Thank you for trying Sticky AMP!!

কাপ্তাই লেক হারাচ্ছে রুই-জাতীয় মাছ

কাপ্তাই লেক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে রুই–জাতীয় মাছ। পক্ষান্তরে বাড়ছে কাচকি, চাপিলা ও মলার মতো ছোট ছোট মাছ। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১৯৬৬ সালে কাপ্তাই লেকে পাওয়া মাছের মধ্যে রুই–জাতীয় মাছের হার ছিল ৮১ শতাংশ। ৫১ বছর পর ২০১৬ সালে এই হার ৪ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। উল্টো দিকে ছোট মাছ বিশেষ করে কাচকি, চাপিলা ও মলা মাছের প্রাধান্য বাড়ছে। ১৯৬৬ সালে লেকে উৎপাদিত মাছের মধ্যে ছোট মাছের হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই হার দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে। রুই–জাতীয় মাছ অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেলই ছিল কাপ্তাই লেকের প্রাণ। এই মাছগুলোই দিনে দিনে কমে যাচ্ছে লেক থেকে।
গবেষণায় ২০০৩ সাল থেকে মাছ উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ওই বছর লেকে মাছ উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ৫৬৬ মেট্রিকটন। এর মধ্যে রুই–জাতীয় ওই তিনটি মাছের উৎপাদন ছিল ১১৯ মেট্রিকটন। ১৩ বছরের ব্যবধানে ২০১৬ সালে এসে মাছ উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হলেও রুই–জাতীয় মাছের উৎপাদনের হার একেবারেই কমে গেছে। ওই অর্থবছরে লেকে মাছ উৎপাদন হয়েছিল ৯ হাজার ৩৬৪ মেট্রিকটন। এর মধ্যে রুই–জাতীয় এই তিনটি মাছের উৎপাদন ছিল মাত্র ৫ মেট্রিকটন।
এই গবেষণা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবুল বাশার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে গবেষণা করে এই তথ্য তুলে ধরেছি।’
গবেষণায় রুই–জাতীয় মাছ কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পলি জমে লেকের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি প্রবাহ কমে গেছে। পানি প্রবাহ না থাকলে রুই–জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে না। তাই আগের মতো মাছের প্রজনন হচ্ছে না।
আবুল বাশার আরও বলেন, লেকের প্রধান চারটি প্রজননস্থল (কাসালং চ্যানেল, বরকল চ্যানেল, চেঙ্গী চ্যানেল ও রীংকং চ্যানেল) নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার, প্রজনন মৌসুমে পোনা ও মা মাছ নিধনও এর অন্যতম কারণ। তিনি রুই–জাতীয় মাছের হার বাড়াতে লেকের তলদেশ খনন, প্রজননস্থলগুলো পুনরায় খননের মাধ্যমে সংরক্ষণ এবং এগুলোকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করার সুপারিশ করেন।
কাপ্তাই লেক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহম্মদ আলী আজাদী। তিনিও রুই–জাতীয় মাছ
কমে যাওয়ার পেছনে ওপরের কারণগুলোই তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাছের পোনা ছাড়ার বিষয়টি সঠিকভাবে তদারকি করতে হবে। পাশাপাশি বিকলাঙ্গ পোনা যাতে ছাড়া না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। লেকে রুই–জাতীয় মাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
শুধু রুই–জাতীয় মাছ নয়, অন্য বেশ কিছু মাছও কমে যাচ্ছে লেক থেকে। ইতিমধ্যে লেক থেকে বিলুপ্ত হয়েছে সিলন, দেশি সরপুঁটি, ঘাউরা, বাঘাইড়, মোহিনী বাটা ও দেশি পাঙাশ প্রজাতির মাছ। আর বিপন্নপ্রায় মাছের মধ্যে রয়েছে দেশি মহাশোল, মধু পাবদা, পোয়া, ফাইস্যা, গুলশা ও সাদা ঘনিয়া। ক্রমহ্রাসমান মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, বাচা, পাবদা ও বড় চিতল অন্যতম।
বর্তমানে লেকে প্রাধান্য বিস্তার করছে কাচকি, চাপিলা, তেলাপিয়া, কালবাউস, আইড়, বাটা, ফলি ও মলা প্রজাতির মাছ।
রাঙামাটি জেলার ৭৮ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই কৃত্রিম লেকের সৃষ্টি ১৯৬১ সালে। সৃষ্টির শুরুতে বিদ্যুৎ উৎপাদনই মূল লক্ষ্য থাকলেও পরবর্তী সময়ে এটি মাছ উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ হ্রদে ২ প্রজাতির চিংড়ি, ২ প্রজাতির কচ্ছপসহ মোট ৭৫ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি প্রজাতির মাছ হচ্ছে দেশীয়, বাকি ৮টি হচ্ছে বিদেশি প্রজাতির মাছ।