়ানমার

মিয়ানমারের উচিত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>
  • রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এগোচ্ছে না 
  • সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক।
  • চীন, রাশিয়া মিয়ানমারের পক্ষে থাকায় কোনো প্রস্তাব নিতে পারছে না জাতিসংঘ।

বিশ্ব সম্প্রদায় তাগিদ দিচ্ছে, আলোচনার পর আলোচনা চলছে; কিন্তু রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে না। রোহিঙ্গা নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের বিচারের বিষয়টিও ঝুলে আছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে আগামী সোমবার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছে নিরাপত্তা পরিষদ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক উদ্যোগের এমন এক আবহে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৮ আগস্ট মিয়ানমার যাচ্ছেন। গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সমস্যার শুরুর পর এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রীকে রাখাইন রাজ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মিয়ানমার।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মাসের সভাপতি সুইডেন সোমবারের বৈঠকটি ডেকেছে। ওই বৈঠকে জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন বার্গনার রোহিঙ্গাদের নিয়ে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধিরও বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।’

জুন মাসে মিয়ানমার এবং চলতি মাসে বাংলাদেশ সফর করেন ক্রিস্টিন বার্গনার। সেপ্টেম্বরে তিনি আবার মিয়ানমার যাচ্ছেন।

নিউইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির পর প্রায় পাঁচ মাসের বিরতিতে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হলেও এ নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এখনই কোনো ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছে না নিরাপত্তা পরিষদ। কারণ শুরু থেকে পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন আর রাশিয়া যেভাবে মিয়ানমারকে আগলে রেখেছে, দেশ দুটির সেই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য একমত না হলে মিয়ানমার নিয়ে জাতিসংঘ কোনো কঠোর অবস্থানে যেতে পারবে না।

আবার রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা বিষয়ে তদন্ত শুরুর আগে দুই দফা চিঠি দিয়ে মিয়ানমারের পর্যবেক্ষণ চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। মিয়ানমার বলেছে, রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আইসিসিতে পর্যবেক্ষণ পাঠাবে না তারা। যেহেতু মিয়ানমার আইসিসির সদস্য নয়, তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য নয় তারা।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মহাপরিচালক জ তে সম্প্রতি সে দেশের রাজধানী নেপিডোতে বলেছেন, মিয়ানমারের মতো একই ধরনের পরিস্থিতি সিরিয়া আর কেনিয়ার ক্ষেত্রেও হয়েছিল। সিরিয়া আর কেনিয়ার ক্ষেত্রেও কি পর্যবেক্ষণ জমা পড়েছিল? পড়েনি। শুধু সদস্যদেশের ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ নেওয়া যায়। মিয়ানমারও সিরিয়া-কেনিয়ার মতো আইসিসির সদস্য নয়, আর সনদে স্বাক্ষরকারী দেশও নয়। কাজেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিসির ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।

এমন এক পরিস্থিতিতে আইসিসি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে কি না-জানতে চাইলে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, জাতিসংঘ বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো অবস্থান ছাড়া এখনই আইসিসির পক্ষে কোনো অবস্থান নেওয়া সম্ভব নয়। তার মানে নিরাপত্তা পরিষদ যদি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করে, সে ক্ষেত্রেই কেবল আইসিসি কিছুটা উদ্যোগী হয়ে তদন্ত শুরু করতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফর
মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আগস্টের সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মূলত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের আবাসন, চলাফেরার সুযোগ আর জীবনযাত্রার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দেখবেন। আলোচনা করবেন দেশটির নেতাদের সঙ্গে।
গত মাসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর আমন্ত্রণে বেইজিং সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। ওই সময় বেইজিংয়ে তাঁর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে। তখন মাহমুদ আলীকে রাখাইন সফরের আমন্ত্রণ জানান টিন্ট সোয়ে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি সই করে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে তাগিদ দিয়েছে চীন। এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে চীন ‘অত্যন্ত জরুরি’ মনে করছে।
চীনের পাশাপাশি জাপানও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দিয়ে আসছে। গত মে মাসে টোকিওতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো এবং মাহমুদ আলীর আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যাটি গুরুত্ব পায়। তারো কোনো দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যার সমাধান করে প্রত্যাবাসনে জোর দেন। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী মাসে ঢাকায় আসছেন তারো কোনো।
তবে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে দ্বিধাবিভক্তির পরও বসে নেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ জাতিসংঘের প্রভাবশালী দেশগুলো। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য আগামী আগস্টে নিরাপত্তা পরিষদে একটি উন্মুক্ত আলোচনা আয়োজনের চেষ্টা করছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আবার মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও অব্যাহত রাখার প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা আশা করা ঠিক হবে না। কারণ, রাখাইনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে না এলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অমানবিক হবে এবং প্রত্যাবাসন টেকসই হবে না।