Thank you for trying Sticky AMP!!

গাছের হাসপাতাল

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের বিন্যাফৈর বাজারে প্ল্যান্ট ডাক্তার ক্লিনিক l প্রথম আলো

টেবিলের ওপর রাখা ফল ও ফসলের লতাপতা। এগুলো নেড়েচেড়ে দেখছেন এক ব্যক্তি। একজন কৃষকের আনা ফেটে যাওয়া আম দেখলেন, কিছু প্রশ্ন করলেন কৃষককে। তারপর ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেন। সেটি নিয়ে চলে গেলেন ওই কৃষক।
এটি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের উদ্ভিদ ক্লিনিকের। আর যে ব্যক্তি ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেন তিনি একজন কৃষি কর্মকর্তা। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে গাছের জন্য ক্লিনিক। গাছ ও ফসলের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি এবং কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই ক্লিনিক চালু করেছে। কৃষি বিভাগ এর নাম দিয়েছে ‘প্ল্যান্ট ডাক্তার ক্লিনিক’। কিন্তু কৃষকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছে ‘গাছের হাসপাতাল’ নামে। আর এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষকেরা ডাকেন ‘গাছের ডাক্তার’।
উদ্ভিদ হাসপাতাল থেকে ব্যবস্থাপত্র নেওয়া বাথুয়াজানী গ্রামের কাজীমুদ্দিন জানান, তাঁর গাছের আম ঝড়ে যাচ্ছে ও যেগুলো গাছে আছে তাও ফেটে যাচ্ছে। গাছের হাসপাতালের কথা শুনে তিনি এসেছিলেন। গাছের ডাক্তার
তাঁকে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন ব্রোন ও পটাশ সার প্রয়োগ করে আমগাছে নিয়মিত সেচ দেওয়ার। শুধু কাজীমুদ্দিন নয়, তার মতো অনেক কৃষকই এখন গাছের হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থাপত্র নিচ্ছেন।
মধুপুর উপজেলার গাছের হাসপাতালটি করা হয়েছে অরণখোলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা ভবানীর টিকি গ্রামে। এ গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী জানান, আগে গাছ বা ফসলের কোনো সমস্যা হলে তাঁরা কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছে যেতেন। তাঁরা লাভের কথা চিন্তা করে বেশি কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন। এতে তাঁদের অনেক অপচয় হতো। গাছের হাসপাতাল চালু হওয়ায় এখন সঠিক সেবা পাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক সংস্থা কমনওয়েলথের সহায়তায় দেশে পাঁচটি জেলার ১০টি উপজেলায় পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে তিন বছরের জন্য এই হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে টাঙ্গাইলের সদর ও মধুপুর, ঢাকার ধামরাই ও সাভার, গাজীপুরের কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈর, শেরপুরের নকলা ও নালিতাবাড়ী এবং ময়মনসিংহের ফুলপুর ও মুক্তাগাছা।
গত ১২ এপ্রিল ধামরাইয়ে শ্রীরামপুর বাজারে কার্যক্রম উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম গাছের হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯ এপ্রিল টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বিন্যাফৈর বাজারে ও ২৮ এপ্রিল মধুপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা ভবানীর টিকি বাজারে এর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি হাসপাতাল ১৫ দিন পরপর মাসে দুদিন ছয় ঘণ্টা করে কৃষকদের সেবা দেবে। কিন্তু কৃষকদের আগ্রহ দেখে টাঙ্গাইল সদরের ক্লিনিকটি মাসে চার দিন (প্রতি রোববার) কার্যক্রম চালাচ্ছে।
১৭ মে বিন্যাফৈর বাজারে গাছের ক্লিনিকটিতে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন কৃষককে পরামর্শ নিতে। অনেক কৃষক রোগাক্রান্ত ফসল নিয়ে এসেছেন। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন চিকিৎসক। সেই সঙ্গে কয়েকজন কৃষক জেনে নিচ্ছেন সেক্স ফেরোমেন পদ্ধতি গ্রহণ করে কীটনাশক ছাড়া ক্ষতিকর পোকা দমনের পদ্ধতি। সেখানে কথা হয় দর্জিপাড়া গ্রামের কৃষক ছানোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। বেগুন ও বেগুনগাছের ডগায় পোকা ধরেছে। তাই পরামর্শের জন্য এসেছিলেন। তাঁকে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে সেক্স ফেরোমেন পদ্ধতি ব্যবহারের।
গাছের চিকিৎসক কৃষি কর্মকর্তা ওসমান গণি জানান, তাঁদের এ ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই হাসপাতালের প্রতি কৃষকদের খুবই আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। কৃষকের আগ্রহের কথা চিন্তা করে মাসে দুদিন কার্যক্রম করার কথা থাকলেও তাঁরা চার দিন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় কৃষকদের এই সেবা দেওয়া হচ্ছে।
দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লাভলু মিয়া জানান, গাছের এই ক্লিনিক কৃষকদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও কৃষকদের মধ্যে এই ক্লিনিকের কথা প্রচার করা হচ্ছে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হজরত আলী জানান, মধুপুরের ক্লিনিকটিতে প্রতি সপ্তাহেই কৃষকের আগমন বাড়ছে। এতে বোঝা যায়, এই ক্লিনিক কৃষকদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল হাশিম জানান, পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা এই ক্লিনিক সফল হলে পরে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কৃষি বিভাগের রয়েছে।