Thank you for trying Sticky AMP!!

গাজীপুরে এবার মাদকের মামলা

গাজীপুরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে গায়েবি মামলার পর এবার দেওয়া হচ্ছে মাদক মামলা। এর মধ্যে গত এক মাসে জয়দেবপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া থানায় অন্তত ১২টি মাদক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে সক্রিয়।

এর মধ্যে একটি মামলা ছাড়া সব কটি মামলার বাদী পুলিশ। দুটি মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা রোববার আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে রাখতেই সরকারের নির্দেশে এসব মামলা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সেই নির্দেশেই কাজ করছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাজহারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গাঁজা, চোলাই মদসহ বিভিন্নভাবে মাদক মামলা দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে যাঁদের কেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাঁদেরই বেশি জড়ানো হচ্ছে। মিথ্যা মামলার কারণে নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। এখন দেখছি, মিথ্যা মাদক মামলার চেয়ে রাজনৈতিক মামলাই ভালো ছিল।’

গত ২৯ নভেম্বর জয়দেবপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খালেকুজ্জামান বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১)-এর ৭ (২৫) ধারায় একটি মামলা করেছেন। ২০০ গ্রাম গাঁজা রাখার অপরাধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জয়দেবপুর থানাধীন পিরুজালী বর্তাপাড়া এলাকায় পাঁচ রাস্তার মোড়ে মাদক বিক্রির গোপন সংবাদ পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় আসামি রাকিব হোসেন ও রাসেল নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিরা দৌড়ে পালিয়ে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পালিয়ে যাওয়া আসামি হিসেবে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা সবাই বিএনপির নেতা-কর্মী। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাসুদুল কবীর মোনায়েম, পিরুজালী ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক, পিরুজালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম এবং ওসমান গনি। ওসমান পিরুজালী ইউপি নির্বাচনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ছিলেন।

রোববার সকালে ওই মামলার আসামিরা জামিন নিতে গাজীপুর আদালতে যান। সেখানে বিএনপির কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা অভিযোগ করেন, পুলিশ মিথ্যা মাদকের মামলা করছে। গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাসুদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ছয়-সাত মাস আগে গাজীপুর সদর থানার পিরুজালী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। তাঁর পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। মাদকের সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলেন না। তাঁকে মিথ্যা মাদক মামলায় জড়ানো হয়েছে।

গত ২৮ নভেম্বর কাপাসিয়া থানায় মাদক মামলায় উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। সেই ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততাই নেই বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।

মির্জাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম জানান, গত ২৭ নভেম্বর জয়দেবপুর থানার পুলিশ বাদী হয়ে তাঁকেসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দিয়েছে। এতে ছাত্রদল কর্মী জাহিদ, রানা ও নাজমুলের নাম রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতেই এসব মাদক মামলা দেওয়া হচ্ছে।

মাদক মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন সদর থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ও ভাওয়াল গড় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাজমুল হক, মির্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা যুবদলের সদস্য আসাদুজ্জামান হারুন, জেলা যুবদলের তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আরিফ, জেলা যুবদলের বন-বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হক সিনহা, ছাত্রদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম, জেলা যুবদলের সদস্য কাউসার হোসেন ও আজিজুল হক রতন, মির্জাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। তাঁদের মধ্যে কেউ আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র কমিটির আহ্বায়ক, কেউ সদস্য।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সরুজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে প্রতিটি থানায় গোপনে মাদক মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। ভোটের মাঠ থেকে বিএনপিকে বিতাড়নের কৌশল হিসেবেই পুলিশ এসব মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।’

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। সেই কারণে হয়ে থাকতে পারে। তবে আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁরা যাঁদের নাম বলেছে, তাঁদেরই আসামি করা হয়েছে।’

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাগুলো সম্পর্কে আমার জানা নেই। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না গেলে মামলা থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হবে।’