Thank you for trying Sticky AMP!!

গেঞ্জি কাপড়ের 'এলা' মাস্ক

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) একটি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে গেঞ্জি (নীট) কাপড় দিয়ে বানানো মাস্ক বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ উদ্যোগে অংশীদার হয়েছে এলা অ্যালায়েন্সের সদস্য বেক্সিমকো, রেডিসন, পলমল গ্রুপসহ ১০টির বেশি পোশাক কারখানা। প্রকল্পের অধীনে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দেশব্যাপী মাস্ক বিতরণের উদ্যোগটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত ১৯ মার্চ গ্রহণ করা হয়। সারাদেশে মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি এলা অ্যালায়েন্সের সদস্যরা তাদের নিজস্ব শ্রমিক, কমিউনিটি ও কর্মকর্তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি মাস্ক বিতরণ করেছে।

মামুনুর রহমান ইএলএলএ (ইকো–ফ্রেন্ডলি লো–কস্ট লিকিইড এবজরবেন্ট) প্যাড বা এলা প্যাডের উদ্যোক্তা। এলা অ্যালায়েন্সের কো–অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মামুনুর রহমান জাতিসংঘে দীর্ঘদিন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। ঝুট কাপড় দিয়ে প্যাড বানানোর উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। গত বছরও পেয়েছেন স্টাডি ইউকে অ্যালামনাই এর উদ্যোক্তা অ্যাওয়ার্ড। এবার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাটিং টেবিল থেকে ফেলে দেওয়া গেঞ্জি কাপড়ের ঝুট দিয়ে কারখানার কর্মীরাই এই মাস্ক তৈরি করছেন।

কারখানায় এক নারীকর্মী মাস্ক তৈরি করছেন। ছবি: মানসুরা হোসাইন

মামুনুর রহমান বললেন, কারখানার কাটিং টেবিল থেকে ফেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে প্যাড, মাস্ক, উড়োজাহাজে যাত্রীদের আরামের জন্য চোখে দেওয়ার জন্য চশমা বা চশমার আদলে তৈরি পণ্যটিসহ বিভিন্ন পণ্যই তৈরি করা সম্ভব। নতুন করোনাভাইরাস (কোভিড–১৯) বিস্তারে বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিশেহারা অবস্থার তৈরি হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কার্যকরী উপায় হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। এ পরিস্থিতিতে স্বল্প পরিসরে দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে ঝুট গেঞ্জি কাপড় দিয়েই মাস্ক বানানো শুরু করি এবং পরে এলা অ্যালায়েন্স সরকারি উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে মাস্ক উৎপাদন কিছুটা সীমিত পরিসরে হচ্ছে।

বিডার উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, '৬৪ জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৬৪ জেলায় ১ হাজার করে মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ৫০ হাজারের বেশি মাস্ক বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এলা অ্যালায়েন্সসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানা এ মাস্ক উৎপাদন করেছে।'

মামুনুর রহমান জানালেন, সরকারি উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি মার্কিন দূতাবাসের রিজিওনাল মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক জিল ডার্কেনসহ দূতাবাসের সব চিকিৎসক এবং দূতাবাসের কর্মকর্তারা এখন নিয়মিতভাবে এলা মাস্ক ব্যবহার করছেন। জিল ডার্কেন কয়েক দফায় মতামত দিয়ে মার্কিন দূতাবাসে এলা মাস্ক ব্যবহার অনুমোদন করেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সঙ্গে যৌথভাবে দেশব্যাপী এলা মাস্ক তৈরির বিষয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণের কথা হচ্ছে।

বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, এলা মাস্কের উদ্যোক্তা মামুনুর রহমানসহ অন্যান্যরা। ছবি সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের গবেষণায় বলা হয়েছে, মাস্ক তৈরির জন্য সিল্ক, সুতি, পলিয়েস্টার, কৃত্রিম তন্তুসহ ১০ রকমের কাপড়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গেঞ্জির কাপড়ে তৈরি মাস্ক প্রচলিত মেডিকেল বা সার্জিক্যাল মাস্কের সমতুল্য বা এর চেয়েও বেশি কার্যকর। এই মাস্ক ঘরেই বানানো যাবে এবং বারবার ধুয়ে ব্যবহার করা সম্ভব। কারখানায় এলা মাস্ক উৎপাদনে দুই থেকে আড়াই টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান মামুনুর রহমান।

মামুনুর রহমান বলেন,'ওই গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক তাহের সাইফ এলা মাস্কের প্রশংসা করছেন। সম্প্রতি তিনি ইএমকে সেন্টার আয়োজিত একটি জুম্ কনফারেন্সে গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক এর গুণাগুণ তুলে ধরেন এবং এলার উদ্যোগের প্রশংসা করেন । যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) কাপড়ের মাস্কের কার্যকারিতার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং গাইড লাইন তৈরী করে দিয়েছে । শুরু থেকেই এলা আইসিডিডিআর, বি, সিডিসি, লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন ও সাসেক্স বিশবিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করছে।'

সম্প্রতি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের সংস্থাটি বলছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। সংস্থাটির দেওয়া হিসাব বলছে, ২৬শে মার্চ থেকে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ১৪ হাজার ৫০০ টন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বর্জ্যের প্রায় ১২ দশমিক ৭ শতাংশ সার্জিক্যাল ফেসমাস্ক, ২৪ দশমিক ২ শতাংশ পলিথিনের তৈরি সাধারণ হ্যান্ড গ্লাভস, ২২ দশমিক ৬ শতাংশ সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য বহনের একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিনের বাজারের ব্যাগ।

মামুনুর রহমান। ছবি: মানসুরা হোসাইন

মামুনুর রহমান বললেন, ' আমরা স্বল্প পরিসরে মাস্ক তৈরি করে দেখিয়েছি খুব কম সময়ে কর্মীরা মাস্ক তৈরি করতে পারছেন। এ মাস্ক তৈরিতে খুব বেশি খরচও হচ্ছে না। কয়েকদিনের মধ্যে দেশের ১৬ কোটি জনগণের জন্য ৩২ কোটি মাস্ক তৈরি করে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। বাজারের প্রচলিত মাস্ক অত্যন্ত ব্যয়বহুল।'

সম্প্রতি রাজধানীর আদাবরে মামুনুর রহমানের এলা প্যাডের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্বল্প পরিসরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুই নারী কর্মী মাস্ক তৈরি করছেন। মামুনুর রহমানের ভাষায় এই নারীরাই মাস্ক তৈরির মূল উদ্যোক্তা। মাস্ক তৈরি করা নারীরাও জানালেন, তাঁরা এ পণ্যগুলো ব্যবহারে উপকার পাচ্ছেন। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের বিস্তারে যেখানে নিম্ন আয়ের বেশির ভাগ কর্মীর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে তাঁরা যথাযথ সুরক্ষা মেনে কাজ করতে পারছেন, সংসার চালাতে পারছেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন,'আমি এলা মাস্ক সম্পর্কে জানিনা। তবে সিডিসি এবং কিছু ছোট ছোট গবেষণায় কাপড়ের বা গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ককেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া থাকার চেয়ে কাপড়ের মাস্ক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে আমার মতে, কারও যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে উন্নতমানে সার্জিক্যাল মাস্কই ব্যবহার করা উত্তম। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।'