Thank you for trying Sticky AMP!!

কুমিল্লা নগরে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে নিহত ১, আহত ১০

ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হচ্ছে এক শ্রমিককে। ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড়ে নির্মাণাধীন বহুতল ভবন রূপায়ণ দেলোয়ার টাওয়ারের তৃতীয়তলার একাংশের ছাদ ধসে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় অপর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দা ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নির্মাণাধীন ভবনের বাঁশের খুঁটি ও পিলারের রডের মধ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করে।

নিহত শ্রমিকের নাম রেজা আহমেদ (১৯)। তাঁর বাড়ি রংপুরে।

এ ঘটনায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর চার সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ধসে পড়া অংশে বাঁশের খুঁটিতে আটকা পড়ে কয়েক শ্রমিক। ছবি: প্রথম আলো

জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়ণ কান্দিরপাড়ে ১৮তলা বিশিষ্ট ওয়ার্ল্ড ক্লাস কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শুরু করে। আজ সকালে রূপায়ণ দেলোয়ার টাওয়ার নামের ওই ভবনের তিনতলার ছাদের ঢালাই শুরু হয়। সন্ধ্যা সোয়া পাঁচটার দিকে তিনতলার ছাদের দক্ষিণ দিকের একাংশের ছাদ ধসে পড়ে। এই সময় নির্মাণ শ্রমিকেরা নিচে বাঁশের খুঁটি ও রডের মধ্যে আটকা পড়েন। সেখানে থাকা অন্য শ্রমিকেরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে ছয়জনকে উদ্ধার করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আরও পাঁচজনকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে একই হাসপাতালে পাঠায় । পরে হাসপাতালে রেজা আহমেদ নামের এক শ্রমিক মারা যান। অপর ১০জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছাদ ধসে পড়ার পর উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড়-পুলিশ লাইন সড়কে যান চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা সাতটায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ধসে পড়া অংশে ছিল না কোনো পিলার। ছবি: প্রথম আলো

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর ও কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন । এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, এ ঘটনায় কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) পিন্টু বেপারীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তানভীর সালেহীন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ কুমিল্লার সহকারী পরিচালক প্রাণনাথ সাহা ও কুমিল্লা গণপূর্ত বিভাগের একজন সহকারী প্রকৌশলী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাদ ধসে পড়ার সময় কাজে ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মণ্ডলতলা গ্রামের বাসিন্দা নাহিদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম বলেন, সকালে অন্তত ২০০ জন শ্রমিক নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের তিনতলার ছাদ ঢালাই দিচ্ছিলেন। তিনতলার উত্তর দিকে পিলারের ওপর ছাদ ঢালাই কাজ হচ্ছিল। কিন্তু দক্ষিণ দিকে পিলার ছাড়াই দোতলা বাদ দিয়ে তিনতলার ছাদ ঢালাই চলছিল। তখনই একাংশের ছাদ ধসে পড়ে।

উদ্ধারকাজে অংশ নেয় শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশের খুঁটির মধ্যে কারও পা কারও হাত আটকে আছে। ধসে পড়া রড ও ইট-সিমেন্টের মিশ্রণ এবড়োখেবড়ো অবস্থায় পড়ে আছে। ভিমও ধসে আছে। বাঁশও এলোমেলো হয়ে আছে।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক প্রাণনাথ সাহা বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, দুর্বল সেন্টারিং থাকার কারণে ভারসাম্য রাখা যায়নি। অপরিকল্পিতভাবে ছাদ ঢালাই দেওয়া হচ্ছিল। তার ওপর ধসে পড়া অংশে কোনো পিলার নেই। যে কারণে একাংশ ছাদ ধসে পড়ে। তদন্তে সেটা বেরিয়ে আসবে।

রূপায়ণের ওই কাজ তদারকি করেন প্রকৌশলী আইয়ুবুর রহমান। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।