Thank you for trying Sticky AMP!!

গর্তে ভরা সড়কে ভোগান্তি চরমে

সড়কে ছোট–বড় অসংখ্য গর্তের কারণে চলাচলে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। গতকাল সকালে মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কের বাবুরবাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সড়কের দীর্ঘ অংশ ক্ষতবিক্ষত, ভাঙাচোরা। সড়কের বুক থেকে পিচঢালাই উঠে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। গাড়ির চাকা গর্ত এড়িয়ে চালানোর সুযোগ খুব কমই আছে। নিরাপদে গাড়ি চালাতে চালককে যেমন সতর্ক থাকতে হচ্ছে, তেমনি যাত্রীরা সারাক্ষণই ঝাঁকুনির মধ্যে থাকেন। একবার এদিকে কাত হন তো আরেকবার ওদিকে।

মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর স্থলবন্দর সড়কের এই দশা তিন-চার বছর ধরে। মাঝেমধ্যে গর্তে কিছু ইট-সুরকি ফেলা হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টিতে ইট-সুরকি ভেঙেচুরে সরে যাচ্ছে। পুনরায় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কটি খারাপ থাকায় এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গতকাল শনিবার সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মৌলভীবাজার থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের মৌলভীবাজার শহর অংশ থেকেই ভাঙাচোরা শুরু। পিচ উঠে তৈরি হয়েছে গর্ত। আগের রাতের বৃষ্টিতে গর্তে জমেছে পানি। সড়কের মাইজপাড়া, ছড়ারপাড়, চক্ষু হাসপাতাল, শিমুলতলা, লঙ্গুরপুল, কাছারিবাজার, চৈত্রঘাট, বাবুরবাজারসহ অনেকগুলো স্থানে অবস্থা এতটা খারাপ, যেখানে গাড়ি চলার অবস্থা নেই। কিছু কিছু স্থানে গর্তের মধ্যে ইট-সুরকি ফেলা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে ভেজা সেই ইট-সুরকির ওপর দিয়ে যানবাহন চলতে চলতে তা ভেঙে গেছে। অনেক গর্তই আগের অবস্থায় চলে গেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, ট্রাক, কার ও মাইক্রোবাসের চাকা গর্ত এড়াতে আঁকাবাঁকা হয়ে ছুটছে। কিছু স্থানে ইট বিছানো হয়েছে। সেখানে ঝাঁকুনির পরিমাণ আরও বেশি।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বদরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সড়কে গাড়ি চালাইতে গিয়া এখন আমরা গাড়ির নাম দিছি “ভাঙ গাড়ি”। কারণ, আগে রাস্তার মাঝে ছোট একটা গাত (গর্ত) দেখলেও ব্রেক মারতাম। অখন আর ব্রেক ধরি না। বড় গাত অইলেও ডাইরেক্ট (সোজা) চাকা ধরি। আমরার অভ্যাস অই (হয়ে) গেছে। মাঝে মাঝে ইট বিছানো অইছে (হয়েছে)। এতেও সমস্যা অইছে। গাড়ি কেজা খাইয়া (চাপ খেয়ে) নাটবল্টু সব ঢিলা অই (হয়ে) যায়।’ বদরুল আরও জানান, সড়কের এই অবস্থার কারণে এখন প্রতি সপ্তাহে গাড়িতে কাজ করাতে হচ্ছে। যা আয় করেন, তার একটা বড় অংশ চলে যায় গাড়ি মেরামত করাতেই।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক তিন-চার বছর ধরেই নাজুক। এই সড়ক দিয়ে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা এবং কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জেলা সদরে আসা-যাওয়া করে। অনেকগুলো চা-বাগান, চাতলাপুর স্থলবন্দর, বিএফ শাহীন কলেজে এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্থায়ী মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ছাত্রী সৈয়দা তাহমিনা ইয়াছমিন বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা অনেক দিন ধরেই খারাপ। বাধ্য হয়ে কলেজে যাই। খারাপ রাস্তার কারণে কষ্ট লাগে। সময়ও বেশি লাগে।’ কলেজশিক্ষার্থী আবদুল লতিফ বলেন, ‘রাস্তা বেহাল। প্রতিদিন সময়মতো কলেজে যেতে পারি না।’

সওজ সূত্রে জানা গেছে, মাস তিনেক আগে মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কের সংস্কারকাজের দরপত্র হয়েছে। তবে এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। এটি প্রক্রিয়াধীন। ৩৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার এই সড়কের ২০ কিলোমিটারের বিভিন্ন অংশে কাজ হবে। এতে ব্যয় হবে ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সড়কে যেসব বাজার পড়েছে, সেসব বাজারে কাজ হবে না। বাজার এলাকায় পরে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ হবে। অন্যদিকে যেসব স্থান বন্যার পানিতে ডুবেছিল, সেসব স্থানেও কাজ হচ্ছে না। সেসব স্থান উঁচু করে পুনর্নির্মাণ করা হবে।

সওজ মৌলভীবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্র (টেন্ডার) মূল্যায়নের পর্যায়ে আছে। মূল্যায়নের পর অনুমোদন দেওয়া হবে। অনুমোদনের দেড় মাস পর কাজ শুরু হবে।