Thank you for trying Sticky AMP!!

কোথায় যাবে আফরোজা

আফরোজা খাতুন

মেয়েটির বয়স এখন ১২। নাম আফরোজা। পড়ছে ষষ্ঠ শ্রেণীতে। সাড়ে চার বছর ধরে তার বসবাস ভারতের একটি হোমে। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটের হলিচাইল্ড হোমে আশ্রয় পেয়েছে বাংলাদেশের এই মেয়ে আফরোজা খাতুন। 
জন্ম বাংলাদেশের নাটোর জেলার নালডাঙ্গা থানার দাসপাড়া গ্রামে। রানাঘাটের নাসরাপাড়া গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সে। হলিচাইল্ড হোমই তাকে ওই স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা করেছে।আফরোজা আজ একা। দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। এখন হলিচাইল্ড হোমকেই নিজের বাড়ি মনে করছে সে। আফরোজার সঙ্গে কথা বলতে প্রথম আলোর চিত্রগ্রাহক ভাস্কর মুখার্জিকে নিয়ে গত রোববার হাজির হই রানাঘাটের হলিচাইল্ড হোমে। আফরোজার বয়ানেই শোনা যাক তার জীবনকথা:বাবা মো. আকরাম হোসেন থেকেও নেই। মা মনোয়ারা বেগম বেঁচে থাকতেই আরেকটি বিয়ে করে বাবা। তারপর একদিন মা মনের কষ্টে আমাকে আর আমার বড় ভাই মুন্না পারভেজকে নিয়ে বেআইনি পথে দালাল মারফত হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকে। তারপর কলকাতা হয়ে দিল্লি। সেখানে আমরা উঠি আমাদের এক দূর সম্পর্কের খালার কাছে। কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারি না। মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। দিল্লিতে মায়ের চিকিৎসার পর আমরা দেশের বাড়িতে ফিরে আসার জন্য চলে আসি শিলিগুড়িতে। সেখান থেকে চলে যাই বালুরঘাট সীমান্তে। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টিতে আমরা আটকে পড়ি বালুরঘাট সীমান্তের কাছে।২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের সেই দিন আমাদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আমাদের ঠাঁই হয় বালুরঘাট জেলা কারাগারে। বালুরঘাট আদালতে বিচারে মাকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়। আর আমার দাদা নাবালক বলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বালুরঘাটের শুভায়ন হোমে। আর আমাকে মায়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের কারাগারে। কিন্তু আমার অসুস্থ মা ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর কারাগারেই মারা যায়।মায়ের মৃত্যুর পর আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। আমি বহরমপুর কারাগারে আর দাদা বালুরঘাট হোমে। আমাদের দুর্দশার কথা শুনে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের কর্মকর্তা (অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং আইজি-কারাগার) বিডি শর্মা দুই ভাইবোনের স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেন। সরকারের অনুমতি নিয়ে পাঠিয়ে দেন রানাঘাটের এই হলিচাইল্ড হোমে। শর্মা স্যার নিয়মিত আমার খোঁজ নেন। এখানে আসেন। আমাকে আদর করেন। আফরোজাকে জিজ্ঞেস করি, দেশে যাবে না? উদ্বিগ্ন হয়ে বলে, কোথায় যাব আমি? কোনো আত্মীয়স্বজন আমার কোনো দিনই খোঁজ নেয়নি। বড় ভাইও ফিরে গিয়ে কোনো খোঁজ নেয় না। কোথায় থাকব? কী করব? দেশে ফিরে যেতে হলে আমি এখান থেকে মাধ্যমিক পাস করেই যাব। তখন হয়তো আমি দাঁড়াবার একটা পথ খুঁজে পাব। বিডি শর্মা এখন বিএসএফের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। শর্মা জানালেন, আফরোজার মা মারা যাওয়ার পর তিনি বিষয়টি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে জানালে তারা আফরোজা এবং তার দাদা মুন্না পারভেজকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেড় লাখ রুপি করে দিয়েছে। আফরোজার দাদা মুন্না পারভেজকে ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর আফরোজা এখন রয়েছে এই হলিচাইল্ড হোমে। ওর দেড় লাখ রুপি একটি ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে। সেই টাকা বেড়ে এখন হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার রুপি।

বিডি শর্মা প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি আফরোজাকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। এ ব্যাপারে অনুমতিও মিলেছে। কিন্তু কার হাতে তুলে দেবেন? বিডি শর্মা চান, আফরোজা আরও লেখাপড়া শিখে দাঁড়াক। ফিরে পাক তার বাঁচার পথ। তাই তিনি বাংলাদেশের বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে একটি চিঠিও দিয়েছেন। আফরোজাকে নিয়ে ইতিমধ্যে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি হয়েছে। বিদেশেও সেটি প্রদর্শিত হয়েছে। প্রযোজনা করেছেন কলকাতার গৌরাঙ্গ জালান। পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র। তথ্যচিত্রে এই হোমে থাকা আরও তিনটি কিশোরীর জীবনযুদ্ধ চিত্রিত হয়েছে।