Thank you for trying Sticky AMP!!

কৃষকের ডাক সেবা

করোনাকালে এই নারী চালকেরা গাড়ি নিয়ে ছুটে গেছেন বিভিন্ন স্থানে

‘সব অফিস তো বন্ধ। এখন আবার কিসের চাকরি? ঘরে বসে থাকো। করোনার মধ্যে চাকরি করতে হবে না।’ গত মে মাসে কাজে বের হওয়ার আগে স্বামীর কাছ থেকে এমন নিষেধই শুনতে হয়েছিল ডাক অধিদপ্তরের গাড়িচালক রুহেনা আক্তারকে।

করোনা মহামারিতে সারা দেশে তখন সাধারণ ছুটি। গণপরিবহন, অফিস-আদালত—সবই বন্ধ। তবে ব্যতিক্রম ছিল ডাক অধিদপ্তর। তাই ছুটি মেলেনি রুহেনার। শুধু স্বামী নয়, পরিবারের অন্যরাও ঝুঁকি নিয়ে কাজে যেতে মানা করেছিলেন। তবে কাজের প্রতি ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ থেকে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরিয়েছিলেন এই নারী চালক। রুহেনা বলেন, ‘এটা তো আমার চাকরি। আমি বাসায় বসে থাকলে তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিঠি-মালপত্রের ডেলিভারি আটকা পড়ে যাবে।’

‘কৃষকবন্ধু ডাক সেবা’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কৃষিপণ্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন রুহেনা। অন্য দুই নারী গাড়িচালক জান্নাতুল ফেরদৌসী ও হেলেনা আক্তারও এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় সব সুরক্ষা অবলম্বন করেই তাঁরা ওই সময় গাড়ি চালিয়েছেন।

করোনা মহামারিতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়ে যান দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা। লকডাউনের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকার বাজারে কৃষিপণ্য পাঠানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল তাঁদের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসে ডাক অধিদপ্তর। দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিনা মাশুলে রাজধানীর পাইকারি বাজারে পৌঁছে দিতে চালু করা হয় ‘কৃষকবন্ধু ডাক সেবা’।

৯ মে ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সেবা প্রকল্পটি শুরু হয় মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকাবাজার থেকে। এরপর পর্যায়ক্রমে নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে প্রকল্পটি। ডাক অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত চলা এ প্রকল্পে ৩১টি ট্রিপ পরিচালনা করা হয়। সম্পূর্ণ বিনা খরচে কৃষকদের উৎপাদিত কাঁচা শাকসবজি ও ফলমূল ঢাকার পাইকারি বাজার, আড়ত ও সুপারশপগুলোতে পৌঁছে দেয় ডাকের গাড়ি।

জাওয়াদুল আলম

এই সেবা প্রকল্পে মূলত দেশের বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের সদস্য কৃষকদের পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। যেখানে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রায় ১০০টি সংগঠনের কাছ থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করা হয়। কৃষকেরা দলবদ্ধ হয়ে তাঁদের পণ্য একত্র করেছেন। এরপর পণ্য বিক্রির জন্য তাঁরা নিজেরাই ঢাকার বিভিন্ন আড়ত বা পাইকারি বাজারে যোগাযোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে শুধু কৃষকের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেছে ডাক অধিদপ্তর। ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক এস এম হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এই প্রকল্পে আমরা কোনো ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীদের পণ্য পরিবহন করিনি। পণ্য সরবরাহকারীরা সত্যিই কৃষক কি না, তা যাচাইয়ের জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাহায্য নিয়েছি।’

করোনাকালে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জন অফিসে ওষুধ, পিপিইসহ অন্যান্য সামগ্রীও পৌঁছে দিয়েছে ডাক অধিদপ্তরের গাড়ি। স্বাস্থ্যসেবাসামগ্রী, নগদ টাকা ও ডাক সরবরাহ এবং কৃষকবন্ধু ডাক সেবা কার্যক্রমে ১০২টি গাড়ির মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ১ হাজার ২২ টন পণ্য পরিবহন করেছে ডাক অধিদপ্তর।

হারুনুর রশীদ বলেন, ‘এই সেবা প্রকল্পে অধিদপ্তরের সবাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। সবাই নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন। বিশেষ করে আমাদের গাড়িচালকেরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গাড়ি নিয়ে পুরুষ চালকেরা ছুটে গিয়েছিলেন। আর ঢাকার ভেতর অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন নারী চালকেরা।

ডাক অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি চলাকালেও সারা দেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ বিভাগীয় ও অবিভাগীয় পোস্ট খোলা ছিল। অর্থাৎ দেশের মোট ৯ হাজার ৮৮৬টি পোস্ট অফিসের মধ্যে ৬ হাজার ৩২৩টি পোস্ট অফিস সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়েছে। এ সময় সঞ্চয় ব্যাংক থেকে সেবা গ্রহণ করেছেন ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ। ফলে সব মিলিয়ে আর্থিক লেনদেন হয়েছে ১১ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

করোনা মহামারিতে এখন পর্যন্ত ডাক বিভাগের শতাধিক কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনার উপসর্গ নিয়েও আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।


জাওয়াদুল আলম প্রথম আলোর প্রদায়ক