Thank you for trying Sticky AMP!!

গণমাধ্যমকে ময়নাতদন্তের তথ্য না দেওয়ার নির্দেশ

গণমাধ্যমকে ময়নাতদন্তের বিস্তারিত তথ্য না দিতে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায়, বিশেষ করে কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গি নিহত হওয়ার পর তাঁদের মৃত্যুর কারণ ও ধরন সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে যে তথ্য গণমাধ্যমকে দেওয়া হয়েছে, তা পুলিশ কর্মকর্তারা ভালোভাবে নেননি। চিঠিতে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তাধীন মামলার গোপন দলিল। এটা কোনোভাবেই প্রকাশ্য (পাবলিক) হতে পারে না।

হত্যা বা অপঘাতে মৃত্যুর শিকার মানুষের ময়নাতদন্ত সরকারি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। খুন, অপমৃত্যু বা এ ধরনের মামলায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে গণ্য হয়।

দুটি সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধিদপ্তরের এই চিঠি পাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে অধিদপ্তরের নির্দেশনা তাঁর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হচ্ছে গোপন দলিল। আইনে বলা আছে, এই প্রতিবেদন পুলিশ বা আদালতে দিতে হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বিস্তারিতভাবে আগেই প্রকাশিত হলে মামলার বাদী বা বিবাদীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদকেরা মনে করছেন, এর ফলে প্রতিবেদকদের কেবল পুলিশের তথ্যের ওপর নির্ভর করে প্রতিবেদন লিখতে হবে। কিন্তু তা আর যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে না। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদকদের সংগঠন ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ তথ্যপ্রবাহের এ যুগে কোনো কিছুকেই চেপে রাখা যায় না। তদন্ত তার মতো চলবে, পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশ করবে। সে ক্ষেত্রে কোনো আইনি বেড়াজাল দিয়ে তথ্যপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করা সমীচীন হবে না।

পুলিশ কমিশনারের চিঠি

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি চিঠিতে সাম্প্রতিক গণমাধ্যমে ময়নাতদন্তের ফলাফলের বিস্তারিত বিবরণ ছাপা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না দেওয়ার কথা বলেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের কোনো কোনো চিকিৎসক ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ব্যক্তির শরীরে থাকা আঘাতের চিহ্ন ও ধরন এবং মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন। বিশেষ করে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ ও ধরন এবং তাঁর শরীরে কতটি গুলির চিহ্ন, কতটি গুলি পেছন দিক দিয়ে ও কতটি সামনে থেকে শরীরে বিদ্ধ হয়েছে, তার সবিস্তার বর্ণনা মিডিয়ায় তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত হিসেবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য। একটি মামলার তদন্তকালে সংগৃহীত তথ্য, উপাত্ত, সাক্ষ্য ইত্যাদি গোপন দলিল হিসেবে গণ্য। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এ এর গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত মিডিয়ায় উপস্থাপন করা বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নিহত ব্যক্তির সামনে-পেছনে কতটি গুলির চিহ্ন রয়েছে, তা উল্লেখ করায় জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ময়নাতদন্ত শেষে নিহত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলে এবং আঘাতের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন না দিলে তদন্তের গোপনীয়তা যেমন রক্ষা হবে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগও কমে যাবে।’

ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ৬ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) সমীর কান্তি সরকারের স্বাক্ষর করা চিঠি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘নিহত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। এতে মহাপরিচালকের অনুমোদন রয়েছে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে চাননি। যোগাযোগ করা হলে সরকারের তথ্যবিষয়ক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্তের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের বিষয়ে কিছু আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা ছাড়া ময়নাতদন্তের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের তথ্য মৌখিকভাবে নেওয়া হলে এতে ভুল হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আর তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ করে এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া সময়সাপেক্ষ।