Thank you for trying Sticky AMP!!

খালেদা নীরব, নেতারা পলাতক, কর্মীরা হতাশ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের বাসায় গতকাল শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে কয়েকজন নেতা এসেছেন। এঁদের বেশির ভাগই ৫ জানুয়ারির ভোটের আগে-পরে এলাকা থেকে পালিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। স্থায়ী কমিটির ওই সদস্যের কাছে ঘুরেফিরে তাঁদের প্রশ্ন ছিল—এখন তাঁরা কী করবেন? নেতা গতানুগতিক কিছু ব্যাখ্যা দিলেন। শেষে বললেন, আপাতত গা ঢাকা দিয়ে থাকো। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কী বলেন, সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
বিএনপির মধ্যম সারির একাধিক নেতা এবং অন্তত দুটি অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে একই মানসিক অবস্থা টের পাওয়া গেল। তাঁদের মতে, কেন্দ্রীয় নেতা, কর্মী-সমর্থকদের অধিকাংশই অন্ধকারে। দলের ভাবনা-চিন্তা কিছুই জানতে বা বুঝতে পারছে না কেউ। দুটি প্রশ্ন তাঁদের সামনে। এক. আন্দোলন কীভাবে হবে? দুই. সরকারের পতন ঘটিয়ে কবে পরবর্তী নির্বাচন হবে?
এই নেতারা জানান, নির্বাচনের পর নেতা-কর্মী-সমর্থক—সবাই তাকিয়ে আছেন দলের চেয়ারপারসনের দিকে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি। ভোটের পর গণমাধ্যমেও দলীয় প্রধানের চেহারা দেখেননি কর্মীরা। তাঁর নীরবতা এবং ঘর থেকে বের না হওয়া তাঁদের মধ্যে হতাশা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন।
ধরপাকড়ের ভয়ে বাকি নেতারাও প্রায় আত্মগোপনে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে যেমন দেখা যায় না, তেমনি দলের ঢাকা মহানগরসহ জেলা-উপজেলার কার্যালয়গুলোতে দেখা যায় না নেতা-কর্মীদের। অনেক কার্যালয়ে এখন তালা ঝুলছে।
তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান প্রকাশ্যে আছেন এবং তাঁকে নেতা-কর্মীরা যেকোনো সময় ফোনে পাচ্ছেন। গতকাল বিকেলে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ফোন আসছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা-ও জানতে চাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা আসাটা স্বাভাবিক। তবে এই অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। দলীয় চেয়ারপারসনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জনগণের সামনে আসবেন। জনসম্পৃক্ততা আছে এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে। তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।
এর মধ্যে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এর আগে তিনি একবার ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছিলেন। খালেদা জিয়াও পাঠিয়েছেন ভিডিওবার্তা। আর মহাসচিব পাঠাচ্ছেন বিবৃতি। তাঁরা এর জন্য সরকারের দমন-পীড়নকে দায়ী করলেও এই অবস্থা নেতা-কর্মীদের আরও ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নেতা-কর্মীরা যে আন্দোলন করেছেন, তাতে প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। ভোটাররা ভোট বর্জন করেছেন। এখন সরকার ব্যাপক দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, নেতা-কর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
খালেদা নীরব, বিভ্রান্ত নেতা-কর্মীরা: খালেদা জিয়ার বাসা গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের ফিরোজা ভবনে ৫ জানুয়ারির পর কারও ঢুকতে বা বের হতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু গত পাঁচ দিনেও বাসা থেকে বের হননি নির্বাচনের আগে নিজেকে ‘কার্যত গৃহবন্দী’ দাবি করা খালেদা জিয়া।
তবে এই সময়ে খালেদা জিয়া বিদেশি সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাৎ দিয়েছেন। গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন। তাতে ‘ভোট প্রত্যাখ্যান করায় জনগণকে অভিনন্দন’ জানিয়েছেন এবং নেতা-কর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন।
বিএনপির দুজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের ‘ভারমুক্ত’ অবস্থান দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। এতে তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা যেমন উজ্জীবিত হয়েছেন, তেমনি সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই সরকার সম্ভবত টিকে যাবে। কিন্তু দলীয় প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়াকে প্রকাশ্যে না পাওয়ায় মানুষ ভাবছে, ‘বিএনপি শেষ’।
গত বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখার পর তাঁর জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তারা জানান, খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না। ডেকে নিয়ে এ ধরনের আচরণের কারণ জানতে চাইলে তাঁরা এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
পরে জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গণমাধ্যমের কাছে খালেদা জিয়া কী বার্তা দিতে চান, সে সম্পর্কে প্রস্তুতি না থাকায় নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।