Thank you for trying Sticky AMP!!

কালিকাকের দেহভঙ্গি

কালিকাক। ওড়ার আগমুহূর্তে অপূর্ব ভঙ্গিমায়। রাজশাহীর পদ্মার চরে। ছবি: লেখক।

দুপুরের খাবার সেরে বিরল পাখিগুলোকে খুঁজতে আবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের চরইল বিলে নৌকা ছোটালাম। দু–তিন প্রজাতির পাখির ছবি তোলার পর বিলের এক পাশে ছয়–সাতটি বড় বককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।

ওদের পাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কিছু একটাকে অদ্ভুতভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ কৌতূহল হলো। নৌকা ওদের নাগালের মধ্যে আসতেই পটাপট ক্যামেরায় কটা ক্লিক করলাম। ছবি জুম করে যা দেখলাম, তাতে বেশ হাসি পেল। আসলে ওটাও ছিল বড় বকগুলোরই একটা। কিন্তু সে যেভাবে ডানা পিছমোড়া করে মানুষের মতো সোজা দাঁড়িয়ে ছিল, তাতে দূর থেকে কোনোভাবেই বোঝার উপায় ছিল না যে সে–ও একটা পাখি। ২৯ জুনের ঘটনা এটি। একই দৃশ্য রাজশাহীর পদ্মার চরেও দেখেছি।

ডানা পিছমোড়া করে দাঁড়িয়ে থাকা পাখিটি সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক বক কালিকাক। শীতলে কাক, খাইরা, পিদালি, ধূসর বা ডাইং বক নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম গ্রে হেরন। বৈজ্ঞানিক নাম ardea cinerea. বাংলাদেশসহ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় এদের দেখা মেলে।

কালিকাক লম্বায় ৮৪ থেকে ১০২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। গড়ে ১ কেজি ৩৫০ গ্রামও ওজন হয়। মাথা-গাল-গলা বাদে শরীরের বাকি অংশ ফ্যাকাশে থেকে নীলচে ধূসর। মাথা, গাল ও গলা সাদা। মাথার দুপাশ থেকে দুটো কালো ডোরা মাথার পেছনে গিয়ে অগোছালো সুতাপালকের ঝুঁটি তৈরি করেছে। বুক, পেট ও লেজতল সাদাটে ধূসর। চোখ সোনালি হলুদ। চঞ্চু কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা হলদে সবুজাভ বাদামি। প্রজননকালে চঞ্চু কমলা-হলুদ এবং পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল হলুদ রং ধারণ করে। পুরুষের তুলনায় মেয়েরা আকারে ছোট। এর ঝুঁটিও ছোট। ধূসর মাথা, ঘাড়সহ অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির শরীর অনুজ্জ্বল।

সারা দেশের অগভীর হাওর, বিল, হ্রদ, নদী, খাল, জলাভূমি, আবাদি জমি, পুকুর, মোহনা ইত্যাদিতে একাকী বা ছোটা দলে বিচরণ করে কালিকাক। পানি, কাদা বা মাঠে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বল্লমের মতো চোখা চঞ্চু দিয়ে মাছ, ব্যাঙ, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, শামুক-ঝিনুক, কাঁকড়া-চিংড়ি, কেঁচো, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি শিকার করে খায়। ওড়ার সময় ‘কারার-কারার...’ স্বরে ডাকে।

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজননকাল। এ সময় জলাশয়ের আশপাশের উঁচু গাছের শাখায় ডালপালা ও ঘাস দিয়ে বড় মাচার মতো বাসা বানায়। পুরুষ বাসা তৈরির জায়গা পছন্দ করে ও সরঞ্জাম জোগাড় করে। স্ত্রী সেগুলো দিয়ে বাসা বানায়। হালকা নীলচে সবুজ রঙের ২ থেকে ৫টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২৫ থেকে ২৬ দিনে। স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে ডিমে তা দেয় এবং ছানাদের লালন-পালন করে। ছানারা প্রায় ৫০ দিনে উড়তে শেখে। একেকটি কালিকাক ১০ বছরের বেশি সময় বাঁচে।