Thank you for trying Sticky AMP!!

কারাগারে এক রাত কাটিয়ে সকালে হাসপাতালে হাজি সেলিম

আত্মসমর্পণের পর গতকাল রোববার হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল নয়টায় অ্যাম্বুলেন্সে হাজি সেলিমকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আনা হয়। প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কারাগারে থাকা হাজি সেলিমকে আজ সকালে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় দণ্ডিত হাজি সেলিম গতকাল রোববার বেলা তিনটার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক শহীদুল ইসলাম জামিন আবেদন নাকচ করে হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

Also Read: হাজি সেলিম আত্মসমর্পণ করেছেন

আদালতের এই আদেশের পর গতকালই হাজি সেলিমকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে এক রাত থেকে তিনি আজ সকালে হাসপাতালে ভর্তি হলেন।

হাজি সেলিমকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজি সেলিম হৃদ্‌রোগসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। আদালত হাজি সেলিমকে সুচিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী হাজি সেলিমকে আজ সকাল নয়টায় অ্যাম্বুলেন্সে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’

গতকাল হাজি সেলিমের আইনজীবীরা মৌখিক ও লিখিতভাবে আদালতকে জানান, ছয় বছর আগে হাজি সেলিমের হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের সময় তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। তার পর থেকে তিনি বাক্‌প্রতিবন্ধী। তাঁর কথা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় না।

হাজি সেলিমের আইনজীবী প্রাণ নাথ আজ দুপুরের দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজি সেলিম গতকাল আত্মসমর্পণের পর থেকে অসুস্থবোধ করছিলেন। গতকাল বিকেলে কারাগারে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার পরও তিনি অসুস্থবোধ করছিলেন। তাঁকে সুচিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা কারা কর্তৃপক্ষকে দেখানো হয়। তাই আজ সকালে তাঁকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

কারাগারের জেলার মাহাবুবুল ইসলাম জানান, সংসদ সদস্য হাজি সেলিম কারাগারের প্রথম শ্রেণির একজন বন্দী (ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামি)। গতকাল রাতে তিনি কারাগারের খাবার খেয়েছেন। খাবারের তালিকায় ছিল ভাত, মাছ ও মাংস।

Also Read: হাজি সেলিমকে পাঠানো হলো কারাগারে

আত্মসমর্পণ

বিচারিক আদালতের দেওয়া হাজি সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। নির্ধারিত সময় শেষের দুই দিন আগে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান।

আপিলের শর্তে হাজি সেলিমের জামিন চান তাঁর আইনজীবীরা। অন্যদিকে, জামিনের বিরোধিতা করে দুদকের পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, এমন দণ্ডিত আসামির আপিলের শর্তে জামিনের বিধান নেই।

শুনানি নিয়ে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করেন হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর হাজি সেলিমকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

হাজি সেলিম সম্প্রতি কঠোর গোপনীয়তায় দেশ ছেড়েছিলেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি দেশে ফেরেন।

Also Read: আইনের চোখে সবাই সমান, হাজি সেলিম একটু ‘বেশি সমান’

সম্প্রতি দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল থাকায় হাজি সেলিম সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

তবে হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ মনে করেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত চূড়ান্ত বিচারে হাজি সেলিমকে দণ্ডিত বলা যাবে না। তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারবেন।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে সংসদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে বলা আছে। অনুচ্ছেদটির ২ দফার ‘ঘ’ উপদফা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ও থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁর মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়।

Also Read: ১০ বছরের দণ্ড নিয়ে দেশ ছেড়েছেন হাজি সেলিম

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

হাজি সেলিম ও তাঁর স্ত্রী গুলশান আরার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে প্রায় ১৫ বছর আগে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক।

বিচারিক আদালত ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল রায় দেন। রায়ে হাজি সেলিমের মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে ১০ বছর ও সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁর স্ত্রী গুলশান আরাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

Also Read: খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারেননি, হাজি সেলিম পেরেছেন!

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাজি সেলিম ও ২০১৩ সালে তাঁর স্ত্রী আপিল করেন। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি তাঁর সাজা বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে আবেদন করে। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে আপিল বিভাগ হাইকোর্টে তাঁর আপিলের ওপর আবার শুনানি করতে বলেন।

গত বছরের ৩১ জানুয়ারি হাজি সেলিমের আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে হাজি সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন। তবে সম্পদের তথ্য গোপনের জন্য দেওয়া ৩ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করেন। হাজি সেলিমের স্ত্রী মারা যাওয়ায় তাঁর আপিলটি বাতিল (অ্যাবেট) হয়।