Thank you for trying Sticky AMP!!

গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেল বাস, প্রাণ গেল ১০ যাত্রীর

যশোরের ঝিকরগাছায় গতকাল সকালে ঢাকা–বেনাপোল মহাসড়কে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে–মুচড়ে যায় বাসটি l প্রথম আলো

যশোরের ঝিকরগাছায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে যশোর-বেনাপোল সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায় একটি যাত্রীবাহী বাস। এতে নিহত হয়েছেন বাসের ১০ আরোহী। একই দিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী দুই শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজন।
যশোর: প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, সকাল পৌনে সাতটার দিকে সোহাগ পরিবহনের বাসটি যশোর-বেনাপোল সড়কের ঝিকরগাছা উপজেলার বেনেয়ালী মোড়সংলগ্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বাসটি দুমড়ে–মুচড়ে যায়। ছয় যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও চারজনের। গুরুতর আহত ১৬ যাত্রীকে ভর্তি করা হয় যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের নির্মল সাহা ও তাঁর স্ত্রী হেনা সাহা, ঢাকার বিদ্যুৎ ঘোষ (৪৫) ও রমজান আলী (৫০), ঢাকার ডেমরা এলাকার জামান (৪৫), মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল গ্রামের আবদুস সালাম (৫৫), শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কালোরা গ্রামের প্রসেনজিৎ (৩৫), কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার তোলাগঞ্জ গ্রামের মোমিন উদ্দীন (৪৫) ও বাসের চালকের সহকারী (হেলপার) ফরিদপুরের রাজবাড়ী উপজেলার ইলিশ কোল গ্রামের মোমিন মোল্লা (২৮)। নিহত এক যাত্রীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিহত নির্মল সাহা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়কের দায়িত্বেও। তাঁর স্ত্রী হেনা সাহা ছিলেন অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক।
নির্মল সাহার ছেলে নবেন্দু সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট পিসি কলকাতার দমদমে থাকেন। শুক্রবার পিসতুতো বোন কলির বিয়ে। বিয়েতে যোগ দিতে বাবা-মা কলকাতায় যাচ্ছিলেন। রাতে বাবা-মাকে গাড়িতে তুলে বিদায় জানিয়েছি। কিন্তু ওই বিদায় যে তাঁদের শেষ বিদায় হবে, কে জানত!’
দুর্ঘটনায় আহত ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত সরকার বলেন, ‘আমি বাসে ঘুমিয়ে ছিলাম। জেগে দেখি, রাস্তার ওপর পড়ে আছি।’
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার শিকার বাসটির জানালা থেকে ছাদের পুরো অংশ আলাদা হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে আছে। ছোপ ছোপ রক্ত মাটিতে জমাট বেঁধে আছে। তখনো আহত ও নিহত কোনো কোনো যাত্রীর পায়ের জুতা-স্যান্ডেল পাশের ডোবায় পড়ে রয়েছে।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন পাশের সদির আলি গ্রামের শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চিৎকার শুনে বাসের কাছে গিয়ে দেখি, দুজনের লাশ বাসের জানালার সঙ্গে ঝুলছে, আরেকজন পাশের ডোবার পানিতে পড়ে আছে। অপর দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় গাড়ির ভেতর থেকে বের করে রাস্তার ওপরে নিতেই মারা যান।’
ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, সোহাগ পরিবহনের বাসটি ঢাকা থেকে বেনাপোলে যাচ্ছিল। বাসটিতে ২৬ জনের মতো যাত্রী ছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই ভারতে যাচ্ছিলেন। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে বাসটির চালক মৃদুল মণ্ডলকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পর থেকে চালক পলাতক রয়েছেন। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের বাজবাড়ী উপজেলার ইলিশকোল গ্রামে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বেলা তিনটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার বেড়তলা বাসস্ট্যান্ডে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে পেছন দিক থেকে হালকা ধাক্কা দেয় অপর একটি অটোরিকশা। এ নিয়ে দুই অটোরিকশার চালক বাক্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ধাক্কা দেওয়া অটোরিকশাটি চলে যায়। তখন অপর অটোরিকশার চালক সড়কের ওপরই তাঁর গাড়িটি রেখে পাশে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা পণ্যবাহী একটি ট্রাক অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আহত হন চালকসহ তিনজন। দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক ও চালকের সহযোগী পালিয়ে যান।
নিহতরা হলেন অটোরিকশার যাত্রী মিজানুর রহমান (৪৫) তাঁর স্ত্রী নিলুফা বেগম (৪০), ছেলে জুবাইদুল ইসলাম (১), ভাতিজা মাহফুজ মিয়া (৩৫) ও মাহফুজের ছেলে মাসুক মিয়া (৪)। তাঁদের বাড়ি সদর উপজেলার বুধল গ্রামে।
এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন মাহফুজের স্ত্রী শিরিনা বেগম (২০), মিজানুরের চাচা মোহাম্মদ আলী (৬০), তাঁর স্ত্রী জোবেদা বেগম (৫৫) ও অটোরিকশার চালক রোমান মিয়া (৩৫)। চালক রোমানের বাড়ি উপজেলার পানিশ্বর গ্রামে। গুরুতর আহত মোহাম্মদ আলী ও তাঁর স্ত্রী জোবেদাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আরশাদ জানান, এ দুর্ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশ অটোরিকশা ও ট্রাকটি উদ্ধার করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।